নেই রাজত্ব, দশমীর দিন রাজবেশে সিংহাসনে বসেন রাজাহেঁসলার বর্তমান রাজা

সুদূর রাজস্থান থেকে এমনই এক হিন্দু রাজপুত রাজা এসেছিলেন পুরুলিয়ার ঝালদা থানার এই দুর্গম অঞ্চলে। চারিদিকে উঁচু নিচু পাহাড় ও গভীর জঙ্গলে ঘেরা হেঁসলা গ্রামে। সেই রাজা ছিলেন দ্বিগ্বিজয় প্রতাপ সিংহ দেও।

Asianet News Bangla | Published : Sep 20, 2021 2:59 PM IST

রাজত্ব এবং শাসন বহুকাল আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তবু রাজ ঐতিহ্যে সেজে উঠছে রাজবাড়ির দুর্গা পুজো। পুরুলিয়ার ঝালদা থানার দুর্গম পাহাড় জঙ্গল ঘেরা রাজাহেঁসলা গ্রাম। যে গ্রামের রাজ পরিবারের দুর্গাপুজোতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। 

এই দুর্গা পুজো শুরু হয়েছিল প্রায় ১২০০ বছর আগে। মুঘলদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তৎকালীন বেশিরভাগ হিন্দু রাজা আত্মগোপন করেছিলেন। নিজের প্রাণ ও মহিলাদের সম্ভ্রম বাঁচাতেই আত্মগোপনের পথ নিয়েছিলেন অনেকেই। পাড়ি দিয়েছিলেন পশ্চিম ভারত থেকে পূর্ব ভারতের গভীর অরণ্যের আদিবাসী উপত্যকায়। সুদূর রাজস্থান থেকে এমনই এক হিন্দু রাজপুত রাজা এসেছিলেন পুরুলিয়ার ঝালদা থানার এই দুর্গম অঞ্চলে। চারিদিকে উঁচু নিচু পাহাড় ও গভীর জঙ্গলে ঘেরা হেঁসলা গ্রামে। সেই রাজা ছিলেন দ্বিগ্বিজয় প্রতাপ সিংহ দেও। পাহাড় জঙ্গল কেটে তৈরি করেন রাজপ্রাসাদ, ধীরে ধীরে এলাকায় রাজত্ব বিস্তার করেছিলেন তিনি। সেই সময় থেকে গ্রামের নাম রাজাহেঁসলা বলে পরিচিতি পায়। তখন এই দুর্গম অঞ্চলের আদিবাসীরা ওই রাজার সঙ্গে সংঘাতে পরাজিত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল। মোট ২৪ টি মৌজার দখলদারী পান দ্বিগ্বিজয়। তৈরি করেছিলেন কাছারি, বাগানবাড়ি, নাটমহল, ঠাকুর দালান ও ১২টি পুকুর। 

আরও পড়ুন- Durga Puja: ২৫০ বছর পুরোনো বর্ধমানের দে পরিবারে হরগৌরী রূপে পূজিত হন দেবী দুর্গা

আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর আগে রাজার তৈরি ওই ঠাকুর দালানে শক্তির দেবী হিসেবে মা দুর্গার পুজো শুরু হয়েছিল। প্রথমে শক্তি রূপে দেবীর খড়্গ পুজো শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে পুরুলিয়ার প্রাচীন সংস্কৃতি ছৌ নাচকে অনুসরণ করে দেবী দুর্গার মূর্তি পুজো শুরু হয়েছিল। রাজবাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে পাহাড়ি ঝর্না হেঁসলা নদী থেকে দেবী দুর্গার ঘট আনা হয়। ঘটা করে ঢাক বাদ্যের সঙ্গে বন্দুক চালিয়ে রাজা ওই নদীতে ডুব দিয়ে ঘট আনতেন। বর্তমানেও সেই একই রকম প্রথা চালু আছে। তবে বন্দুকের গুলির বদলে এখন হয় শব্দবাজী। 

আরও পড়ুন- মহালয়ায় কড়া টক্কর, কোন চ্যানেলে দেবীরূপ কোন তিন টলিডিভা, মহামায়া লুকে কে কোথায়

আগে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলত ছাগল ও মোষ বলি।এখন আর বলি হয় না। তবে দুর্গার পুজো সেই প্রাচীন বৈদিক রীতি মেনেই হয়। সেদিনের সেই রাজা কিংবা তাঁর রাজত্ব এখন আর কোনওটাই নেই। আছে শুধু রাজপ্রাসাদ, কাছারিবাড়ি, ঠাকুর দালান এবং নাটমহল। ওই বড়িগুলিও বর্তমানে জরাজীর্ণ। রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের কেউই এখন আর এখানে থাকেন না। শুধু একজন কেয়ারটেকার ওই ভগ্নপ্রায় বাড়ির দেখভাল করেন। 

বর্তমানে পুজোর সব আয়োজন করেন গ্রামবাসীরাই। পুজোর সময় আবার নতুন করে সেজে উঠে এই রাজপ্রাসাদ। যদিও বর্তমান দিনে এলাকায় আরও অনেক দুর্গা পুজোই হয়। তবুও এলাকার মানুষ ভিড় জমান এই রাজবাড়িতে। প্রাচীন দুর্গা পুজো হিসেবে ভক্তরা পুজো দিতে আসেন এখানেই। এই রাজবংশের বর্তমান প্রজন্ম বছরের অন্য সময় যেখানেই থাকুন না কেন  দুর্গা পুজোর সময় সকলেই এখানে এসে উপস্থিত হন। মহাসমারোহ ও ধুমধাম করে চলে পুজো পাট। 

আরও পড়ুন- ভুরিভোজ ছাড়া বাঙালির দুর্গাপুজো অসম্পূর্ণ পুজোয় বাঙালির সেরা পাঁচ পেটপুজো তালিকা

এই পুজোর গুরুত্ব হচ্ছে বর্তমান রাজা কন্দর্প নারায়ণ সিং দেও। দশমীর দিন একদিনের রাজা সেজে সিংহাসনে বসেন তিনি। প্রজারা এসে তাঁকে প্রণাম করেন। রাজা প্রজাদের মিষ্টি মুখ করান। সে দিনেই যেন পুরনো রাজতন্ত্র ফিরে আসে রাজা হেঁসলা গ্রামে। তবে রাজার আক্ষেপ এবার রাজবাড়ির দুর্গা পুজোর সরকারী অনুমোদন মেলেনি। তাই ক্ষুব্ধ রাজা সহ রাজবংশের সদস্যরা। 

BJP Leader Anupam Hazra attack TMC after Babul Supriyo joins TMC RTB

Share this article
click me!