ফের জঙ্গলমহলে মাও পোস্টার। এবার মেদিনীপুরে শহরে। জমি দুর্নীতির অভিযোগ তুলে স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল কর্মীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পোস্টার পড়েছে শহরের রাঙামাটি এলাকায়। আতঙ্কিত এলাকার মানুষ।
এক কিংবা দুটো নয়, স্থানীয় একটি ক্লাবের দেওয়ালে মঙ্গলবার সকালে সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা বেশ কয়েকটি পোস্টার দেখতে পান মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটি এলাকার বাসিন্দারা। ঘটনাটি জানাজানি হতেই রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। টাকার বিনিময়ে নাকি মেদিনীপুর শহরে সরকারি খাস জমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে! আর এই অসাধু কারবারের সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল কর্মী! পোস্টারে অন্তত তেমনই দাবি করা হয়েছে। কোনও পোস্টারে লেখা ছিল, '১২ লক্ষ টাকা নিয়েছে, কিন্তু জমি দাওনি। তিন বছর ধরে টাকাও ফেরত দিচ্ছ না। তোমরা মরবে।' কোনও পোস্টারে আবার লেখা, 'জমির দালালরা হুঁশিয়ার, তোমরা মরবে।' কারা দিল এমন পোস্টার? প্রতিটি পোস্টারের নিচেই লাল কালিতে লেখা ছিল 'মাওবাদী জিন্দাবাদ'। আর তাতেই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। কোতুয়ালি থানার ঘটনাটি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। পোস্টারগুলি খুলে নিয়ে যায় পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের পোস্টারের ছবি তুলতে বারণ করেন পুলিশ আধিকারিকরা। এমনকী, যাঁরা ছবি তুলেছিল, তাঁদের মোবাইল থেকে ছবিগুলি মুছে দেওয়া হয়।
কিন্তু হঠাৎ করে বেছে বেছে তৃণমূল কর্মীদের নামেই পোস্টার পড়ল কেন? মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটি এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ, এলাকায় বেশ কয়েকশো বিঘা জমি বিক্রি করে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু দলের স্থানীয় নেতৃত্ব বিষয়টিকে আমল দিতে চাননি, উল্টে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেই ঘটনার কারণেই কি মাওবাদী পোস্টার পড়ল? তা অবশ্য পরিষ্কার নয়। এদিকে মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে পরিকল্পনামাফিক এই পোস্টার লাগিয়েছে বিজেপি। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে গেরুয়া শিবিরের নেতারা।
বাম আমলে মাওবাদীদের দৌরাত্ম্যে রক্ত ঝরেছে জঙ্গলমহলে। রাজনৈতিক নেতাদের তো বটেই, প্রাণ গিয়েছে বহু নিরীহ মানুষেরও। রাজ্যের পালাবদলের পর অবশ্য শান্তি ফিরেছে একদা 'মাওবাদীদের রাজত্ব'তে। বুড়িশোলের জঙ্গলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কিষেণজির মৃত্যুর পর জঙ্গলমহলের মাওবাদীদের অস্তিত্ব আর নেই। কিন্তু, মাওবাদীদের নাম করে খোদ মেদিনীপুর শহরে পোস্টার দিল কারা? প্রশ্ন উঠছে।