পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুরের ডোকরার দুর্গা প্রতিমা এবার শোভা পাবে কলকাতার অন্যতম নামজাদা এক পুজো মণ্ডপে। তাই নাওয়াখাওয়া ভুলে এখন মূর্তি তৈরিতে চরম ব্যস্ত ডোকরাপাড়ায় শিল্পীরা। ১৪ জন শিল্পীর অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি হচ্ছে ১০ ফুটের দুর্গা প্রতিমা। মা দুর্গার পাশাপাশি মণ্ডপে আলাদা আলাদাভাবে শোভা পাবে লক্ষী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিক। কার্যত সপরিবারে দুর্গা আসছেন কলকাতায়। সেজন্য প্রতিটি দেব দেবীর মূর্তিকে পৃথকভাবে তৈরি করা হয়েছে।
দুর্গা মূর্তিটি তৈরি করতে প্রায় ৫ কুইন্টাল পিতল, ৩০ কুইন্টাল কয়লা, ৪৫ কুইন্টাল কাঠ, ৫০ কেজি মোম ও ৩০ কেজির মতো ধুনো লেগেছে । মূর্তির বিশেষত্ব, এখানে দুর্গার পাশাপাশি অনান্য দেব-দেবীরাও পদ্মের উপরে অধিষ্ঠিত থাকবেন। সামনেই মহালয়া, মূর্তি তৈরির কাজও প্রায় শেষের দিকে। বাকি রয়েছে কেবল গয়নার কিছু কাজ। সরকারি আর্ট কলেজের এক পড়ুয়া বেলেঘাটা ৩৩ পল্লীর মণ্ডপ তৈরির দায়িত্ব পেয়েছেন। তার মাধ্যমেই মাস কয়েক আগে ডোকরার দুর্গা তৈরির বরাত পান আউশগ্রামের শিল্পীরা।
দ্বারিয়াপুরের এই প্রাচীন শিল্পকর্মের খ্যাতি ছড়িয়ে আছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা বিভিন্ন সময়ে ডোকরা শিল্পকর্মের আঁতুড়ঘর দেখার জন্য ছুটে এসেছেন দ্বারিয়াপুরে। মূলত পিতল দিয়ে ডোকরার জিনিস তৈরি করা হয়। প্রথমে ধুনো, মোম ও তেল মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। তা দিয়ে সূক্ষ্ম কারুকার্য করে মডেলগুলি তৈরি করা হয়। এরপর সেগুলিকে ঢেকে দেওয়া হয় কাদামাটি দিয়ে । রোদে শুকিয়ে নেওয়ার পর তাতে ফের মাটির প্রলেপ দিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। ভিতরের মোম ও ধুনো গলে বেরিয়ে গেলে, সেখানে পিতল গলিয়ে ঢেলে দেওয়া হয়। পরে লোহার সরু কাটা দিয়ে মাটির মণ্ডকে বের করে দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় ডোকরার সামগ্রী।
দ্বারিয়াপুরের শিল্পীদের হাতে তৈরি দুর্গাই এবার পূজিত হবেন কলকাতার বেলেঘাটা ৩৩ পল্লীর মণ্ডপে। তবে তাদের তৈরি দু্র্গা এর আগে দেশ, বিদেশে পাড়ি দিলেও এতবড় কাজের বরাত আগে আসেনি শিল্পীদের কাছে। ইতিমধ্যে প্রতিমাটি বানাতে ৪ লক্ষ টাকারও বেশি খরচ হয়ে গিয়েছে, যা বরাত পাওয়া অর্থের তুলনায় অনেকটাই বেশি। যদিও তাতে আক্ষেপ নেই শিল্পীদের। তাদের তৈরি শিল্পকর্ম শহরের দর্শকদের কাছে পৌঁছবে এটা ভেবেই আনন্দিত তারা।