আশঙ্কাটাই সত্যি হল। একুশে জুলাইয়ের দিন মেদিনীপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডের ছবি দেখে অন্তত সেটা স্পষ্ট। পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে জেলায় লোকসভা নির্বাচনের ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে শাসক দল। তিনটির মধ্যে দু'টি আসনেই জিতেছে বিজেপি। ফলে এবারের একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে অন্যান্য বারের মতো জেলা থেকে কর্মী, সমর্থকরা আসতে পারবেন কি না, তা নিয়েই সংশয়ে ছিলেন শাসক দলের নেতারা। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্যিই হল। অন্তত মেদিনীপুর শহরের বাস মালিকদের হিসেব বলছে. গতবারের তুলনায় এবার তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের সমাবেশের জন্য পঞ্চাশ শতাংশ বাস কম ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- 'হিন্দুরা মরছে মরুক', দিলীপের ভাইরাল ভিডিওকে নিশানা মমতার, বক্তব্যে অনড় বিজেপি নেতা
বাস মালিক সংগঠনের সূত্র পাওয়া তথ্য বলছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতে মোট ৮০০ বেসরকারি বাস প্রতিদিন যাত্রী পরিষেবা দেয়। ২০১৮ সালেও জেলার প্রায় ৬০০ বাস একুশে জুলাই সমাবেশের জন্য ভাড়া করা হয়েছিল। সেখানে এবছর ভাড়া করা হয়েছে ৩০০ মতো বাস।
বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, "গতবারের তুলনায় এবার অনেক কম বাস গিয়েছে শহিদ সমাবেশে। তা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।' এই বাস কম যাওয়ার প্রবণতা সব থেকে বেশি দেখা গিয়েছে কেশপুর, মেদিনীপুর সদর ব্লকের হাতিহলকা, রাজারবাগান-সহ জঙ্গলমহলের এলাকাগুলিতে। তৃণমূলের মেদিনীপুর সদর ব্লকের অন্তর্গত জঙ্গলমহল এলাকার এক নেতা বলেন, 'সদর ব্লকের ধেড়ুয়া, চাঁদড়া, মণিদহ, এনায়েতপুর এলাকা থেকে বেশ কিছু বাস যেত কর্মীদের নিয়ে। জঙ্গলমহলের এই অংশ থেকে এবার একটিও বাস কলকাতার সভায় যায়নি। প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকায় জঙ্গলমহলের এই এলাকার লোকজন সভায় যাওয়ার সাহস পাননি।'
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি জানিয়েছিলেন, এবারে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ জেলা থেকে ধর্মতলার সমাবেশে যাবেন। তবে বাস্তবে তার অর্ধেকও যাননি বলেই জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর। মেদিনীপুর শহরেরই অনেক তৃণমূলের নেতাকর্মী, কাউন্সিলর যাননি শহিদ সমাবেশে।
একই ছবি বাঁকুড়া জেলাতেও। সেখানে অন্যান্যবার পাঁচশো থেকে সাড়ে পাঁচশো বাস ভাড়া করা হয় তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের জন্য। এবারে সেই সংখ্যাটা মেরেকেটে সাড়ে তিনশো ছুঁয়েছে। জঙ্গলমহলের আর এক জেলা পুরুলিয়াতেও ছবিটা একই রকমের। সেখানেও আড়াইশো থেকে তিনশো বাস ভাড়া করা হয়েছিল তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের জন্য। অন্যান্যবারের তুলনায় যে সংখ্যাটা অর্ধেক। সবজেলাতেই ট্রেনে করে কলকাতার সমাবেশে আসার প্রবণতাও এবার কম ছিল। তবে অনেক কর্মী, সমর্থক অবশ্য বিজেপি নেতাদের নজর এড়িয়ে কলকাতায় আসতে ছোট গাড়ি ভাড়া করেছিলেন।
যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব কম ভিড়ের দাবি মানতে নারাজ। খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের সমাবেশ আরও বড় হয়েছে।