সুন্দরবনে বাঘের সঠিক সংখ্যা কত তা জানতে আরও একবার সুন্দরবনের জঙ্গলে ক্যামেরা বসানোর কাজ করে চলেছে বন দফতর। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও ২৪ পরগণা বনবিভাগ দুই জায়গাতেই ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে এই 'ফেজ ফোর টাইগার এস্টিমেশন' এর কাজ শুরু হয়েছে বন দফতরের উদ্যোগে। বিগত এক সপ্তাহ থেকেই সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় এই ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
গত বছর সারা দেশ জুড়ে বাঘ সুমারি হয়েছিল এই ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে। সারা দেশের সাথে সুন্দরবনে ও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির আভাস মিলেছিল সেই রিপোর্টে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী সুন্দরবনে প্রায় ৮৮ টি বাঘ ছিল বলে দাবী করা হয়েছিল বন দফতরের তরফ থেকে। সেই ঘটনার পর চলতি বছরে চোরা শিকারিদের ফাঁদে পরে একটি বাঘের মৃত্যুর ঘটনা ও সামনে আসে। তবে বছর ঘুরতেই এবার সুন্দরবন এলাকায় বাঘের সংখ্যার তারতম্য কতটা হয়েছে তা ক্ষতিয়ে দেখতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য বন দফতর। ইতিমধ্যেই গত ২৭শে নভেম্বর থেকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্মীদের ক্যামেরা ট্রাপিং সংক্রান্ত ট্রেনিং ও হয়েছে সজনেখালিতে।
বন দফতর সূত্রে খবর, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় প্রথম ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের কাজ হচ্ছে। এবার মোট ১১৬০ টি ক্যামেরা বসানো হবে জঙ্গলে। ৫৪টি দলে ভাগ হয়ে বনকর্মীরা এই ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের কাজ করছেন জঙ্গলের মধ্যে। এক একটি দলে ১০জন করে বনকর্মী রয়েছেন। প্রায় একমাস ধরে চলবে এই ক্যামেরা ট্রাপিং এর কাজ। ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকায় এই কাজ সম্পন্ন হলে দ্বিতীয় দফায় ২৪ পরগণা বনবিভাগে শুরু হবে ক্যামেরা ট্রাপিং। এবারে গোটা সুন্দরবন এলাকায় দু দফায় এই ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের কাজ শুরু হলেও আগামীদিনে একই সাথে ব্যাঘ্র প্রকল্প ও ২৪ পরগণা বন বিভাগ এলাকায় এই কাজ করা হবে বলে বন দফতর সূত্রে খবর।
এই ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যাবে, তেমনি সুন্দরবনের জঙ্গলে আরও কি কি ধরনের জীবজন্তু রয়েছে সে সম্পর্কে ও অনেক তথ্য জানা যাবে। এর পাশাপাশি সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্রের উপর ঠিক কি ধরনের প্রভাব পড়েছে সে সম্পর্কে ও একটা সম্যক ধারনা পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আগে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে বাঘ গননা হলেও বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতেই বাঘের সঠিক সংখ্যার অনুমান করার কাজ শুরু হয়েছে সুন্দরবনে। জঙ্গলের মধ্যে গাছের গায়ে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা লাগানো হয়। জিপিএস ও ইনফ্রারেড প্রযুক্তি সম্বলিত হাই রেজোলুশন নাইট ভিশন ক্যামেরার সামনে দিয়ে দিনে রাতে যে কোন সময়, যে কোন জীবজন্তু গেলেই তার ছবি ক্যামেরায় ধরা পড়বে। পরে সেই ক্যামেরার ছবি বিশ্লেষণ করেই বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করবেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এবার সুন্দরবনের জঙ্গলে এই ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের জন্য বন দফতর ডাবলু ডাবলু এফ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার সাহায্য নিচ্ছে।