আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ফের ঘর সাজাতে চাইছে কামতাপুর পিপলস পার্টি ইউনাইটেড। একুশের বিধানসভায় উত্তরবঙ্গের সবকটি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে কামতাপুর পিপলস পার্টি ইউনাইটেড। কিছুদিন আগে একটি সাংগঠনিক সভায় এমনটাই জানিয়েছেন কামতাপুর পিপলস পার্টি ইউনাইটেডের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ বর্মন। পৃথক রাজ্যের দাবিতে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গে।
আরও পড়ুন: গোর্খ্যাল্যান্ড নিয়ে বৈঠকের ডাক কেন্দ্রের,শেষ বিন্দু রক্ত থাকতে ঠেকাবো বললেন গৌতম
উত্তরবঙ্গের ছটি জেলার সমতল এলাকায় আলাদা আলাদা রাজ্য গঠনের দাবি নিয়ে পৃথক আন্দোলনের ডাক দিয়েছে কামতাপুর পিপলস পার্টি, কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি এবং গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টি। প্রথম দু’টি দলের দাবি, পৃথক কামতাপুর রাজ্য। তৃতীয়টির দাবি আলাদা কোচবিহার রাজ্যের। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এদের দাবিকে ঘিরে উত্তরবঙ্গের সমতলে নতুন করে অশান্তি ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন।আগস্ট মাসে ধূপগুড়ির ডাউকিমারি গ্রামে কামতাপুর পিপলস পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠক করে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেয়। এরপ ২১ অগস্ট মহামিছিল করে জলপাইগুড়ি বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে তারা স্মারকলিপি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরবর্তীতে দলীয় নেতৃত্ব বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথ মঞ্চ গড়তেও উদ্যোগী হয়।
কামতাপুর পিপলস পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিখিল রায়ের বক্তব্য, পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে ১৯৬৯ সাল থেকে আন্দোলন চলছে। অথচ তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। এবার তারা গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তবে তারা পাহাড়ে বিমল গুরুংদের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে মোর্চার আন্দোলন নিয়ে সরাসরি বিরোধিতা বা সমর্থন, কোনও কিছুই না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ রায়ের হুঁশিয়ারি, 'আমরা ২০০৮ সালেই প্রশাসনকে বলেছি, তরাই ও ডুয়ার্সের কোনও এলাকা নিয়ে গোর্খাল্যান্ড করার চেষ্টা হলে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।' কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অতুল রায় বলেন, 'পৃথক কামতাপুর রাজ্যের এবং ভাষার দাবি আদায়ের জন্য আমরা সর্বশক্তি দিয়ে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। রেল ও রাস্তা অবরোধ, ঘেরাও সবই হবে।' তিনি এও জানান, সমমনোভাবাপন্ন দল ও সংগঠনগুলির সঙ্গে জোট গড়া নিয়ে আলোচনা চলছে। তাঁর হুঁশিয়ারি, 'পৃথক কামতাপুর রাজ্যের জন্য অনেক রক্ত ঝরেছে। এ বার আমরাও শেষ দেখে ছাড়ব’।
আরও পড়ুন: 'বিজেপিকে ভোট দিলে উন্নয়ন বন্ধ করে দিন', তৃণমূলের কর্মিসভায় বিতর্কিত মন্তব্য অনুব্রতের
প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ থেকে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।এরও আড়াই দশক পরে কামতাপুর পিপলস পার্টি তৈরি হয়। ২০০৪ সালে তা ভেঙে তৈরি হয় প্রোগ্রেসিভ পার্টি। এই দু’টি দল মালদহ থেকে অসম সীমানা অবধি কামতাপুর রাজ্যের জন্য আন্দোলন চালায়। তবে অসমের অল কোচ রাজবংশী স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নমনি অসম থেকে মালদহ পর্যন্ত এলাকা প্রস্তাবিত কামতাপুর রাজ্যের মধ্যে রাখার দাবি তোলে। বিধানসভা ভোটের আগে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আন্দোলনে কামতাপুর পিপলস পার্টি এমনকী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সহযোগিতা নেওয়া হবে। জিসিপিপি-র সভাপতি বংশীবদন বর্মন জানান, 'ভারত-ভুক্তির চুক্তি অনুযায়ী কোচবিহার 'গ' শ্রেণির রাজ্য। অসাংবিধানিক ভাবে সেই রাজ্যকে জেলা করা হয়েছে। ওই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সকলকে একমঞ্চে সামিল করা প্রয়োজন।'
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে পৃথক রাজ্যের দাবিতে কোচবিহার রণক্ষেত্র হয়েছিল। অবিভক্ত গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের আন্দোলনের জেরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, দুই পুলিশ কর্মী এবং দুই আন্দোলনকারী নিহত হন। পুলিশ খুন-সহ একাধিক অভিযোগে বংশীবদন-সহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। বংশীবদনবাবু আত্মসমর্পণ করেন। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার বংশীবদনকে জামিনে মুক্তি দেয়। করোনাকালের আগে আবার পৃথক রাজ্যের দাবিতে অশান্ত হয়েছে উত্তর-পূর্ব। অসমের কোকরাঝাড় পৃথক বড়োল্যান্ডের দাবিতে উত্তাল হয়েছে। বড়োদের যৌথ মঞ্চ ৬০ ঘণ্টার অসম বন্ধ ডেকেছে। ডিমা হাসাওতেও ১০০ ঘণ্টা বন্ধ ডাকা হয়েছে। পৃথক কার্বিল্যান্ডের দাবিতে কার্বি আংলং জ্বলেছে। এই মুহূর্তে কুড়িটিরও বেশি নতুন রাজ্য গঠনের আবেদন জমা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সংগঠনের তরফে ওই আবেদনগুলি জমা পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে নতুন তিনটি রাজ্য গঠনের দাবির সঙ্গে রয়েছে উত্তর-পূর্বে বড়োল্যান্ড, কার্বিল্যান্ড, পূর্ব নাগাল্যান্ড, কুকিল্যান্ডের মতো বেশ কিছু রাজ্যের দাবি।
এই অবস্থায় ২১-এর বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক দলের পাশাপাশি কামতাপুর পিপলস পার্টির ইউনাইটেডের তরফ থেকে কামতাপুরী কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে গোটা উত্তরবঙ্গ থেকে কামতাপুর পিপলস পার্টি উত্তরবঙ্গের সব কটি বিধানসভাতে প্রার্থী দেবে।