প্রথম ঠাকুর দেখার সঙ্গে প্রথমবার বিরিয়ানি, অনাথ সুদীপ্তদের স্বপ্নপূরণ বীরভূমে

  • ঠাকুর দেখার আনন্দ পেল বীরভূমের অনাথ আশ্রমের বাসিন্দারা
  • রামপুরহাটের কয়েকজন যুবকের উদ্যোগ
  • ঠাকুর দেখার সঙ্গে খাওয়ানো হল নামী রেস্তোরাঁয়  

debamoy ghosh | Published : Oct 5, 2019 8:27 AM IST / Updated: Oct 05 2019, 02:12 PM IST

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট: ভাতের উপরে চিকেনের লেগ পিস আর ডিম। আরেক প্লেটে মুরগির ঝোল। খেতে খেতে সোনেরাম হেমব্রম, কিষাণ হেমব্রম, সুদীপ্ত সোরেন, বিক্রম সোরেন, শিবু মান্ডিরা বলে উঠল, এমন হলুদ ভাত ওরা কোনওদিন খায়নি। হ্যাঁ, চিকেন বিরিয়ানি তাদের কাছে অন্য রকম ভাতই। কারণ এই সমস্ত অনাথ ছেলেরা এ দিনই প্রথম বিরিয়ানির স্বাদ পেল। অনাথ আশ্রমের এই কচিকাচাদের জন্য ষষ্ঠীর দিন এমনই উদ্যোগ নিয়েছিল রামপুরহাট শহরের কয়েকজন যুবক।

রামপুরহাট শহরের শেষ প্রান্তে বুংকেশ্বরী শ্মশান থেকে কুসুম্বা গ্রাম যাওয়ার পথে রয়েছে একটি অনাথ আশ্রম। নাম আনন্দ আশ্রম। সেখানে ২৩ জন অনাথ আদিবাসী শিশু ও বালক থাকে। যাদের বয়স ৬ থেকে ১৪ বছর। অবশ্য কারও কারও বাবা কিংবা মা রয়েছেন। কিন্তু ছেলেকে একবেলা খাওয়ানোরও সামর্থ্য নেই তাঁদের। তাই সন্তানদের ঠাঁই হয়েছে আনন্দ আশ্রমে। সেখানে একটি বৃদ্ধাশ্রমও রয়েছে। কিন্তু তাতে আবাসিক মাত্র দু' জন বৃদ্ধা।

অনাথ আশ্রমের বাসিন্দা বিক্রম,সুদীপ্তদের অন্যান্যবারের পুজোটাও আশ্রমের চার দেওয়ালের মধ্যেই কেটে যায়। দুর্গা পুজোয় বাইরে বেরিয়ে আনন্দ করা কাকে বলে, সেটাও তারা এতদিন জানত না। পুজোর কয়েকদিন আগে ওই আশ্রমে তাদের জামা প্যান্ট দিতে যান রামপুরহাট শহরের যুবক পার্থপ্রতিম গুহ, সুমন মজুমদার, শাহাজাদ আলম, মানস মণ্ডল, সুপ্রিয় সেনরা। সেদিনই অনাথ আশ্রমের বাসিন্দাদের পুজো দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন ওই যুবকরা। পার্থবাবু বলেন, 'জামা প্যান্ট দেওয়ার দিন ছেলেগুলো জানায় তারা দূর থেকে আলোর ছটা দেখতে পায়। কিন্তু ঠাকুর কোনওদিন দেখেনি। এর পরেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই ওদের ঠাকুর দেখাবো। রাতের খাবার খাওয়াব।'

শুক্রবার বিকেলে একটি বাস ভাড়া করে সবাইকে রামপুরহাটে নিয়ে আসা হয়। এর পর পায়ে হেঁটে শহরের বড় পুজো মণ্ডপগুলিতে ঘোরানো হয়। সন্ধ্যায় শহরের একটি নামী রেস্তোরাঁয় খাওয়ানো হয়। মেনুতে ছিল চিকেন বিরিয়ানি ও চিকেন কষা। অনাথ
ছেলেগুলোর কাছে এটা নাকি হলুদ ভাত। সোনেরাম হেমব্রম, কিষাণল হেমব্রম, সুদীপ্ত সোরেনরা বলেন, 'কোনও দিন এমন খাবার খাইনি। খাবার খেয়ে খুব ভাল লাগলো। আমরা তো সাদা ভাত খেয়েই অভ্যস্ত। তাই বললাম হলুদ ভাত। এই খাবারের নাম কী, আমরা জানি না।'

যে যুবকরা এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম শাহাজাদ বলেন, 'ঠাকুর দেখিয়ে খাওয়াদাওয়ার পর ওদের চোখেমুখে যে আনন্দের ছাপ লক্ষ্য করলাম, সেটাই আমাদের কাছে পরম প্রাপ্তি।'
 

Share this article
click me!