উৎস যাই হোক, বাঙালির জীবনে এমন ধর্মীয় অনুষঙ্গবিহীন উৎসব খুব বেশি নেই।
খানাপিনা হোক বা বাহারি পোশাক, মুঘলদের অবদান অস্বীকার করা মুশকিল। সাম্প্রদায়িকতার আবহে গোটা দেশে যখন অশনিসংকেত, বদলে ফেলা হচ্ছে ইতিহাস, আরও একবার মুঘলদের শরণারপন্ন হতে হবে আমাদের। বাঙালির একান্ত আপন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উৎসব পয়লা বৈশাখের শুরয়াতও এই মুঘলদের হাতেই।
কুনাল চক্রবর্তী ও শুভ চক্রবর্তী-র লেখা 'দ্য হিস্টোরিক্যাল ডিকশিনারি অফ বেঙ্গলিস' বলছে , মুঘল আমলের প্রথম দিকে হিজরি সন অনুযায়ী চলত শাসন। কিন্তু সমস্যা হত খাজনা আদায়ে। কারণ চাঁদের ওপর এই সন নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। খাজনা আদায়ের বিষয়টিকে আরও মসৃণ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হন সম্রাট আকবর। তাঁর নির্দেশেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেউল্লাহসিরাজি বাংলা সন গণনা শুরু করেন। প্রথমে একে বলা হত ফসলি সন। পরে বঙ্গাব্দ শব্দটি প্রবর্তিত হয়। সেই সময়ে চৈত্র মাসের শেষের দিন খাজনা আদায়ের শেষ দিন বলে ধরা হত।
অন্য দিকে অমর্ত্য সেনের গ্রন্থ 'দ্য় আরগুমেন্টিভ ইন্ডিয়ান'-এ দেখানো হয়েছে আকবর কীভাবে তারিখ ই ইলাহী ছাড়াও সর্বধর্মসংস্কারের উদ্দেশ্যে নতুন ক্যালেন্ডার তৈরির কথা ভেবেছিলেন।
বঙ্গাব্দের মুঘল যোগের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন আরও অনেক। ঐতিহাসিক শামসুজ্জামান খান জানাচ্ছেন, সন একটি আরবি শব্দ। এটি নির্দেশ করছে বঙ্গাব্দ বিষয়টি কোনও মুসলিম শাসকের মস্তিষ্কপ্রসূত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য উৎস যাই হোক, বাঙালির জীবনে এমন ধর্মীয় অনুষঙ্গবিহীন উৎসব খুব বেশি নেই। এলাহি ভরসা লিখে হালখাতা শুরু করা হোক বা ধর্মের হানাহানি ভুলে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণ। ডিজিটাল বং এর ব্যস্ত জীবনে এটুকু মৈত্রী, বাঙালিয়ানার গন্ধ তো থাক।