Roundup 2021 : তৃণমূলের 'ভুল'-এর সুযোগ নিয়েই কী বঙ্গে বাড়বাড়ন্ত বিজেপির

Published : Dec 30, 2021, 06:07 PM IST
Roundup 2021 : তৃণমূলের 'ভুল'-এর সুযোগ নিয়েই কী বঙ্গে বাড়বাড়ন্ত বিজেপির

সংক্ষিপ্ত

বহুদিন ধরেই নিজেদের অন্দরে একটু একটু করে বিজেপি জমি শক্ত করেছে। তারপরই রাজ্যে প্রধান বিরোধী দলের জায়গা করতে পেরেছে গেরুয়া শিবির। দেখে নেওয়া যাক বাংলায় বিজেপির এত রমরমা কেন হল? ও কীভাবে হল?

তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর প্রধান বিরোধী দল বলতে ছিল বামেরা। কিন্তু, ধীরে ধীরে সেই ছবিটা বদলাতে শুরু করে। এখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হল বিজেপি। একটা সময় রাজ্যে বিজেপির তেমন কোনও অস্তিত্বই ছিল না। কিন্তু, বিজেপি বাংলার জমিতে খুব একটা সহজে রাতারাতি পা রাখতে পারেনি। বহুদিন ধরেই নিজেদের অন্দরে একটু একটু করে তারা জমি শক্ত করেছে। তারপরই রাজ্যে প্রধান বিরোধী দলের জায়গা করতে পেরেছে গেরুয়া শিবির। দেখে নেওয়া যাক বাংলায় বিজেপির এত রমরমা কেন হল? ও কীভাবে হল?

এক কথায় বলা যেতে পারে যে কার্যত বিজেপি শূন্য ছিল পশ্চিমবঙ্গ। একটিও বিধায়ক ছিল না। আর সেই নিরিখে এখন রাজ্যে বিজেপির বিধায়কের সংখ্যা অনেকটাই। লোকসভা নির্বাচনে ২০১৯ সালে বিজেপি ১৮টা আসন লাভ করেছে। প্রতিটি নির্বাচনেই ধীরে ধীরে নিজেদের অস্তিত্ব স্থাপন করেছে বিজেপি। তবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থানটা শুধুমাত্র ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের জন্যই হয়নি। শুধুমাত্র ধর্মীয় মেরুকরণের জন্য বা হিন্দুত্ববাদের জন্যও নয়। আসলে রাজ্যে বিজেপি-র উত্থানের মধ্যে এই বিষয়গুলি কিছুটা হলেও কাজ করছে। তবে শুধুমাত্র এগুলির জন্যই রাজ্যে বিজেপি দ্বিতীয় সারিতে দাঁড়িয়ে নেই।  

আরও পড়ুন- নির্বাচন থেকে শুরু করে দল বদল, ১ বছর ধরে যে সব ঘটনা ছিল আলোচনায়

এই মুহূর্তে রাজ্যে শাসন করছে তৃণমূল। টানা তিন বছর ধরে রাজ্য শাসনের ভার রয়েছে তাদের হাতেই। তার আগে সিপিএম ছিল ক্ষমতায়। সেই সময় অবশ্য বিরোধী দল ছিল কংগ্রেস। তারপর ধীরে ধীরে রাজ্যে তৃণমূলের উত্থান হয়। সেই সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসে তারা। আর এখন তৃণমূলের শাসনকালে প্রথমে বামেরা ও পরে কংগ্রেস বিরোধী দলের জায়গা নেয়। আসলে রাজ্য রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের মন থেকে একটু একটু করে আস্থা হারাচ্ছিল সিপিএম ও কংগ্রেস। কারণ তাদের শাসনকালে কী কী হতে পারে অনেকটাই মানুষের জানা হয়ে গিয়েছিল। আর ঠিক সেই সময়ই রাজ্যে মাথাচারা দিয়ে ওঠে বিজেপি। ২০১৯-এ সিপিএমের একটা বড় অংশের ভোট বিজেপিতে চলে যায়। কংগ্রেস ও সিপিএমের সেই শূন‍্য স্থানটা সুন্দরভাবে দখল করে নিয়েছিল বিজেপি। তবে শুধু বাম বা কংগ্রেসই নয়, তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধিও বিজেপির বাড়বাড়ন্তের সহায়ক হয়েছে। তবে সেই অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানির সময় থেকেই বিজেপির বাংলা দখলের ইচ্ছে ছিল। অবশেষে ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় থেকে রাজ্যে একটু বেশি করে গুরুত্ব পেতে শুরু করে বিজেপি। আর সেই অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছেন অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদী। আর কিছুটা হলেও দিলীপ ঘোষ। 

আরও পড়ুন- রাজ্যে কয়লা কেলেঙ্কারি সহ একাধিক মামলায় CBI-ED, একুশে ভুগতে হল কোন নেতা-মন্ত্রীদের
 
২০১৪ সালের ৯ আগস্ট। বিজেপির পুনরুত্থানে এক নতুন পর্বের সূচনার দিন। সেই দিনটা ছিল ২০১৪-র বিজয়ের পর আয়োজিত প্রথম জাতীয় কার্যনির্বাহী সমিতির বৈঠকের প্রথম দিন। অমিত শাহ-কে দলের সভাপতি নির্বাচিত করার ব‍্যাপারে বিজেপির সংসদীয় দল সবুজ সংকেত আগেই দিয়ে দিয়েছিল। সেদিন, ওই বৈঠকে সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়া হয়েছিল। সেই তখন থেকেই একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন মোদী-শাহ। আসলে সেদিন অমিত শাহের ভাষণ দেশের মানুষের মন জয় করে নিয়েছিল। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ তাঁদের উপর আস্থা রাখতে শুরু করেছিলেন। এরপর প্রতিটি রাজ্যেই নিজেদের সংগঠনকে বাড়ানোর কাজ শুরু করেন তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণ ভারত এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল সব জায়গাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন ভাবে নিজেদের দলকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে হোয়াটসঅ্যাপ সহ বিভিন্ন জায়গাতেই নিজেদের প্রতিপত্তি স্থাপন করতে লেগে পড়েছিলেন তাঁরা।

পশ্চিমবঙ্গ দখল করার জন্য অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছিল বিজেপি। জেলায় জেলায় আরএসএসের নানা সংগঠন, বনবাসী সমিতি, আরএসএসের শিক্ষা সংগঠন কাজ করছিল। রাজ্যে একের পর এক মমতার 'ভুল' কে মূলধন করে এগিয়েছে তারা। তার প্রথমেই ছিল চাকরি। কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে স্কুল সার্ভিস কমিশনে ৩ লাখ পরীক্ষার্থীদের ক্ষোভ থেকে শুরু করে বাংলায় ধুঁকে পড়া শিল্পকে সামনে রেখে বিজেপি বঙ্গ অভিযানে নামে। পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রেই বিজেপিকে রাস্তা করে দিয়েছিল তৃণমূল। ভোটের আগে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও কাঠমানি প্রসঙ্গ সামনে চলে এসেছিল। আর সেগুলিকে হাতিয়ার করেই অভিযান চালিয়েছিল বিজেপি। এছাড়া ভোটের সময় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও বিজেপিকে সুবিধা করে দিয়েছিল তৃণমূল। যুব ভোট টার্গেট করে, ও দলীয় কোন্দল ঘোচাতে তৃণমূল যুব সমাজ থেকে বহু অভিনেতা অভিনেত্রীদের দলে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, সেই বিষয়টা কোথাও যেন মেনে নিতে পারেননি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসা দলের বর্ষীয়ান নেতারা। এমনকী, ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের দাপটও অনেকে মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁদের কথায়, 'তৃণমূল সুপ্রিমো অনেক কথাই বলতে পারেন। তাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু, কী প্রশান্ত কিশোর কেন বলবেন? এতদিন দলের জন্য কাজ করে ভোটে জিতেছেন। এখন প্রশান্ত কিশোরের কথা শুনতে হবে!' সেই কারণে ভোটের আগে দল ছেড়ে ছিলেন অনেকেই। আর সেই জায়গাকেই হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। সেই সব তাবড় নেতাদের নিজেদের দলে টেনে নিয়েছিল তারা। যার কারণে রাজ্যে বিজেপির রমরমা অনেকটাই বেড়ে যায়। আবার ভোটের অনেক আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে একাধিক মন্তব্য করতে দেখা যেত দিলীপ ঘোষকে। তাঁর সেই বক্তব্যও যুব সমাজকে আকৃষ্ট করেছিল। এভাবেই একটু একটু করে রাজ্যে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে তারা। 

আরও পড়ুন- বারেবারে মুখ থুবড়ে পড়ছে বামেরা, ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’ পালে হাওয়া লেগেও শূন্য কেন ভোট বাক্স

রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের আরও একটি প্রধান বিষয় হল অন‍্য কোনও রাজনৈতিক বিকল্প না থাকা। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সব মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারেননি। আর সেই কারণে বহু মানুষ তাঁর উপর ক্ষুব্ধ রয়েছেন। কিন্তু, এই পটভূমিতে অন‍্য কোনও রাজনৈতিক বিকল্প না থাকার কারণেই বিজেপিকে গ্রহণ করার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। সিপিএম যখন শাসক দল ছিল, তখন তৃণমূল ছিল বিকল্প। এখন বিজেপি সেই বিকল্পের জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে। আসলে রাজ্যের মানুষ এত তাড়াতাড়ি আর বামেদের উপর ভরসা করতে চাইছেন না। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই রাজ্যে বিজেপির প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হচ্ছে। 

PREV
Read more Articles on
click me!

Recommended Stories

Suvendu Adhikari: ওয়াকফ ইস্যুতে মমতাকে একহাত নিলেন শুভেন্দু! সব প্রমাণ ফাঁস করলেন আজ
Arjun Singh: খড়দহে BLO-র বাড়িতে হামলা, সরাসরি তৃণমূলকে দায়ী অর্জুন সিংয়ের