বাঙালিদের ভয় দেখালে সহ্য করব না। মুকুল রায়ের খাসতালুক কাঁচরাপাড়ায় গিয়ে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের ধর্মীয় মেরুকরণ করার পরে এবার বাঙালি- অবাঙালি বিভেদ করতে চাইছে বিজেপি। পুলিশের ভূমিকাতেও ফের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা।
এর আগেও একাধিকবার মুকুল রায়কে গদ্দার বলে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন সরাসরি মুকুলের নাম না নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে মমতা বলেন, 'কত দম আমার দেখা আছে।' দলের নেতারা বার বার সতর্ক করলেও তিনি মুকুল রায়কে বিশ্বাস করেও সবথেকে বেশি দোষ করেছেন বলে এ দিন প্রকাশ্যেই স্বীকার করে নেন মুখ্যমন্ত্রী।
নাম না করে মুকুলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সরকার আমাদের হাতে রয়েছে। এটা মাথায় রাখুন। ভোটের এখনও দু' বছর বাকি। কোথায় যাবেন, ভোটার লিস্টে নাম তো রয়েছে দিল্লি থেকে। লজ্জা করে না, বাংলায় রাজনীতি করেন অথচ বাংলা থেকে ভোটার তালিকায় নাম নেই। ওরকম দম আমার দেখা আছে। আসলে সবথেকে বেশি দোষ আমার। দলের নেতারা বার বার বলেছিল, দিদি ও গদ্দার। কিন্তু আমি বিশ্বাস করেছিলাম। তাই দোষটা সবথেকে বেশি আমার।'
এ দিন কাঁচরাপাড়ায় গিয়ে মমতা অভিযোগ করেন, ব্যারাকপুর, কাঁচরাপাড়া, নৈহাটিতে বাঙালিদের ভয় দেখানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতেই এলাকায় বাঙালিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবু পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে ফের সরব হন মমতা। যারা তৃণমূলের ফ্লেক্স ছিঁড়েছে, ভয় দেখিয়েছে, তিন দিনের মধ্যে তাঁদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন মমতা।
মমতা বলেন, 'বাংলায় এসে বাঙালিদের ভয় দেখাচ্ছে। কত বড় সর্দার সব আর কত বড় গুন্ডা সব, সেটা আমি দেখতে চাই। রাতের বেলা বাঙালিদের ভয় দেখানো হচ্ছে, কখনও সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার হচ্ছে। মানুষের উপরে অত্যাচার করে নিজেরাও ভাল থাকবেন না। দুটো আসনে জিতেই এত বড় নেতা হয়ে গেলেন সব।'
নাম না করেই এ দিন বিজেপি নেতাদের সম্পত্তি নিয়েও কটাক্ষ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, 'মাঝেই মাঝেই দুবাই, সিঙ্গাপুর যাওয়া হয় কেন? এয়ারপোর্ট থেকে কে কোথায় গিয়েছে, দেখে নিন। সল্টেলেকের ধাবা আর কল্যাণীর আশেপাশে জমিগুলো কার, খোঁজ নিয়ে দেখুন।'
এবারে রাজ্যে বিজেপি-র ভাল ফলের জন্য মুকুল রায়কেই বড় কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে। মুকুলের নাম না করেই মমতা বলেন, 'আমাদের প্রয়োজন নেই আপনাদের মতো কাউকে। আপনারা যাওয়ার পরেও আমরা অনেকগুলি উপনির্বাচনে জিতেছি। আর আমি বিশ্বাস করি এবার ইভিএমে কারচুপি না হলে একটা সিটও জিতত না।'
বিজেপি-র বিরুদ্ধে এবার যে তিনি বাঙালি- অবাঙালির বিভেদের অভিযোগ তুলে সরব হবেন, তা বার বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'বাঙালি- বিহারি বিভেদ করতে দেব না। রাজ্যের মানুষ এক হলে তখন ঠেকানো যাবে না। বাংলাকে গুজরাত করতে দেব না।'