Roundup 2021: বাংলার দলবদলের রাজনীতি, হারিয়ে দিয়েছে সার্কাসের ট্রাপিজের খেলাকেও


বিধানসভা ভোটের আগে মোদী- অমিত শাহর এই রাজ্যে আসা যাওয়া বেড়েছিল। গেরুয়া শিবিরও পাখির চোখ করেছিল বঙ্গ বিধানসভাসভাকে। সেইমত সাজানো হয়েছি ভোটের-গুটি। 

Web Desk - ANB | Published : Dec 30, 2021 12:48 PM IST / Updated: Dec 30 2021, 06:31 PM IST

'উল্টে দেখুন পাল্টে গেছে'- অনেকটা এমনই ছিল চলতি বছর রাজ্যের দলবদলের রাজনীতি (Bengal Politics)। কে কবে কোন দলের পতাকা হাতে তুলে নিচ্ছেন আর কোন দল ছাড়ছেন তার হিসেব রাখা একটু হলেও কঠিন হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের মানুষের কাছে। রাজ্য বিধানসভা ভোট ২০২১ (Assembly Election 2021) -এর আগে এই দলবদলের পালা শুরু হয়েছিল তা অব্যাহত রয়েছে এখনও। কারণ  বিধানসভা ভোটে জেতার মাত্র সাত মাসের মধ্যে বিরোধী দল বিজেপির সংখ্যা ৭৭ থেকে নেমে গেছে ৭০-এ।  আগামী দিনে বিজেপির শক্তি আরও ক্ষয় হবে বলেও আশঙ্কা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। 

বিধানসভা ভোটের আগে মোদী- অমিত শাহর এই রাজ্যে আসা যাওয়া বেড়েছিল। গেরুয়া শিবিরও পাখির চোখ করেছিল বঙ্গ বিধানসভাসভাকে। সেইমত সাজানো হয়েছি ভোটের-গুটি। গোটা রাজ্যের নির্বাচনী প্রচারে দেখা গিয়েছিল গেরুয়া ঝড়। বিজেপির হাইপ্রোফাইল নেতারা চষে ফেলেছিলেন বাংলার শহর থেকে গ্রাম। সেই সময় বিজেপির পালে হাওয়া লাগে, অন্যদিকে ভাঙতে শুরু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের ঘর। এমন অনেক তৃণমূল নেতা ছিলেন যারা বিজেপি ক্ষমতায় আসবে বলে রাতারাতি ঘাসফুল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন মমতার বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিপুল ভোট পেয়ে ফিরে আসায় ঝাঁকের কই-রা আবার ঝাঁকে ফিরতে শুরু করে। সম্প্রতী সৌগত রায় বলেছেন যে তৃণমূল কংগ্রস যদি দরজা খুলে দেয় রাতারাতি একগুচ্ছ নেতৃা আবারও তৃণমূলে ফিরে আসবে। তবে বিধানসভা ভোটের আগে দলবদলের আরও একটা বড় কারণ ছিল তার পর ছিল টিকিট না পাওয়ার দুঃখ। সেই তালিকা মমতার এককালের ঘনিষ্ট সহযোগী সোনালি গুহ  যেমন ছিলেন তেমনই রয়েছে মঞ্জুল কৃষ্ণঠাকুরের ছেলে সুব্রত ঠাকুর। যদিও লোকসভা ভোটের আগে থেকেই ঠাকুর পরিবারে শুরু হয়েগিয়েছিল রাজনৈতিক ভাঙন। সম্প্রতী সুব্রত ঠাকুরের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ আবারও নতুন করে জল্পনা উস্কে দিচ্ছে। 

তবে তৃণমূলে সবথেকে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। দুজনেই মমতার মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। রাজীব ঘরে ফিরলেও এখনও বিজেপিতে রয়েছেন শুভেন্দু। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত তার কতগুলি কারণ রয়েছে। এক তিনি বিরোধী দলের নেতা। মমতাকে নন্দীগ্রাম থেকে হারানোয় প্রধানমন্ত্রী মোদী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের কাছে এখনও বাড়তি গুরুত্ব পান তিনি। অন্য একটা কারণ অবশ্যই নারদকাণ্ড। দল ছাড়লে আবারও ডাক পড়তে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। যাইহোক সবমিলিয়ে তিনি রয়েগেছেন তৃণমূলের। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে তাঁর ক্ষমতার টানাপোড়েনও শুভেন্দুর দল বদলের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

অন্যদিকে বুকে মমতার ছবি নিয়ে মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম লিখিয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরে। সেই তিনি কিন্তু ভোটে হারের পর পুরোপুরি নিশ্চুপ হয়ে যান। তারপর সুযোগ বুঝে আবার ঝাঁকের কই ঝাঁকে ফিরে যাওয়ার মত তিনিও ফিরে গেছেন তৃণমূলের। তেমনই সোনালি গুহ সহ অনেকেই ফিরে গেছেন তৃণমূলে। বর্তমানে ত্রিপুরার নিয়ে ব্যস্ত রাজীব।  

তবে দলবদলে নজর কেড়েছেন মুকুল রায়। বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণনগর থেকে জিতেও তিনি ফিরে যান তৃণমূলে। যদিও রাজনৈতিক মহলের ধারনা নারদকাণ্ডে তাঁকে টোপ করেছিল বিজেপি। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার চোখরাঙানি দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য করেছিল।  তবে মুকুলের হাত ধরেও একটা সময় শক্তিশালী হয়েছিল বিজেপি। শীলভদ্র থেকে শুভেন্দু সকলের দল বদলের চিত্রনাট্য নাকি লেখা হয়েছিল মুকুল রায়ের হাত ধরে। কিন্তু এখনও মুকুলকে বলতে হচ্ছে তিনি বিজেপিতেই রয়েছেন। যাইহোক  বিধানসভায় শূন্য হয়ে যাওয়া বাম ও কংগ্রেস মাঝে মাঝেই সমালোচনা করে যা তৃণমূল তাই বিজেপি। 
 
উত্তরবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে জোর ধাক্কা দিয়ে নিশীথ প্রামানিক এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তৃণমূল ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে এসেছিলেন তিনি। বিধানসভা ভোটের আগে  রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে ক্ষমতার টানাপোড়েনের কারণে তিনি দল বদল করেন। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বিধাননগর পুরসভার প্রাক্তন মেয়ক সব্যসাচী দত্ত ভোটের কিছুদিন আগেই দল বদল করেন। কিন্তু বিজেপি হেরে যাওয়ার পর তিনিও প্রত্যাবর্তন করেন। তবে এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের কোনও পদ তিনি পাননি। তাঁর জায়গা দখল করে বসে রয়েছেন মন্ত্রী সুজিত বসু।  

সিঙ্গুর আন্দোলনের মাস্টারমশাই- যিনি মমতার হাত ধরেই বিধানসভায় পা রেখেছিলেন তিনিও টিকিট না পেয়ে দল বদল করে চলে যান গেরুয়া শিবিরে। কিন্তু সেখানে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। হেরে যান এককালের দলীয় সহকর্মী বেচারাম মান্নার কাছে। তবে তার পর আর তেমনভাবে বিজেপির ঘরে দেখা যায়নি নবতিপর এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। 

তবে সুজাতা খান আর সৌমিত্র খানের কথাও বলা দরকার। কারণ স্বামীস্ত্রী দুই যুযুধান দলের নেতা বর্তমানে। ভোটের আগে সকলে যখন তৃণমূলে যাচ্ছিল তখন সুজাত স্রোতের বিপরীতে হেঁটে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসেন। যাই হোক হারুন বা জিতুন কর্তা-গিন্নি কিন্তু এখনও দল বদল করেননি। 

অন্যদিকে শোভন ও বৈশাখী, বিধানসভা ভোটের অনেক আগেই তাঁরা নাটকীয় ভাবে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর তেমন সক্রিয়াভাবে তাদের দেখা যায়নি। কিন্তু ভোটের আগে বিজেপির জাতীয় স্তরের নেতারা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁকে টিকিটও দেওয়া হয়। কিন্তু বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে টিকিট দেওয়া হয়নি। তাই গোঁসা করে তাঁরা নাটকীয়ভাবেই বিজেপি ছেড়ে দেন। কিন্তু শোভনের ফেলে যাওয়া আসন থেকে প্রার্থী হয়ে বিধানসভায় গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়।

কংগ্রেস ও বামের ঘরে ভাঙন অব্যাহত ছিল। এক রিঙ্কু নস্কর ছাড়া ভোটের আগে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে তেমন দলবদল দেখা যায়নি। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী শিষ্য হয়ে বাম ছেড়ে রাম হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভোটের বাজারে গুরু-শিষ্য কারো ভাগ্যেই শিকে ছেঁড়েনি। 

Share this article
click me!