জিয়াগঞ্জের ট্রিপল মার্ডার কেসে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য় । ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নেই মাদক খাওয়ানোর প্রমাণহয়নি। লালবাগ মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে এমনই জানা গেছে। শুরুতে তদন্তে নেমে পুলিশ অনুমান করছিল, শিক্ষক পরিবারকে খুন করার আগে মাদক খাওয়ানো হয়েছিল। সেকারণে খুনের সময় আত্মরক্ষা করতে পারেনি তাঁরা।
সোমবার পুলিশের ডাকে জিয়াগঞ্জ থানায় হাজির হন মৃত বিউটি মণ্ডলের বাবা সুখেন মন্ডল ও দাদা বিশ্বজিৎ মন্ডল। দীর্ঘ পুলিশি জেরা শেষে সুখেনবাবু সাফ জানিয়ে দিলেন, এই খুনের সঙ্গে শৌভিক জড়িয়ে আছে । তবে পুলিশ আমার সামনে বসিয়ে শৌভিককে জেরা করলে অনেক তথ্য জানতে পারত । অন্যদিকে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসার শৌভিক –বিউটির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা খারিজ করে দিয়ে বলেন , শৌভিককে একেবারেই পছন্দ করত না বিউটি। এমনকী বাড়িতে শৌভিক এলে রান্না পর্যন্ত করতেন না ওই গৃহবধূ । বরং বছর দেড়েক থেকে শৌভিকের হাত থেকে স্বামী বন্ধুপ্রকাশকে রক্ষা করতে একাধিক আত্মীয় পরিজনের শরণাপন্ন হয়েছিলেন তিনি।
বিজয়া দশমীর দুপুরে একই কায়দায় গলা কেটে খুন করা হয়েছিল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি ও তাদের সন্তান অঙ্গন পালকে । এই ঘটনার তদন্ত দ্রুত গুটিয়ে আনতে পুলিশ সিআইডির সাহায্য ছাড়াও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগিয়েছে । অথচ ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ । বরং ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নতুন নতুন তথ্য দিয়েছে। এতেই বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে এই ঘটনায় যাকে ঘিরে অভিযোগের তির আবর্তিত হয়েছে সেই বন্ধুপ্রকাশের বন্ধু শৌভিক বনিককে সিউড়ি থেকে আটক করে জিয়াগঞ্জে এনে দফায় দফায় জেরা করেও উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ । সোমবার মৃত বিউটি পালের দাদা বিশ্বজিৎ মন্ডল বলেন , পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে শৌভিককে টাকা দেওয়া বন্ধ না করলে আর জিয়াগঞ্জ ফিরবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল বোন। তার পরেও জামাইবাবু সম্পর্ক রেখেছিল ওর সঙ্গে । এক তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের দাবি, শৌভিক পুলিশকে সঠিক তথ্য জানাচ্ছে না। বরং জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে বিভ্রান্ত করছে । শৌভিকের আচরণে তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছে এই ঘটনার অনেক কিছুই তার জানা। তাসত্ত্বেও রীতিমত সে পুলিশের সঙ্গে নাটক করে যাচ্ছে ।
অথচ পুলিশি জেরায় শৌভিক স্বীকার করেছে সে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা নিয়েছে বন্ধুর কাছ থেকে । কিন্তু তদন্তকারী অফিসাররা বন্ধুপ্রকাশের মোবাইলের সুত্র ধরে জানতে পেরেছে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা শৌভিককে দিয়েছিল বন্ধুপ্রকাশ। এবং ওই টাকা ফেরত চাইতে গেলে শৌভিক এক মাস থেকে বন্ধু প্রকাশের ফোন ধরা বন্ধ করে দিয়েছিল । আসহায় বন্ধু প্রকাশ বাধ্য হয়ে শৌভিককে এক মাস যাবত ফোনে মেসেজ করে ফোনে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে গিয়েছে । বলেছে টাকা ফেরত না পেলে আমি শেষ হয়ে যাব , পাওনাদার আমাকে ছিড়ে খাচ্ছে । জানা গেছে, শৌভিকের প্রাক্তন স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ইতিমধ্য়েই বোলপুর গিয়েছে পুলিশ । বোলপুরের সীমান্তপল্লির বাসিন্দা ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও পুলিশ শৌভিকের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছে । ২০০৯ সালে শৌভিকের সঙ্গে তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়।