ঘটনার ধারাবাহিকতা ধীরে ধীরে অনুব্রতের গ্রেফতারিতে ইন্ধন যোগায়। অনুব্রতকে গ্রেফতার করার পথটা গত বেশ কয়েক মাস ধরেই প্রশস্ত হচ্ছিল। যা বৃহস্পতিবার বাস্তবায়িত করলেন সিবিআই আধিকারিকরা।
হাতকড়া পরাটাই ভবিতব্য ছিল। গত কয়েক মাসের টানা পোড়েন অবশেষে শেষ হল সিবিআইয়ের হাতে অনুব্রত মন্ডলের গ্রেফতারি দিয়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বীরভূমের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রতকে। তারপরই দুর্গাপুর হয়ে তাঁকে নিয়ে আসা হয় আসানসোলে। সেখানে ইএসআই হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর অনুব্রতকে পেশ করা হয় আসানসোলের বিশেষ আদালতে। সিবিআই-এর পক্ষ থেকে অনুব্রতকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে নেওয়ার দাবি জানান হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর আদালত ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। সূত্রের খবর এদিন রাতেই অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে আসা হবে কলকাতার নিজাম প্যালেসে। সেখাই জেরা করা হবে তাঁকে।
অনুব্রতর গাড়িতে লালবাতি ও হাইকোর্ট
এপ্রিলের শেষের দিকে, অনুব্রতের গাড়িতে লাল বাতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের কড়া অবস্থান অনেকটাই কোণঠাসা করে কেষ্টকে। রাজনৈতিক নেতার কাছে লালবাতি লাগানো গাড়ি কেন? এই প্রশ্ন তুলেই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন বিজেপি মোর্চার সহ-সভাপতি তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। সেই মামলার শুনানিতে কড়া অবস্থান নেয় কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় যে রাজ্যকে জানাতে হবে কারা কারা লাল বাতি ও কালো কাঁচ ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছেন? কেন ব্যবহার করেন? এইসব ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ কী?
এসএসকেএম থেকে খালি হাতে ফেরেন কেষ্ট
গরু পাচারকাণ্ডে একাধিকবার তলব করা হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। একবার হাজিরা দিলেও একাধিকবার হাজিরা এড়িয়ে এসএসকেএম-র ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। যা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ ছিল এসএসকেএম দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের একটি নিরাপদ আশ্রয় স্থান হয়ে উঠেছে। নয় নম্বর হাজিরাও এড়িয়ে গিয়ে এসএসকেএমে ছোটেন কেষ্ট। তবে চিকিৎসকরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন আপাতত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। এতেও বেশ কিছুটা মুখ পোড়ে অনুব্রতর।
কেষ্ট ঘনিষ্ট টুলু মন্ডলের বাড়িতে ইডি
এদিকে, তার দিন কয়েক আগে, গরু পাচারকাণ্ডে অনুব্রত ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী টুলু মণ্ডলের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। সূত্রের খবর সেখান থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি আর নগদ টাকা উদ্ধার হয়। সেই কারণে অনুব্রত মণ্ডলকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সিবিআই।
অনুব্রতর নিরাপত্তারক্ষী সায়গল হোসেন গ্রেফতার
গরু পাচারকাণ্ডে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে। তাকেও জিজ্ঞাসাবদ করে বেশ কিছু তথ্য হাতে পান সিবিআই কর্তারা। সেই সূত্র ধরেই অনুব্রতকে তলব বলে সিবিআই সূত্রে খবর মেলে। তবে বেডরেস্টের অজুহাত দেখিয়ে দশম বার হাজিরাও এড়িয়ে যান তিনি।
সায়গলের সম্পত্তির খতিয়ান
গরু পাচারকাণ্ডে সায়গল হোসেনদের বিরুদ্ধে সিবিআই-এর চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের দাবি, এই সায়গল ছিলেন রাজ্য পুলিশের নিতান্ত নিম্ন পদস্থ এক কর্মী। অথচ তাঁর নামেই সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা! তার মধ্যে ৪টি ফ্ল্যাট ও ৫টি বাড়ি, নিউটাউনে রয়েছে ২টি নির্মীয়মাণ বাড়ি। পাশাপাশি বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে তাঁর নামে। সায়গলের গাড়ির সংখ্যাও নাকি তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। সিবিআইয়ের দাবি, ৩টি ১০ চাকার ট্রেলার, ১০টি গাড়ি রয়েছে সায়গল হোসেনের। ২টি পেট্রোল পাম্প, ক্র্যাশার মেশিনের সঙ্গে রয়েছে শত শত গ্রাম ওজনের সোনা। যদিও, সায়গলের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে পেশ করা চার্জসিটে সিবিআই লিখেছে মোট সাড়ে ৪ কোটি টাকা। এই তথ্যের তীব্র বিরোধিতা করেন সায়গল হোসেনের আইনজীবী।
এই সব ঘটনার ধারাবাহিকতা ধীরে ধীরে অনুব্রতের গ্রেফতারিতে ইন্ধন যোগায়। অনুব্রতকে গ্রেফতার করার পথটা গত বেশ কয়েক মাস ধরেই প্রশস্ত হচ্ছিল। যা বৃহস্পতিবার বাস্তবায়িত করলেন সিবিআই আধিকারিকরা।