প্রসূতি ও তার গর্ভে থাকা সন্তানের জোড়া মৃত্যু ঘিরে শনিবার দিনভর নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল মুর্শিদাবাদ। বছর বত্রিশের প্রসূতি শতাব্দী দত্ত হালদারের মৃত্য়ুতে উল্টে ডাক্তারকেই 'বাহবা' দেন লোকজন। কোনও ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগ নয়, অভিযুক্ত চিকিৎসক ডাঃ বাসব সাহাকে মৃতদেহের সামনে এনে গলায় মালা পরিয়ে হাতা চাঁদার টাকা তুলে দেন মৃতার পরিবারের লোকজন।
এই মৃত্যুকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লালবাগ মহকুমা হাসপাতাল। পাশাপাশি দিন ভর হাসপাতাল সুপার অভিজিৎ দেওঘরিয়াকেও আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখান মৃতের পরিবারের লোকজন। তবে উত্তেজিত জনতা শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের সম্পদের কোনও রকম ক্ষয়ক্ষতি করেনি। কিংবা অভিযুক্ত চিকিৎসককে হাতের নাগালে পেয়েও মারধর করেনি। পরবর্তীতে সন্ধ্যা নাগাদ মৃতদেহ উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ থানার পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
এই বিষয়ে হাসপাতাল সুপার দেওঘরিয়া বলেন , “ গোটা ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে । সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।” কিন্তু একজন অন ডিউটি চিকিৎসক কেন হাসপাতালে অনুপস্থিত জানতে চাওয়া হলে সুপার সাহেব বিষয়টি এড়িয়ে যান । পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে , প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে জিয়াগঞ্জ থানার সাহাপাড়া বাপের বাড়ি থেকে জিয়াগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হন শতাব্দী দত্ত হালদার । ওই প্রসূতির অবস্থার অবনতি হতে থাকায় তাকে ভোর রাতে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয় ।
অভিযোগ মহকুমা হাসপাতালে পাঁচ ঘণ্টা ওই প্রসূতি ছটপট করলেও কোনও চিকিৎসক তার চিকিৎসা করেননি । এই ব্যাপারে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে ,এদিন কর্তব্যরত চিকিৎসক হিসেবে হাসপাতালে উপস্থিত থাকার কথা ডাঃ বাসব সাহার ।প্রসূতির পরিস্থিতির কথা ভেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত স্টাফ নার্স একাধিকবার ডাক্তারবাবুকে কল বুক দিলেও তার কোনও রেসপন্স করেননি ওই চিকিৎসক । বরং দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সকে ওভার টেলিফোনে কিছু ওষুধ এবং অক্সিজেন দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে দেন ডাঃ বাসব সাহা । নার্স ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মেনে রোগীর চিকিৎসা করলেও শেষ পর্যন্ত তার ও গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয় ।
এই ঘটনায় হাসপাতাল জুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয় । প্রায় দিনভর হাসপাতাল সুপারকে আটকে রেখে মৃতের আত্মীয়স্বজন বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন । শেষপর্যন্ত অভিযুক্ত চিকিৎসককে সন্ধ্যার পরে হাসপাতালে উপস্থিত করতে বাধ্য করেন । পরে বিক্ষুব্ধ জনতার প্রশ্নের উত্তরে অভিযুক্ত চিকিৎসক চারবার কল বুক পেয়েও যে হাসপাতালে আসেন নি এই কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন , “ চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে এখলামসিয়া বলে সেই আক্রমণে পড়ে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে । আমি জানতে পেরেই রোগীর চিকিৎসা শুরুর পরামর্শ দিই নার্সকে । তার পরেও ওই রোগীকে বাঁচান যায়নি এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ।”
উত্তেজিত জনতা সারাদিন ধৈর্যের পরিচয় দিলেও মরদেহের পাশাপাশি অভিযুক্ত চিকিৎসকেও কিন্তু মালা পরিয়ে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে চেয়েছেন । বছর খানেক আগে ঘটা করে শতাব্দী দেবীর বিয়ে হয় লালগোলা থানার উত্তর সুদর্শন গঞ্জ এলাকায় । স্বাভাবিক ভাবে এই খবর লালগোলা এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেও সেখানেও শোকের ছায়া লক্ষ করা গিয়েছে । এদিকে মৃতের কাকা বাপ্পা দত্ত অভিযুক্ত চিকিৎসকের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে বলেন ,” আমার ডাক্তারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। যাতে আর কারও সাথে এই ধরনের কোনও ঘটনা না ঘটে। শান্তিপূর্ণভাবেই অভিনব কায়দায় আমরা এর প্রতিবাদ করেছি"।