ভাইরাল এক মেসেজ। আর তাই নিয়েই এখন পুরুলিয়ায় ধুন্ধুমার রাজনৈতিক লড়াই। বিজেপি বিহিতের হুমকি দিয়ে রাজ্য সরকারকে মজা পাওয়ানোর কড়া হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। অন্যদিকে, রণংদেহী তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি মহামারি আইনে অভিযুক্তদের জেরা করতে হবে। রাজ্যের শাসক বনাম বিরোধী রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে আসলে এখন লড়াই ভাইরাল হওয়া এক মেসেজকে ঘিরে। যে মেসেজে-র শিরোনামে লেখা রয়েছে বিজেপি কোর মেম্বার্স। এই ভাইরাল হওয়া মেসেজের-র মধ্যে দেখা যাচ্ছে বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী প্রেসিডেন্ট নামে এক ব্যক্তি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসকে হাতিয়ার করে সেফ হোমে বেশি করে লোক ঢোকানোর কথা বলছে। বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী নামে ওই ব্যক্তির দাবি এতে করোনার প্রকোপ বাড়বে এবং রাজ্য সরকার ফেঁসে যাবে। এরই প্রত্যুত্তরে জ্যোতির্ময়দা এমপি নামে অন্য এক ব্যক্তির বয়ান দেওয়া রয়েছে। সেখানে জ্যোতির্ময়দা এমপি নামে ওই ব্যক্তি - উক্তিতে লেখা রয়েছে- 'আমি সেন্ট্রালকে বলে মিডিয়া দিয়ে দেব। আমাদের কর্মীদেরকেও বলতে হবে বেশি করে ফোট-ভিডিও করে।'
পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট এটি। আর স্ক্রিনশটে যাঁদের নাম জ্বলজ্বল করছে তাঁরা আসলে সব পুরুলিয়া জেলা বিজেপি-র কেষ্ট-বিষ্টু। অভিযোগ চ্যাটের স্ক্রিনশটে নাম থাকা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী আসলে পুরুলিয়া জেলা বিজেপি-র সভাপতি। তৃণমূল কংগ্রেসের আরও অভিযোগ, জ্যোতির্ময়দা এমপি আসলে পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ। যদিও, পুরুলিয়া জেলা বিজেপি-এই ভাইরাল হওয়া মেসেজের স্ক্রিনশটের সত্যতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস ঘৃণ্য রাজনীতির বশবর্তী হয়ে ফেক মেসেজ ছড়িয়ে দিয়েছে।
ভাইরাল হওয়া এই মেসেজের সত্যতা স্বাভাবিকভাবেই যাচাই করা যাচ্ছে না। এমনকী, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-ও এই মেসেজের সত্যতা সম্পর্কে একশো শতাংশ নিশ্চিত নয়। যেহেতু একটি গুরুতর অভিযোগ-কে কেন্দ্র করে পুরুলিয়ায় বিজেপি ও তৃণমূল রাজনৈতিক তরজায় মেতেছে সে সম্পর্কে সাধারণ জনমানসকে অবগত করতেই এশিয়ানেট নিউজ বাংলা এই প্রতিবেদনকে পরিবেশন করছে। কোনওভাবেই এশিয়ানেট নিউজ বাংলা দাবি করছে না যে ভাইরাল হওয়া মেসেজে-র স্ক্রিনশট আসলে জেলা বিজেপি-র কোর কমিটির।
ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটে কী লেখা রয়েছে একনজরে- শিরোনামে বিজেপি কোর মেম্বার্স পুরুলিয়া। এরপর দেখা যাচ্ছে কয়েক জনের নাম। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ওপেন করলে তাতে সদস্যদের নাম যেভাবে আসে, তেমন কিছু নাম। এরপর ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটে প্রথমে কাল্টু দা বলে একজনের নাম। যার নামের পাশে লেখা রয়েছে ওকে। এরপর নীল রঙে একজনের নাম। সেই নামটি হচ্ছে বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী-প্রেসিডেন্ট। এই নামের নিচে যে লেখাটি রয়েছে তা হুবুহু এরকম- 'সব থেকে ভালো হবে বেশি করে লোক স্কুলগুলিতে ঢুকিয়ে দাও, আর সবাইকে বলে দাও যে সবাই ঘর পাবে। যত বেশি লোক একসাথে থাকবে করোনা হবে আর সরকার ফাঁসবে, প্রত্যেকটা অঞ্চলে খবর দিয়ে দাও।' এই বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর নিচেই এবার একটি নামের উল্লেখ রয়েছে। সেই নামটি হল জ্যোতির্ময়দা এমপি। এই নামের নিচে যে কথাগুলি লেখা রয়েছে তা হল এরকম- 'আপনি বলে দিন সেন্ট্রালকে বলে আমি মিডিয়া তো দিয়ে দেব। আমাদের কর্মীদেরকে বলতে হবে বেশি করে ফটো ভিডিও করে'। এরপর কাল্টু দা নামে একটি ব্যক্তির নামের সঙ্গে লেখা রয়েছে- 'এইটা করা মনে হয় না ঠিক হবে, আমার বিধানসভাতে টিএমসি জেনে যাবে'। বিবেক রাংঙ্গা পিআরআর জিএস বলে একটি নামের উল্লেখ রয়েছে এই ভাইরাল মেসেজে। এই নামের পাশে লেখা রয়েছে,- 'দাদা দল যেটা বলে আমাদের করা উচিত'। এরপরই আলিমদা মাইনরিটি সেল বলে একটি নাম। যে নামের পাশে লেখা রয়েছে- 'দল যে সিদ্ধান্তটা নিবে সেটা আমাদের মেনে চলতে হবে তাই আমি একমত'। এরপর জয়পুর নরহরি দা বলে আরও একটি নাম, যে নামের পাশে আবার ইংরাজি হরফে বাংলায় লেখা রয়েছে- 'ওরা পলিটিক্স করে আমরাও করবো, গুড ডিসিশন বাই বিবেক অ্যান্ড বিদ্যাসাগর।'
এই মেসেজের স্ক্রিনশট নিয়ে এখন তুলকালাম পরিস্থিতি। বিজেপি-র জেলা কমিটির নেতারা বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন এবং ভাইরাল হওয়া এই হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশটকে ফেক বলেও দাবি করেন। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত এবং কড়া শাস্তিরও দাবি জানায় পুরুলিয়া জেলা বিজেপি। এমনকী পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ-এর পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আন্দোলনের হুমকি দেয় বিজেপি। নেতারা রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরেই বলেন, এই ঘৃণ্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের পর্দা ফাঁস না হলে রাজ্য প্রশাসনকে দেখিয়ে দেওয়া হবে বিজেপি কতটা শক্তিশালী। এমনকী, জেলা বিজেপি-র পক্ষ থেকে লিখিত বিবৃতি দিয়ে ভাইরাল স্ক্রিনশটের নিন্দা করা হয়। সেইসঙ্গে পুরুলিয়া বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, 'এটা পুরোপুরি ফেক।এটা চক্রান্ত এবং জঘন্য রাজনীতির পরিচয়। যদি আমার বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে আমি হাঁসতে হাঁসতে গ্রেপ্তার বরণ করব।'
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের পুরুলিয়া শহর সভাপতি বিভাস রঞ্জন দাস জানিয়েছেন, 'বিজেপি ভোটে হেরে পাগল হয়ে গেছে। তাই তারা এখন এইসব করছে। এই বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হবে। এবং যাতে মহামারী আইনে তদের গ্রেপ্তার করা হয় তার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হবে।' এমনকী তাঁদের অভিযোগ, কাল্টুদা বলে যে ব্যক্তির নাম ভাইরাল স্ক্রিনশটে দেখা গিয়েছে তিনি আসলে জেলা পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়। জয়পুর নরহরিদা মানে বিজেপি নেতা নরহরি মাহাতো বলেও দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে এই ভাইরাল হওয়া হোয়াটস স্ক্রিনশট প্রকাশ্যে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি-কে তীব্র ধীক্কার জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেতা এবং মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য। ভাইরাল মেসেজে নিয়ে সরব হয়েছে পুরুলিয়ায় বিভিন্ন গণ সংগঠনও।