সাপে কামড়ালে নিয়ে চলো হাসপাতালে, বার্তা ভ্যানচালক বিমলের

  • পনেরো বছর ধরেই  মানুষকে সচেতন করে চলেছেন বিমল পাত্র
  • সাপে কামড়ালে ওঝা গুণিনের কাছে না গিয়ে সোজা হাসপাতালে যান
  • সেই বার্তাই দিনের পর দিন দিয়ে চলেছেন পেশায় ভ্যান চালক বিমল
  •  নিজের সাইকেল ভ্যানে এ সংক্রান্ত একটি বোর্ডও  ঝুলিয়েছেন 
     

 দীর্ঘ পনেরো বছর ধরেই এলাকার সাধারণ মানুষকে সচেতন করে চলেছেন বছর উনচল্লিশের বিমল পাত্র। সাপে কামড়ালে ওঝা গুণিনের কাছে না গিয়ে সোজা যাতে মানুষজন হাসপাতালে যান সেই বার্তাই দিনের পর দিন দিয়ে চলেছেন পেশায় ভ্যান চালক বিমল। মুখে মুখে প্রচারের পাশাপাশি নিজের সাইকেল ভ্যানে এ সংক্রান্ত একটি বোর্ড ও দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছেন এই যুবক। 

দিনের পর দিন সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে। সাম্প্রতিক অতীতেও ক্যানিং মহকুমায় একাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সাপের কামড়ে। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে এ বিষয়ে সচেতনতা শিবির গড়ে সাধারণ মানুষকে সাপের কামড়ের চিকিৎসা সন্মদ্ধে সচেতন করা হলেও, এখনো যে সব মানুষ সচেতন হয়েছেন তেমনটা নয়। মাঝে মধ্যেই খবর পাওয়া যায় সাপের কামড়ের পর রুগীকে ওঝা বা গুণিনের কাছে নিয়ে গিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। আর সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়ার ফলে এইসব রোগীদের বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে।

Latest Videos

বছর সতেরো আগে ক্যানিংয়ের বাহিরবেনা গ্রামের বাসিন্দা বিমলের প্রতিবেশী এক যুবককে সাপে কামড়ায়। যুবকের পরিবারের মানুষজন তাকে স্থানীয় একটি ওঝার কাছে নিয়ে যায়। দুদিন ধরে সেখানে চলে ঝাড়ফুঁক। ওঝার কেরামতি দেখতে বিমল ও যায় সেখানে। কিন্তু যত সময় গড়ায় ততই ঐ তরতাজা যুবককে নেতিয়ে পড়তে দেখা যায়। কার্যত সকলের সামনেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর ও দেহে প্রান ফিরে আসবে বলে ওঝা নিদান দিলে কলার ভেলা তৈরি করে ঐ যুবকের দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয় মাতলা নদীতে। কিন্তু আর ফিরে আসেনি সে। এই বিষয়টি মনে দাগ কেটেছিল ক্লাস ফোর পাশ বিমলের। ওঝা, গুণিন যদি মানুষের রোগ সারিয়ে দেবেন তাহলে হাসপাতাল, চিকিৎসকরা কেন রয়েছে? এই প্রশ্ন জাগে তার মনে। এরপরেই এ বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে খোঁজখবর নিতে শুরু করে সে। 

অবশেষে তার সাথে যোগাযোগ হয় ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার কর্মীদের। সেখান থেকেই জানতে পারেন সাপে কামড়ালে সরকারি হাসপাতালেই রুগীকে নিয়ে যাওয়া উচিত। তাহলেই বাঁচবে প্রাণ। কারণ সাপের কামড়ের একমাত্র ওষুধ 'অ্যান্টি ভেনম সিরাম' বা 'এভিএস' শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালেই পাওয়া যায়। সেই শুরু, পথে ঘাটে, নিজের কর্মস্থলে সর্বত্রই 'সাপে কামড়ালে নিয়ে চলো হাসপাতালে' এই বার্তা দিয়ে আসছে ভ্যান চালক বিমল। তিনি বলেন, চোখের সামনে একজন তরতাজা যুবককে মরতে দেখেছি। সেটা আজও ভুলতে পারিনি। পরিবারের মানুষজন একটু সচেতন হলেই বাঁচানো যেতো ওকে। তাই সাপের কামড়ের চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার কাজ শুরু করি। বিগত পনেরো বছরের বেশি সময় ধরে আমি একাজ করে চলেছি। বহু মানুষ সচেতন হয়েছেন। তবে কাজ আরও বাকী। যেদিন সাপের কামড়ে এই এলাকা মৃত্যুহীন হবে সেদিন বুঝবো আমার চেষ্টা সফল হয়েছে। 

শুধু ভ্যান সচেতনতার বোর্ড লাগিয়েই ক্ষান্ত নন এই যুবক। সময় সুযোগ পেলে মাঝে মধ্যেই বাংলার সাপের মানচিত্র নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে বোঝাতে শুরু করেন। কোন সাপ বিষধর, কোনটিই বা বিষহীন সে সম্পর্কে সচেতন করেন তিনি। এছাড়া রাত বিরেতে কারো বাড়িতে সাপ ঢুকে পড়লে তাকে উদ্ধার করতে ডাক পড়ে বিমলের। মানুষজন অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজে ভ্যান নিয়ে সেখানে পৌঁছে যান। অসুস্থ রোগীকে উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন এই যুবক। নিঃস্বার্থ ভাবে বছরের পর বছর বিমল সমাজকে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। বিমলের এই কাজে খুশি তার প্রতিবেশীরা। এ বিষয়ে তার প্রতিবেশী আসমদ গাজি, হোসেন সর্দাররা বলেন,  ছোট থেকেই বিমল পরোপকারী। বহু বছর ধরেই ও মানুষকে সাপ সম্পর্কে ও সাপের কামড়ের চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন করে চলেছে।

Share this article
click me!

Latest Videos

ইয়ার্কি হচ্ছে! এতদিন ধরে বালু পাচার হচ্ছে আর উনি জানেন না! Mamata-কে তুলোধোনা Sukanta-র
‘২৬ এর নির্বাচনই তৃণমূলের শেষ নির্বাচন!’ Samik-এর সাবধানবাণী Mamata-কে, দেখুন | By Election Results
Live : India vs Australia: রাহুল-যশস্বীর ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন, অস্ট্রেলিয়া সফরের শুরুতেই দাপট
ভেঙে পড়ার কারন নেই! কেন BJP-র হার, জানালেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | BJP News
চলন্ত বাসে দুঃসাহসিক ছিন্তাই! চাঞ্চল্য ছড়ালো গোটা এলাকায় | South 24 Parganas News Today