মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেস আর বামেদের রং এখন ফিকে। আর সেটা দ্রুত বুঝে নিয়েই আগামী পুরভোটে গেরুয়া শিবিরের 'পদ্মকাঁটা' থেকে বাঁচতে নয়া স্ট্র্যাটিজি নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বে নির্দেশে তড়িঘড়ি ময়দানে নামল তৃণমূল।
মুর্শিদাবাদে পুরভোটের (Municipal Elections 2022) আসরে নেই 'হাত-হাতুড়ি'। একসময়ের একচ্ছত্র আধিপত্যে থাকা মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেস আর বামেদের রং এখন ফিকে। আর সেটা দ্রুত বুঝে নিয়েই আগামী পুরভোটে গেরুয়া শিবিরের (BJP) 'পদ্মকাঁটা' থেকে বাঁচতে নয়া স্ট্র্যাটিজি নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বে নির্দেশে তড়িঘড়ি ময়দানে নামল তৃণমূল (TMC)। যা আগামী দিনে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। স্বাভাবিকভাবেই সুচতুরভাবে কংগ্রেস ও সিপিএমকে এক ঝটকায় ব্রাত্য করে দেওয়ার এই পদ্ধতি রীতিমতো উল্লেখযোগ্য বলেই দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।
দেওয়াল লিখন শুরু, তৃণমূলের শীর্ষ নের্তৃত্বের কাছে গেল নামের তালিকা
মুর্শিদাবাদের প্রাচীন শহর জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধীদের টপকে আগাম ভোট প্রচার শুরু করল তৃণমূল নেতৃত্ব। শুরুতেই দেওয়াল চুনকামের কাজ শেষ করতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রার্থীর নাম বাদ রেখে দলীয় প্রতীক সহ দেওয়াল লিখনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলেই তৃণমূলের একটি বিশেষ সূত্র মারফত জানা যায়। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ১৭টি ওয়ার্ডের প্রার্থীদের নামের তালিকা জেলার নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি শাসকদলের দখলে ছিল। ১৪টির মধ্যে দু’টিতে সংরক্ষণের জন্য প্রাক্তন কাউন্সিলররা দাঁড়াতে পারছেন না। ৯টি ওয়ার্ডে পুরনো মুখ রেখে বাকিগুলিতে নতুন মুখ আনা হচ্ছে। বিজেপি ও সিপিএমের দখলে থাকা ৩ ওয়ার্ডে নতুন মুখ আনা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
ওয়ার্ড ভিত্তিক কর্মীসভা-সহ বিভিন্ন কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি
পাশাপাশি শাসকদলের প্রার্থী হতে চেয়ে পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ড থেকে বহরমপুরে জেলা তৃণমূল অফিসে রাখা ড্রপবক্সে ৫০টির বেশি বায়োডাটা জমা পড়েছে এদিন। এদিকে পুরসভা নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে ওয়ার্ড ভিত্তিক কর্মীসভা-সহ বিভিন্ন কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। শাসকশিবির সূত্রে খবর, নির্বাচনী রণকৌশলের রূপরেখা তৈরি করতে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী শাওনি সিংহরায় একাধিক কর্মীসভার আয়োজন করেছেন। এর মধ্যে তিনটি জিয়াগঞ্জ শহরে এবং একটি আজিমগঞ্জ শহরে অনুষ্ঠিত হবে।
তৃণমূলের তোড়জোড় শুরু হলেও বিরোধী শিবিরকে আগাম দেওয়াল লিখনের প্রচারে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না
পুরসভার প্রশাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, দুই শহরের সার্বিক উন্নয়ন ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প ও কর্মসূচিকে সামনে রেখে আমরা মানুষের কাছে যাব। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এবার মানুষ আমাদের সমর্থন করবেন। শাওনি বলেন, কর্মীরাই আমাদের সম্পদ। তাই লড়াইয়ের ময়দানে ফাইনাল খেলায় নামার আগে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের মতামত গুরুত্ব দিয়ে রণকৌশল তৈরির কাজ চলছে। শাসকদলের নির্বাচনী তোড়জোড় নজরে পড়লেও বিরোধী শিবিরকে দেওয়াল বা রাস্তায় কোথাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও বিরোধী শিবিরের দাবি, ঠিক সময়ে তাদের লড়াইয়ের ময়দানে দেখা যাবে। বিজেপির মুর্শিদাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক গৌরী শংকর ঘোষ বলেন, তৃণমূল যতই চেষ্টা করুক প্রাচীন শহর জিয়াগঞ্জে মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকবে। অতীতের লোকসভা বিধানসভা ভোটে তারা আমাদের দুই হাত তুলে আশীর্বাদ দিয়েছেন। তবে লড়াই হবে কেবল তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে। এর বাইরে আসরে আর কেউ নেই"।