স্কুলছুট পড়ুয়াদের ক্লাসে ফেরাতে অভিনব উদ্যোগ নিলেন শিক্ষকরা। স্কুল ছুট পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে ইন্দুটি ও আঁটিরা গ্রামে গিয়ে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। কেন তাঁরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না তা জানতে চান।
করোনাভাইরাসের (Coronavirus) জেরে বহু দিন বন্ধ ছিল স্কুল। প্রায় ২০ মাস পর খুলছে রাজ্যের সব স্কুল (State School)। তবে সব শ্রেণির ক্লাস (Class) এখনও শুরু হয়নি। শুধুমাত্র নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির (Class 9 to 12 school reopen) ক্লাস চলছে স্কুলে গিয়ে। আর বাকিদের ক্লাস এখনও বাড়িতে অনলাইনের (online Class) মাধ্যমে হচ্ছে। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকার ফলে অভাবের সংসারে হওয়া অনেক পড়ুয়াই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। বরং স্কুল বন্ধ থাকার এই সময়টা বিভিন্ন ধরনের কাজে যোগ দিয়েছে তারা। যার ফলে স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। এদিকে এখন স্কুল খুলে যাওয়ার পরও তারা আর পড়াশোনা করতে চাইছে না। বরং তাদের কাছে পড়াশোনার থেকে কাজটাই সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সব স্কুলের কাছেই এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এবার সেই সব পড়ুয়াকে স্কুলে ফেরাতে উদ্যোগী হলেন শিক্ষক শিক্ষিকারা (Teacher)।
পূর্ব বর্ধমানের রায়না ১ নম্বর ব্লকের বুজরুকদিঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা। করোনা আবহের মধ্যেই স্কুল চালু হয়েছে। নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছে স্কুলগুলিতে। এই বিদ্যালয়ে পাঠরত নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। বহু পড়ুয়াই এখন অনুপস্থিত (Absent) থাকে। তাই এবার সেই স্কুলছুট পড়ুয়াদের (School Dropout Student) ক্লাসে ফেরাতে অভিনব উদ্যোগ নিলেন শিক্ষকরা। স্কুল ছুট পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে ইন্দুটি ও আঁটিরা গ্রামে গিয়ে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। কেন তাঁরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না তা জানতে চান। বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধার কথাও শোনেন।
আরও পড়ুন- অভাবকে সঙ্গে নিয়ে বড় হওয়া, নিট পরীক্ষায় সফলদের বাড়ি গিয়ে সংবর্ধনা বিধায়কের
অভিভাবকদের বক্তব্য, বহুদিন ধরেই স্কুলে যেতে হয়নি পড়ুয়াদের। আর সেই কারণে এতদিন পরে তারা আর স্কুলে যেতে চাইছে না। সেটাই আসল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে হঠাৎ করে স্কুলে গিয়ে তাদের বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। এই চিন্তায় রয়েছে পড়ুয়ারা (Student)। অবশ্য, স্কুলে গেলে পড়ুয়াদের কোনও সমস্যাই হবে না বলে পড়ুয়াদের আশ্বস্ত করেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের থেকে আশ্বাস পেয়ে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাবেন বলে কথা দিয়েছেন অভিভাবকরা।
তবে শুধুমাত্র বর্ধমানেই নয়, এই ধরনের ঘটনা দেখা গিয়েছে উত্তর দিনাজপুরেও। উত্তর দিনাজপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক নিতাইচন্দ্র দাস জানিয়েছিলেন, শহর অঞ্চলে অধিকাংশ স্কুলেই উপস্থিতির হার প্রায় ১০০ শতাংশ। কিন্তু স্কুলছুলের সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলির জন্য। সেখানে অধিকাংশ স্কুল পড়ুয়া লকডাউনের (Lockdown) সময় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশুনাকে একপ্রকার বিদায় জানিয়ে রোজগারের জন্য চলে গেছে অন্যত্র। এই সমস্যা সমাধানে স্কুলের শিক্ষকদের বড় ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। প্রয়োজনে পড়ুয়াদের বাড়িতে গিয়েও কথা বলতে বলেছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। ইতিমধ্যেই সর্বশিক্ষা অভিযানের তরফে স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরাতে সমীক্ষা করা হচ্ছে। আর এবার স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরাতে বর্ধমানে উদ্যোগ নিতে দেখা গেল শিক্ষকদের।