বাগুইআটির মতই পুলিশ নিস্ক্রীয় গোলাবাড়িতে? ১৫ বছর ধরে সন্তান শোকে কাতর ১৪ অভিভাবক

১৫ বছর ধরে হারিয়ে যাওয়া ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুণছেন  মা । বাবা আজও হন্যে  হয়ে খুঁজে চলেছেন তার পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটিকে । দুপুরে ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের কলের থেকে জল আনতে গিয়েছিল ছেলেটি । তারপর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি ছেলের ।

Saborni Mitra | Published : Sep 8, 2022 2:12 PM IST / Updated: Sep 08 2022, 07:49 PM IST

১৫ বছর ধরে হারিয়ে যাওয়া ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুণছেন  মা । বাবা আজও হন্যে  হয়ে খুঁজে চলেছেন তার পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটিকে । দুপুরে ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের কলের থেকে জল আনতে গিয়েছিল ছেলেটি । তারপর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি ছেলের । শুধু এই একটি ঘটনা নয়, এ ধরনের মোট ১৪টি শিশু নিখোঁজের ঘটনায় ঘটে হাওড়া গোলাবাড়ি থানার অন্তর্গত পিলখানা অঞ্চলে । ২০০৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ১৪ টি বাচ্চা নিখোঁজ হয় ওই এলাকা থেকে । যাদের আজ পর্যন্ত কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি । অনেকেই মনে করেন এদের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে অন্তর রাজ্য পাচার চক্র  সক্রিয় ছিল । তবে সে বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কোন তথ্য বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি ।  বাগুইহাটি ঘটনার পরে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। একই রকম ভাবেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে পিলখানার এলাকা থেকে  ২০০৭ সালে নিখোঁজ শিশুর মা -বাবা ।

ঘটনার দিন সকালে নিজের সন্তানকে পরিবারের সদস্যদের হাতে দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়ে কাজে বেরিয়েছিলেন  পিলখানার বাসিন্দা অনিতা সাবরি। বাড়ি ফেরেন দুপুর ১ টা নাগাদ। বাড়ি ফিরে বাচ্ছাকে না দেখতে পেয়ে বাড়ির লোকেদের জিজ্ঞেস করেও কোনো সদুত্তর পান নি। তারপরে জানতে পারেন তাঁর বাচ্চাটির চাচি তাঁকে বাইরের চাঁপা কল থেকে জল আনতে পাঠিয়েছিলেন। এরপর আর কোনোদিন ঘরে ফেরেনি তাঁর ছেলে। তিনি অভিযোগ করে বলেন তাঁরা গরিব বলে তাঁদের অনেক হয়রানি হতে হয়েছে পুলিশের হাতে। তদন্ত হচ্ছে হবে করেই অনেক দিন কেটে গেল। কিন্তু এখনন পুলিশ প্রাশাসন ফিরিয়ে দিতে পারেনি তাঁর সন্তানকে। 

এখন তাঁর বয়স প্রায় কুড়ি বছর হবে বলেই দাবি করেন নিখোঁজ সন্তানের মা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছেও দরবার করেও খালি হাতেই ফিরতে হয় তাঁকে। তাঁর কথায় গরিব বলে শুধু চিৎকার আর দৌড়ঝাঁপ করে বসে যেতে হয়েছে। কোনোভাবেই ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে পারেননি-  এটাই তাঁর আক্ষেপ।

হারিয়ে যাওয়া শিশুটির বাবা মহম্মদ সাবির আনসারী মনে আক্ষেপ নিয়ে বলেন গরীবের বাচ্ছা চুরি হলে পুলিশের কিছু যায় আসে না। অথচ বড়োলোকের ছেলে হর্ষ লাখোটিয়া হত্যা মামলাতে পুলিশ সর্ব শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে। তিনি জোর গলাতে বলেন আজকেও মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিলে পুলিশ চাইলে একটা পথ নিশ্চই বড়োবেই। তাঁর বৃদ্ধ বয়সের ভরসা ছিল তাঁর সন্তান। আজকে তাঁর মতো আরও তেরোজন নিখোঁজ সন্তানের শেষ ভরসা  ভেঙে গেছে।

এই ঘটনায় অকৃতকার্যের পুরো দায়িত্ব পুলিশের ঘাড়েই চাপান বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই। তিনি বলেন পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ কোনোদিন ভেদ ভাবের উর্ধে উঠে কাজ করতে পারে নি। গরিব রিক্সাওয়ালা থেকে দিন আনি দিন খাওয়া লোকেদের জন্য পুলিশ নেই। অথচ বড়োলোকের ছেলে হর্ষ লাখোটিয়া নিখোঁজ হলে পুলিশ এমন তদন্ত শুরু করে যে কিডন্যাপার চাপে পরে তাঁকে মেরেই ফেলে। তিনি রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন এই রাজ্যে প্রভাবশালীর কুকুর চুরি হলে পুলিশ তদন্তে নেমে উদ্ধার করে ফেলে। তবে গরীবের বাচ্ছা হারালে সে বিচার পায় না।

তবে একটা একটা করে চোদ্দটি বাচ্ছা নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁদের মা বাবাদের খালি বুকে বেদনার খবর  রাখার মতো কেউ থাকে না। কেউ এসে দাঁড়ায় না তাঁদের পাশে। পুলিশ প্রশাসনের গা ছাড়া মনোভাবের ফলশ্রুতিতে আজও ঘরে ফেরা হয়নি পাঁচ বছর বয়সী শাকিল আনসারীর মতো অনেক ছোট্ট ফুলের মতো শিশুরা।

Share this article
click me!