
WB SSC New Recruitment: নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বের করেও চাপে পর্ষদ। ২০২৫ সালের নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নোটিসে মানা হয়নি সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে ইচ্ছাকৃতভাবে অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগে ভিত্তিতে স্কুল শিক্ষা দফতরের সচিব বিনোদ কুমার, স্কুল শিক্ষা দফতরের কমিশনার, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়কে আদালত অবমাননার আইনি নোটিস পাঠালেন এক আইনজীবী।
সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে গত শুক্রবারই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। জানা গিয়েছে, মামলাকারীদের দাবি, ৪৪ হাজার নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি ও রুল জারি করা হয়েছে তাতে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশ মানা হয়নি। তাই তা অবৈধ। সিলেকশন প্রসেসের রুল থেকে বয়সের ছাড়ের ক্ষেত্রেও নির্দেশ মানেনি রাজ্য বলে অভিযোগ। এই রকমই একাধিক অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। আগামী ৫ জুন বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি রয়েছে।
এবার তার মধ্যেই আদালত অবমাননার নোটিস গেল গেল শিক্ষা দফতরের একাধিক আধিকারিকদের কাছে। অভিযোগ,সুপ্রিম নির্দেশ মেনে এখনও চিহ্নিত অযোগ্যদের থেকে বেতনের টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি, ওএমআর শিট প্রকাশ করা হয়নি, যোগ্যদের পাশাপাশি অযোগ্যদেরও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে ২০১৬ সালের বিধি না মেনে ২০২৫ সালের বিধি মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে, যা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অবমাননা বলে অভিযোগ।
ঠিক কী কী অভিযোগ উঠেছে?
১)৩১ মে-র মধ্যে কেন গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নয়?
২)নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশে কারা পরীক্ষায় বসবে?
৩)চিহ্নিত অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ নয় কেন?
৪)২০১৬ ঘোষিত শূন্যপদের সঙ্গে নতুন শূন্যপদে নিয়োগ কেন?
৫)২২ লক্ষ OMR প্রকাশ কেন করা হয়নি?
৬)চিহ্নিত অযোগ্যদের বেতন ফেরতে'র প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে?
৭) ২০১৬ সালের ৪ নিয়োগ বাতিল। পুনরায় নিয়োগে রুল বদল কীভাবে?
পদক্ষেপ না হলে আগামী সপ্তাহে আদালত অবমাননার মামলা সুপ্রিম কোর্টে৷ ৭ দিনের ডেডলাইন।
অন্যদিকে, এসএসসি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। মামলায় এসএসসির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত বিধির বিরোধিতা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন। আগামী ৫ জুন শুনানির সম্ভাবনা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের চাকরিহারাদের নিয়োগের পরীক্ষার নতুন বিধি প্রকাশ করেছে এসএসসি। নতুন পরীক্ষাবিধিতে একাধিক বদল আনা হয়েছে। তারই বিরোধিতা করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ।
মামলাকারীদের দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিধি ২০১৬ সালের মতোই করতে হবে। ২০১৬ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী ৫৫ লম্বরের লিখিত পরীক্ষা হত। সেখানে নতুন বিধিতে ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও, চাকরিপ্রার্থীদের যোগ্যতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আরও নানা মাপকাঠি সংযোজন করা হয়েছে। যেমন, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর, ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে ১০ নম্বর ‘লেকচার ডেমনস্ট্রেশন’-এর উপরেও থাকছে ১০ নম্বর। ফলে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা, যাঁরা আগে অপেক্ষমান তালিকায় অর্থাৎ ওয়েটিং লিস্টে ছিলেন, তাঁরা যোগ্যতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়বেন। সে কারণেই এসএসসির সর্বশেষ নিয়োগবিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন মামলাকারীরা।
শুধু তা-ই নয়, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারির হিসাবে যাঁদের বয়স সর্বোচ্চ ৪০ বছর, তাঁরাই নিয়োগের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছে এসএসসি। রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুসারে বয়সের ঊর্ধ্বসীমায় ছাড় পাবেন তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং অন্য অনগ্রসর শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীরা। এ ছাড়া, নতুন নিয়ম অনুসারে, মেধাতালিকা (প্যানেল) এবং অপেক্ষমান মেধাতালিকা (ওয়েটিং লিস্ট)-র মেয়াদ থাকবে প্রথম কাউন্সেলিংয়ের পর থেকে এক বছর পর্যন্ত। তবে রাজ্য সরকারের আগাম অনুমতি নিয়ে সেগুলির মেয়াদ আরও ছ’মাস বৃদ্ধি করতে পারবে কমিশন।
নতুন পরীক্ষাবিধিতে আরও বলা হয়েছে, প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও দু’বছর লিখিত পরীক্ষার মূল ওএমআর শিট সংরক্ষণ করতে হবে। তার পরে সেগুলি নষ্ট করা যেতে পারে। তবে ওএমআর শিটের স্ক্যান করা কপি সংরক্ষিত থাকবে ১০ বছর পর্যন্ত। মামলাকারীদের দাবি, অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর থাকলে তাঁদের মতো বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা আবার বঞ্চিত হবেন। কারণ তাঁদের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁদের কার্যত ৯০ নম্বরে পরীক্ষা দিতে হবে। অভিজ্ঞতার জন্য নির্দিষ্ট ১০ নম্বর পরীক্ষায় বসার আগেই তাদের কমে যাবে। তাই তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
২০১৬ সালের রুলে অ্যাকাডেমিক্সের মার্কস ছিল ৩৫, সেটাকে কমিয়ে করা হয়েছে ১০, লিখিত পরীক্ষায় ছিল ৫৫, সেটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০। ইন্টারভিউ ছিল ১০, এবারের রুলে ইন্টারভিউ ১০ ও লেকচার ডেমোস্ট্রেশনের জন্য ১০ বরাদ্দ করা হয়েছে। টিচিং এক্সপেরিয়েন্সের জন্য ১০। আগে ইন্টারভিউ লিস্ট তৈরি হত ৯০ নম্বরের ভিত্তিতে, বর্তমানে ইন্টারভিউ লিস্ট তৈরি হবে ৭০ নম্বরের ভিত্তিতে। আগে ১:১.৪ অনুপাতে ডাকা হত, অর্থাৎ ১০০টি পদের জন্য ১৪০ জনকে ডাকা হত। এখন ১:১.৬ অনুপাতে ডাকা হবে। অর্থাৎ ১০০টি পদের জন্য ১৬০ জনকে ডাকা হবে।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।