বুথে এক টাকা ফেললেই হাতে মিলবে স্যানিটারি ন্যাপকিন। বিষয়টা যেন ভাবনারও অতীত।
বলিউড তারকা অক্ষয় কুমার তার 'প্যাড ম্যান' ছবিতে গ্রামীণ মেয়েদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতন করতে অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছিল। আর এবার একদল গ্রামীণ পড়ুয়া সেই অসাধ্য সাধন করতে বাস্তবে নিজেরাই সচেতনতা বাড়াতে এগিয়ে এল। শুরুতে অবশ্য কাছে ঘেঁষতেই মনে যেন একটা ইতঃস্তত ভাব ছিল। তবে ক্রমশ সে জড়তা কাটিয়ে সচেতন হয়েই দিব্যি বিদ্যালয়ের(School) ভিতরের ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের(Sanitary Pad Vending machine) সামনে জড়ো হচ্ছে হচ্ছে ওই ছাত্রীরা (Girls)।
বুথে এক টাকা ফেললেই হাতে মিলবে স্যানিটারি ন্যাপকিন। এই প্রচলন খুব বেশি দেখা মেলে না কোনও এঁদো গ্রামে। তাও আবার বিদ্যালয়ে! বিষয়টা যেন ভাবনারও অতীত। মেয়েদের স্বাস্থ্য-হাইজিনের কথা ভেবে এগিয়ে এসেছে মুর্শিদাবাদ সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকার লস্করপুর হাই স্কুল। তাই বিদ্যালয়েই পড়ুয়াদের জন্য ভেন্ডিং মেশিনের এই ব্যবস্থা চালু করতেই তা সাড়া ফেলে দিয়েছে গ্রামের পড়ুয়াদের মধ্যে।
এই ব্যাপারে স্থানীয় বিডিও বলছেন,"বিদ্যালয়ে স্যানিটারী ভেন্ডিং মেশিন বসানো একটি আধুনিক মনস্কতার পরিচয়, এই ব্যবস্থার ফলে মেয়েরা রোগ-জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাবে ও বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি লাভ করবে"। মুর্শিদাবাদের এক প্রত্যন্ত গ্রাম লস্করপুর। এখনও ধুলো-মাটির রাস্তা পেরিয়েই ছেলে-মেয়েদের স্কুল মুখী হতে হয়। এলাকার বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা দিন মজুর কিংবা রাজমিস্ত্রির। ফলে সাবালক হওয়ার আগেই ছেলেরা রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয়। মহিলারদের ক্ষেত্রে বিয়ে হয় নাবালিকা বেলাতেই।
এহেন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যে এলাকার মানুষকে দিশা দেখাচ্ছে লস্করপুর হাই স্কুল। প্রায় বারোশোর ওপরে ছাত্র এবং দুই হাজারের এর ওপর ছাত্রী নিয়ে চলা এই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু মাত্র ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দান করেই কর্তব্যে ইতি টানেননি। এলাকার সামাজিক উন্নয়নে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণও করেছে তারা। বছর কয়েক আগে বাজার থেকে স্যানিটারী ন্যাপকিন কিনে এনে প্রয়োজনে স্কুল মেট্রোনের হাত দিয়ে তা ছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হত। তাতেই কিছু বিড়ম্বনা লক্ষ্য করা যায়। সে কথা মাথায় রেখে এবার বিদ্যালয়েই বসানো হল স্যানিটারী ভেন্ডিং মেশিন। এই মেশিনে দুই টাকার কয়েন ফেললেই নিঃশব্দে মিলবে এক একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন।
এই ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ছাত্রী বিউটি খাতুন,সুনিতা প্রামানিক,সাবনাম রহমানেরা বলেন, এতদিন যে ব্যবস্থা স্কুলে চালু ছিল তাতে লজ্জায় পরে হয় বাড়ী চলে যেতে হত ,কিংবা সমস্যার কথা গোপন রেখে স্কুলে বসে থাকতে হত। কিন্তু এই ব্যবস্থা চালু হবার ফলে আর কোন সমস্যা থাকল না"।
এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলছেন,"মেয়েদের অসুবিধার কথা ভেবে এবং পঠন-পাঠনে যাতে কোন সমস্যা না হয় তার জন্য স্যানিটারী ন্যাপকিন স্কুলের মেট্রোন কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রীর হাত দিয়ে ছাত্রীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হত,কিন্তু তাতেও কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় ভেন্ডিং মেশিন বসানোর পরিকল্পনা করি, এর ফলে ওরা কোন সংকোচ ছাড়াই নিজেদের সমস্যার সমাধান করছে দিব্যি"।