ভারতে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল চিনা যুবক
তাকে ঘিরে ক্রমেই বাড়ছে রহস্য
এদিন ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেন পুলিশ আধিকারিকরা
তার শরীরে কোনও গোপন যন্ত্র লুকোনো থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে
গালওয়ান উপত্যকায় নৃশংস হামলার প্রথম বার্ষিকির দিনই, মালদায় ধৃত চিনা যুবক হান জুনয়েই-কে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে গিয়ে, তার অনুপ্রবেশের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। মালদহের কালিয়াচক থানার অন্তর্গত মিলিক সুলতানপুর এলাকা দিয়ে গত ১০ জুন ভারতে অনুপ্রবেশের সমময় বিএসএফ-এর টহলদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিল সে। মঙ্গলবার, কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে সেখানেই নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুননির্মাণ-এর করলেন তদন্তকারীরা। তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সে, এমনটাই জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে সে কোনও গভীর দলের মাছ বলেই মনে করা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, পুলিশি জেরায় সে এখনও মুখ খোলেনি। তার থেকে বাজেয়ারপ্ত ল্যাপটপ এবং আইফোনের পাসওয়ার্ডও তদন্তকারীদের দেয়নি হান জুনয়েই। পুলিশের বিশেষজ্ঞরাও ল্যাপটপ এবং আইফোনের পাসওয়য়ার্ড ক্র্যাক করতে পারেননি। আসলে সেগুলি ম্যান্ডারিন ভাষায় লেখা। তার অন্য ফোনে উইচ্যাট অ্যাপে ম্যান্ডারিন ভাষায় কিছু কথোপকথনও রয়েছে। এই লেখাগুলির পাঠোদ্ধার করতে পারলে এবং তার ল্যাপটপ এবং আইফোন খোলা গেলে, জুনয়েই-এর ভারতে অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্য অনেকটাই পরিষ্কার হবে বলে মনে করছে পুলিশ। তাই, ভাষাবিদদের সাহায্য নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
চিনা এই নাগরিককে নিয়ে কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না পুলিশ। এখনও পর্যন্ত তদন্ত যতদূর এগিয়েছে তাতে, গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকী, হান জুনয়েই-এর শরীরে কোন যন্ত্র বা মাইক্রোচিপ লুকোনো থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তার বডি স্ক্যান করানো হবে বলে জানা গিয়েছে। সেইসঙ্গে হবে করোনা পরীক্ষাও। এখনও পর্যন্ত তদন্তকারীরা যেটা জানতে পেরেছেন, হান জুনয়েই চিনা সামরিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষায় স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছে। তবে এই চিনা যুবকের শুধু ম্যান্ডারিন ও ইংরাজি নয়, আরও বেশ কয়েকটি ভাষায় দখল রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ভারতে ব্লু কর্নার নোটিশ জারি থাকায় চিনা নাগরিকদের পক্ষে সহজে ভিসা পাওয়া সম্ভব নয়। তা বুঝেই যে সে বাংলাদেশ হয়ে এদেশে ঢোকার ছক কষেছিল, সেই সম্পর্কে নিশ্চিত তাঁরা।
ইতিমধ্যেই মালদহের পুলিশ সুপার-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্তা ধৃত চিনা যুবককে জেরা করেছেন। কিন্তু, তাদের একেকজনকে একেক কথা বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে সে। কখনও সে বলছে এক পুরোনো মামলার বিষয়ে লখনউ-এ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনী বা এটিএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করার উদ্দেশ্যেই সে ভারতে এসেছে। আবার কখনও বলছে ভুল করে, না বুঝতে না পেরে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে এই দেশে ঢুকে পড়েছিল সে। সব তথ্য খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা মনে করছেন, এখনও পর্যন্ত সে যে সব তথ্য দিয়েছে, তার একটিও সঠিক নয়।
আরও পড়ুন - চিনা যুবক অনুপ্রবেশের ঘটনায় তদন্তের হাত বদল - দায়িত্ব নিল STF, ক্রমে ঘনাচ্ছে রহস্য
আরও পড়ুন - আজ বিশ্ব বায়ু দিবস - কেন এই দিনটি পালন করা হয়, জেনে নিন এর ইতিহাস ও গুরুত্ব
গত বৃহস্পতিবার, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিল সে। ভোর ৬টা নাগাদ, ওই চিনা নাগররিক, বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতেই ১৫৯ এফ কয় শিবিরের বিএসএফ জওয়ানরা তাকে ধরে ফেলেছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা ওই চিনা নাগরিককে তুলে দিয়েছিল পুলিশের হাতে। তার কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল একটি ল্যাপটপ, একটি আইফোন-সহ তিনটি মোবাইল ফোন, প্রচুর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী টাকা, মার্কিন ডলার, একটি চাইনিজ পাসপোর্ট (বাংলাদেশী ভিসা-সহ), এবং বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক গ্যাজেট।