এলাকার ডন হিসেবে 'সুখ্যাতি' ছিল তার। অনেক দিন ধরেই তাকে জালে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল পুলিশও। কিন্তু হুগলির ত্রাস হিসেবে পরিচিত দুষ্কৃতী টোটোন বিশ্বাসের হাতে যে কার্বাইনের মতো আধুনিক অস্ত্র এসে গিয়েছে, তা জানত না পুলিশও। শেষ পর্যন্ত একটি কার্বাইন- সহ বারোটি বন্দুক সমেত শনিবার মাঝরাতে টোটোনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার সঙ্গে টোটোনের আরও দুই শাগরেদ প্রবীর মণ্ডল এবং কিশোর বিশ্বাসকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
টোটোন বিশ্বাস হুগলির চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগর এলাকায় কার্যত সমান্তরাল সাম্রাজ্য চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। এলাকায় প্রচুর সিসিটিভি লাগিয়ে নজরদারি চালাত টোটোন এবং তার দলবল। এমন কী, ওই এলাকার রাস্তা দিয়ে কেউ গেলেও সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করত টোটোনের অনুগামীরা।
গত ১৩ জুলাই গভীর রাতে চুঁচুড়া রবীন্দ্রনগরে টোটোনের ঠেকে পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল । সেদিন টোটোন ও তার অনুগামীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রচুর গুলিবর্ষণ করে। প্রায় তিরিশ থেকে চল্লিশ রাউন্ড গুলি চলেছিল পুলিশকে লক্ষ্য় করে। সেই সময় চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি যশপ্রীত সিং অল্পের জন্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পান।
পুলিশি অভিযানের পাল্টা নিজেদের দাপটে এলাকায় কার্যত বনধের অবস্থা তৈরি করেছিল টোটোনের বাহিনী। তার পর অবশ্য এলাকা ছেডে় গা ঢাকা দেয় টোটোন। পুলিশও তার খোঁজে মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
শেষ পর্যন্ত শনিবার গভীর রাতে গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পায়, চুঁচুড়া রেল স্টেশনের কাছে ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের মাঠে জড়ো হয়েছে টোটোন এবং তার দলবল। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে হানা দিয়ে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র-সহ টোটোন ও তার দুই সঙ্গীকে ধরে পুলিশ। তার মধ্যে কার্বাইন দেখে চমকে যান পুলিশকর্তারাও। উদ্ধার হয় ৩৬ রাউন্ড গুলি। এ দিন টোটোন-সহ বাকি দুই ধৃতকে চুঁচুড়া আদালতে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুণ কবীর এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, টোটোনকে গ্রেফতার করাটা তাঁরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। ধৃত তিনজনকে জেরা করে দলের বাকি দুষ্কৃতীদেরও ধরার চেষ্টা করা হবে। টোটোন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সাত থেকে আটটি খুনের মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও ডাকাতি, বেআইনি অস্ত্র মজুত করার মতোও অভিযোগ রয়েছে টোটোন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে।