চেন পেঁচিয়ে খুন, শিকার সাত মহিলা, বর্ধমানে গ্রেফতার সিরিয়াল কিলার

  • ২০১৩ থেকে সাত মহিলাকে খুন
  • চেন পেঁচিয়ে, মাথায় আঘাত করে হত্যা
  • অবশেষে পুলিশের জালে সিরিয়াল কিলার

debamoy ghosh | Published : Jun 3, 2019 3:45 AM IST / Updated: Jun 03 2019, 09:21 AM IST

পর পর মহিলা খুন। আর সেই সমস্ত খুনের ধরনও এক। হয় গলায় চেন জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা, আর তা না হলে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন। গত কয়েক বছর ধরে পূর্ব বর্ধমানের কালনা এবং হুগলির পাণ্ডুয়াতে এই কায়দাতেই বাড়িতে একা থাকা মহিলাদের টার্গেট করছিল এক সিরিয়াল কিলার। প্রায় ছ' বছরের চেষ্টার পরে অবশেষে সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম কামরুজ্জামান সরকার। 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আদতে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা হলেও গত প্রায় পনেরো বছর ধরে বর্ধমানে যাতায়াত রয়েছে অভিযুক্তের। বর্ধমানেই বিয়ে হয়েছে তাঁর। দু' বছর আগে সমু্দ্রগড়ে বাড়িও তৈরি করেছে সে। বাড়িতে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে তিন সন্তান। তার পরেও অভিযুক্ত কেন পর পর এভাবে মহিলাদের টার্গেট করত, তা এখনও তদন্তকারীদের কাছে স্পষ্ট নয়। 

জানা গিয়েছে, গত ছয় বছরে মোট এগারো জন মহিলাকে খুনের চেষ্টা করেছেন কামরুজ্জামান। তাঁদের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, চারজন প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। যাঁরা বেঁচে যান, তাঁদের থেকে আততায়ীর চেহারার বর্ণনা নিয়ে স্কেচ আঁকায় পুলিশ। পাশাপাশি শেষ একটি ঘটনায় হামলা চালিয়ে পালানোর সময় কামরুজ্জামানের ছবি ধরা পড়ে গিয়েছিল সিসিটিভি-তে। সেই ছবি রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলেন্টিয়ারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। রবিবার কালনায় বাইক চড়ে যাওয়ার সময় ছবির সঙ্গে মিল পেয়ে এক সিভিক ভলান্টিয়ারই কামরুজ্জামানকে চিনতে পেরে আটকান। তার ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় চেন এবং শাবল। এর পর খবর পেয়ে কালনা থানার পুলিশে এসে অভিযুক্তকে আটক করে নিয়ে যায়। সূত্রের খবর, জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে অভিযুক্ত। 

 

 

পুলিশ সূ্ত্রে খবর ২০১৩ সালে প্রথমবার বর্ধমানের মন্তেশ্বর এবং ধাত্রীগ্রামে দুই মহিলা খুন হন। বাড়ি থেকেই তাঁদের উদ্ধার হয়। দু' টি ক্ষেত্রেই দেহের পাশে পড়েছিল চেন। তার পরে মন্তেশ্বরে আরও এক মহিলা ওই বছরই আক্রান্ত হন। কিন্তু বাধা দিয়ে কোনওক্রমে বেঁচে যান তিনি। এর পরে বেশ কয়েক বছর চুপচাপই ছিল আততায়ী। কিন্তু এবছর জানুয়ারি থেকেই ফের একই কায়দায় পরের পর মহিলাদের উপরে হামলা শুরু হয়। জানুয়ারিতে কালনায় খুন হওয়া এক মহিলার দেহের পাশ থেকে চেন উদ্ধার হয়। কয়েকদিন পরে ফের হাটকাললনায় এক প্রৌঢ়ার উপরে হামলা চালালেও বরাতজোরে প্রাণে বাঁচেন তিনি। পুলিশকে তিনি জানান, লাল মোটরবাইকে চড়ে এসে মিটার পরীক্ষা করার কথা বলে বাড়িতে ঢুকেছিল আততায়ী। তার পরেই গলায় চেন জড়িয়ে ধরে সে। জানুয়ারিতে আনুখালে ফের এক মহিলা একইন কায়দায় খুন হন। মার্চে আবার কালনায় এক গৃহবধবূর উপরে হামলা চালায় আততায়ী। এ ক্ষেত্রেও মিটার পরীক্ষার নাম করে বাড়িতে ঢোকে সে। 

এর পরেই এলাকায় নজরদারি বাড়ায় পুলিশ। যে দোকানগুলিতে চেন বিক্রি হয়, সেখানেও নজর রাখা হয়। তার পরেই চেন ছেড়ে ভারী অস্ত্র দিয়ে মহিলাদের আঘাত করতে শুরু করে আততায়ী। এপ্রিল মাসে একই দিনে মেমারির দুই গ্রামে এক কায়দায় খুন করা হয় দুই মহিলাকে। দু' ক্ষেত্রেই মৃতদের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। কয়েকদিনের ব্যবধানে বর্ধমানে আরও দুই মহিলার উপরে হামলা চালায় আততায়ী। তার মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। 

শেষবার হামলা চালানোর সময়ই সন্দেহভাজন আততায়ীর ছবি সিসিটিভত-তে ধরা পড়ে যায়। তার সঙ্গেই মিল পেয়ে রবিবার কামরুজ্জামানকে প্রথমে আটক করা হয়। পরে থানায় নিয়ে গিয়ে জেরা করার সে খুন করার কথা স্বীকারও করে নেয়। কিন্তু অচেনা মহিলাদের কেন এভাবে খুন করত কামরুজ্জামান? তদন্তকারীদের অনুমান, পুরনো কোনও সম্পর্কের ধাক্কা থেকেই মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে ওই ব্যক্তি। তার থেকেই মহিলাদের উপরে আক্রোশ জন্মাতে পারে। জেরা কামরুজ্জামানের দাবি, সে নিজেও জানে না সে কেন খুন করত। তবে এখনই অভিযুক্তের কথা বিশ্বাস না করে তাকে আরও জেরা করে সমস্ত সম্ভাবনার কথাই খতিয়ে দেখতে চান তদন্তকারীরা। 
 

Share this article
click me!