
খবরে পূর্ব কলকাতার কসবা। ঘটনাস্থল সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ। গত বুধবার প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক কলেজ ছাত্রী। সে শাসলদলের ছাত্র সংগঠনের কর্মী। মূল অভিযুক্তও ছাত্র সংগঠনের নেতা।
অভিযোগকারিণীর দাবি, তাঁকে যখন ধর্ষণ করা হচ্ছিল, তখন কলেজের দুই ছাত্রনেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ, গত ২৫ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা ৫০ মিনিট, প্রায় ৩ ঘন্টা ২০ মিনিট ধরে কলেজের গার্ডস রুমে অকথ্য নির্যাতন চলে আইনের ছাত্রীদের ওপর। নির্যাতিতা শাসকদলের ছাত্র সংগঠনে কর্মী। পুলিশকে দেওয়া অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, কলেজের প্রাক্তনী তথা প্রভাবশালী নেতার প্রেম তথা বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার অপরাধে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। অভিযুক্তকে সহায়তা করেছেন আরও দুজন। তা ছাড়াও এক জন ছিলেন অকুস্থলে। কলেজছাত্রীর কথায়, ওই ব্যক্তি ছিলেন অসহায়। তাঁকে ডেকেও সাহায্য পাননি। বস্তুত, তরুণীর বয়ান অনুযায়ী, ওই রক্ষীতে তাঁর দায়িত্ব থেকে একপ্রকার সরিয়ে দিয়ে দুই অভিযুক্ত কলেজের গেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
নির্যাতিতা জানিয়েছেন, মোট দু দফার তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন হয়েছিল। প্রথমে ইউনিয়ম রুমে, তার পরে গার্লস রুমে। সেই সময়ে কলেজের মূল গেটে এক রক্ষী ছিলেন।
অভিযোগপত্রের এক জায়গায় ছাত্রী লিখেছেন, ইউনিয়ন রুমের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়ছিল (বন্ধ করেন এম এবং পি)। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরোটা ঘরে যায়। জে আমাকে ওয়াশারুমের দিকে টেনে নিয়ে যান এবং জোর করতে থাকেন শারীরিক সম্পর্কের জন্য। আমি বারংবার না বলতে থাকি। বাধা দিতে থাকি ওঁকে। কেঁদে ফেলি। ওকে অনুরোধ করি, আমায় ছেড়ে দিতে। কিন্তু, কোনও কথাই শোনেননি। আমার ওপর আরও জোর খাটাতে থাকেন। আমি ভয়ে পেয়ে যাই। প্যানিক অ্যাটাক হয় আমার। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তখন ‘জে’ হাঁক গিয়ে ডাকেন ‘এম’ এবং ‘পি’-কে। আমি ওদের অনুরোধ রে ইমায় রুবি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কারণ আমার শরীর খারাপ লাগছে। কিন্তু কেউ কথা শোনেননি। তখন ওঁদের অনুরোধ করি, একটি ইনহেলার অন্তত এনে দিতে। ‘এম’ তাতে সাড়া দেন। ইনহেলার নেওয়ার পর আমি ঠিক হই।
নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে প্রায় পালাতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু, দেখলাম ওরে মেন গেট বন্ধ করে দিচ্ছেন। আমি গার্ডের সাহায্য চাই। কিন্তু উনি অসহায় ছিলেম। আমায় সাহায্য করেননি। ‘এম’ এবং ‘পি’ আবার করে করে আমাকে ইউনিয়ন রুমে নিয়ে যায়। আমি ‘জে’-র কাছে কাকুতি মিনতি করি। ওর পা পর্যন্ত ধরি। উনি ‘এম’ এবং ‘পি’ করে বলেন, আমায় গার্ডস রুমে নিয়ে যেতে। সেখানে উপস্থিত রক্ষীকে বলে বাইরে বসতে।
দীর্ঘ সময় ধরে তরুণীর ওপর শারীরিক নির্যাতন চলে বলে অভিযোগ। ছাত্রীর কথায়, অর্ধমৃত অবস্থায় পড়েছিলাম আমি। আমায় ধর্ষণ করে উনি উঠে দাঁড়ান। আমি একটা সময়ে যখন উঠে দাঁড়ালাম, বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম, তখন ভেসে এল হুমকি। কেউ যেন না জানে। এই কথা যেন ইউনিয়নেরও কারও কানে না যায়।