হুগলি (Hooghly) জেলার পোলবা-দাদপুর ব্লকের (Polba Dadpur Block) এক গ্রামের ডাকঘরে আধার কার্ডের (Aadhaar Card) সঙ্গে মোবাইল নম্বর সংযুক্তিকরণের সময় বাধ্যতামূলকভাবে গঙ্গাজল কিনতে হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এই নিয়ে এদিন বিক্ষোভ দেখালো তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), বিজেপি (BJP) কী বলছে?
ডাকঘরে চলছে আধার কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নম্বর (Aadhaar Card Mobile Number Link) সংযুক্তিকরণের কাজ। কিন্তু, তা করতে গেলে সঙ্গে ৩০ টাকা দিয়ে কিনতে হবে গঙ্গাজল। না কিনতে চাইলে আটকে রাখা হচ্ছে আধারকার্ডও। অভিযোগ, এমনই অদ্ভূত এক নিয়মের গেরোয় আটকে গ্রামবাসীরা। মঙ্গলবার, এই নিয়ে ডাকঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখনো হল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) পক্ষ থেকে। তবে, গঙ্গাজল কেনা বাধ্যতামূলক নয় এমনটাই জানানো হয়েছে ডাক বিভাগ থেকে। আর স্থানীয় বিজেপি (BJP) নেতৃত্ব বলছে, ডাকঘরে গঙ্গাজল বিক্রি করা হবে না তো কি, মুখ্যমন্ত্রীর বাংলা মদ বিক্রি হবে?
ঘটনাস্থল হুগলি (Hooghly) জেলার পোলবা-দাদপুর ব্লকের (Polba Dadpur Block) গোস্বামী মালিপাড়া গ্রাম। এই গ্রামেরই ডাকঘরে আধার কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করাতে গেলে, তার জন্য ৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছিল। সেই সঙ্গে ৩০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হচ্ছিল, বোতলে সিল করা ২৫০ মিলিলিটার গঙ্গাজল। অর্থাৎ আধার ও মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করতে গেলে মোট ৮০ টাকা করে খসছিল গ্রামবাসীদের। তার উপর গঙ্গাজলের জন্য কোনো রসিদও দেওয়া হচ্ছিল না, এমনটাই অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীরা। এমনকী, পোস্ট মাস্টার অসীম চক্রবর্তীর কাছে এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানালে, এক যুবকের আধার কার্ডও নাকি আটকে রাখা হয়।
এরপরই, ডাকঘরে জবরদস্তি গঙ্গাজল বিক্রির বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে এদিন, জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গোস্বামী মালিপাড়া ডাকঘরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। দলীয় নেতা কর্মীদের গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তাদের প্রশ্ন করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে, যখন গ্রামবাসীদের আর্থিক অনটন চলছে, সেই সময়ে কেন গঙ্গাজল কিনতে বাধ্য করা হবে?
যে জল নিয়ে এত বিতর্ক
তৃণমূলের জেলাপরিষদ সদস্য মনোজ চক্রবর্তীর অভিযোগ, আধার কার্ড নিয়ে সাধারণ মানুষকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। মোদী সরকার কখনও বলছে, মোবাইল নম্বর যুক্ত করতে, আবার কখনও বলছে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট যুক্ত করতে। এর জন্য দিনের কাজ ফেলে মানুষকে ডাকঘরে আসতে হচ্ছে। বিনামূল্যে আধার কার্ড দিয়ে এখন এইসব সংযুক্তিকরণের জন্য টাকা নিচ্ছে। এখন আবার গঙ্গাজল কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
যদিও পোস্ট মাস্টার অসীম চক্রবর্তী বলেছেন, তাঁদেরকে উপর মহল থেকে গঙ্গাজল বিক্রি করতে বলা হয়েছে। তাই যারা ডাকঘরে আসছেন, তাদের গঙ্গাজল কেনার কথা বলা হচ্ছে। তবে, কাউকে জোর করা হয়নি বলেই দাবি করেছেন তিনি। এই বিষয়ে হুগলি মুখ্য ডাকঘরের সহকারী সুপার গীতা বার্লা জানান, ডাকঘরে গঙ্গাজল বিক্রির করা হচ্ছে ঠিকই। তবে, কোনও গ্রাহককেই তা বাধ্যতামূলক ভাবে কিনতে হবে, এমনটা বলা হয়নি।
এদিকে, এই বিষয়ে হুগলি জেলার বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি সুরেশ সাউ বলেছেন, হরিদ্বারের গঙ্গার জল বোতল বন্দি করে ডাকঘরের মাধ্যমে বিক্রি এক প্রকল্প চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার দাম ধার্য করা হয়েছে ত্রিশ টাকা। তবে কাউকে কেনার বিষয়ে জোর করা হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, এটা যে কোনও গঙ্গার জল নয়, সোজা হরিদ্বার থেকে পাঠানো হয়। তৃণমূলের পক্ষে আসলে এসব বোঝা সম্ভব নয়। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় সস্তায় মহুয়া, বাংলা মদ বিক্রির কথা বলছেন, তাঁর দল কি চাইছে ডাকঘর থেকেও সেই সবই বিক্রি করা হোক?