বাড়ির অমতে ভালোবেসে ছাত্রীকে বিয়ে করেছিল। বিয়ের কিছুদিন পর স্ত্রীকে খুন করাই শুধু নয়, প্রমাণ লোপাটের মৃতদেহটি টুকরো টুকরো রেখে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে এক শিক্ষক-সহ পরিবারের তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল উত্তর দিনাজপুরের জেলা ফার্স্ট ট্যাক দ্বিতীয় আদালত। দোষীদের ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছেন বিচারক।
উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের কেউচাল গ্রামে বাড়ি মহিদুর আলম। রায়গঞ্জ শহরের একটি নামী স্কুলে ইংরেজি পড়াত সে। আংশিক সময়ের অধ্যাপক ছিল রায়গঞ্জ কলেজেরও। পুলিশ জানিয়েছে, রায়গঞ্জ কলেজের ছাত্রী সাবিনা খাতুন প্রেমের সম্পর্ক তৈরি মহিদুর আলমের। সাবিনার বাড়ি উত্তর দিনাজপুরেরই কালিয়াগঞ্জে। বাড়ির অমতে পালিয়ে গিয়ে ছাত্রীকে বিয়েও করে মহিদুর। সংসার পাতে রায়গঞ্জ শহরে করোনেশন স্কুলের পাশে একটি ভাড়া বাড়িতে।
সালটা ২০০৫। তখন সদ্য বিয়ে হয়েছে সাবিনা ও মাহিদুরের। কালিয়াগঞ্জে বাপের বাড়ি যাওয়ার নাম করে বেড়িয়ে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যান মাহিদুরের আলমের স্ত্রী। সেদিন মেয়ের নামে কালিয়াগঞ্জ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন সাবিনা খাতুনের বাপের বাড়ির লোকেরা। ঘটনার তদন্তে নেমে কালিয়াগঞ্জেরই একটি পুকুর থেকে ধড়হীন মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। একে একে রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের আরও বেশ কয়েকটি দেহাংশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, মাথা-সহ দেহাংশগুলি সাবিনা খাতুনেরই। স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগে শিক্ষক মাহিদুর আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় তার দিদি ও মা-কেও। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেন তদন্তকারীরা।
চোদ্দ বছর ধরে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার চলেছে উত্তর দিনাজপুর জেলা ফার্স্ট ট্র্যাক দ্বিতীয় আদালতে। দীর্ঘ শুনানির পর মাহিদুর আলম, তার মা ও স্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। বৃহস্পতিবার দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নির্দেশ দিলেন বিচারক। সঙ্গে সঙ্গে দশ হাজার টাকা জরিমানা। ঘটনার চোদ্দ বছর পর দোষীরা সাজা পাওয়ার খুশি মৃত সাবিনা খাতুনের পরিবারের লোকেরা।