গায়ের জোরে প্রথমে জমি দখল। তারপর তা ছাড়ার জন্য দিতে হবে মোটা অঙ্কের টাকা। না দিলে দলবল নিয়ে হামলা করে ভাঙচুর, মারধর। এভাবেই অন্যের জমি দখল করে গায়ের জোরে তোলাবাজি চালানোর অভিযোগ উঠেছে এক তৃণমূল কর্মী বাবলুর বিরুদ্ধে। তোলার টাকা না মেলায় এবার দলবল নিয়ে মাখনার ফড়িতে (ছোট কারখানা) চড়াও হয়ে ভাঙচুর ও তার মালিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওই তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। ঘটনাক্রমে প্রহৃত ফড়ির মালিকও তৃণমূল কর্মী।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ওই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বাবলুর বিরুদ্ধে আগেও একাধিকবার এভাবেই জমি দখল করে তোলাবাজির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তারপরেও দলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ দলেরই একাংশের। এবার ফের তোলাবাজি করতে গিয়ে ভাঙচুর ও মারধরে বাবলুর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও ওই ঘটনায় তাকে মিথ্যে জড়ানো হচ্ছ বলে বাবলু দাবি করেছেন।
তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, হরিশ্চন্দ্রপুর পেট্রোল পাম্পের পাশে মাখনার ফড়ি রয়েছে দিল মহম্মদের। ওই জমিতেই মাখনা থেকে খই তৈরির চারটি ফড়ি রয়েছে তার। তবে আপাতত ফড়িগুলি বন্ধ। কারখানার সামনে রাস্তার ধারে জমির একাংশকে ঘিরেই ঘটনার সূত্রপাত। ওই রাস্তার পাশে আগেও জমি দখলকে ঘিরে এক ব্যবসায়ীকে মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল বাবলুর বিরুদ্ধে। বাবলু পেশায় আদতে ঠিকাদার। কিন্তু তাকে তার ফাঁকে আসলে বাবলু জমি মাফিয়া হিসেবে পরিচিত বলে তৃণমূলেরই একাংশের অভিযোগ।
দিল মহম্মদের অভিযোগ, সম্প্রতি গায়ের জোরে বাবলু দলবল নিয়ে এসে নিজের দাবি করে তার জমি ঘিরে নেন। পরে জমি ছাড়তে হলে দুলক্ষ টাকা দাবি করেন। কিন্তু সেই টাকা না দেওয়ায় এদিন কারখানায় চড়াও হয়ে ভাঙচুর করা হয়। বাধা দেওয়ায় তাকে মারধরও করা হয়।
দিল মহম্মদ এদিন বলেন, আগেও প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। আমার ন্যায্য জমি আমি ছাড়ব কেন। নথিতে আমার নামে যে জমি আছে তার বেশি আমি চাই না।
সুন্দর সকালের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে পুরুলিয়া, করোনা ছুঁতে পারেনি ৮০টি গ্রামকে
তিনি আরও জানান, বাবলু তার সঙ্গীদের মদ খাইয়ে এভাবেই অন্যের জমি দখল করে দাদাগিরি ট্যাক্স আদায় করে বেড়ায়। আমি টাকা দিতে রাজি হইনি। তারপরেই এদিন ও ফড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর করে। বাধা দেওয়ায় আমাকে মারধরও করে। পুলিশকে অভিযোগ জানাব।
যার নামে জমি দখলের অভিযোগ, তৃণমূল সমর্থক সেই বাবলু কর্মকার বলেন," আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আজ আমি এখানে ছিলাম না। কাজের জন্য অন্য এলাকায় ছিলাম। শুনতে পাই আমার নাম এসব বলা হচ্ছে। হয়তো আমাকে ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত।"
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মানিক দাস বলেন," ঘটনাটি শুনলাম। সমগ্র ব্যাপারটা জানিনা। খতিয়ে দেখতে হবে। যার যেটা ন্যায্য আইনি প্রক্রিয়ায় সেটাই পাবে।"
যদিও এই ব্যাপার নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপির জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া বলেন," হরিশ্চন্দ্রপুরে এই ঘটনা নতুন নয়। জমি নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এর আগেও হয়েছে। এবার ক্ষমতায় আসার পরও হচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারবে মানুষ কাদের ভোট দিয়েছে।"
মার্সিডিজে করে বেআইনী অস্ত্র পাচারের অভিযোগ, গ্রেফতার শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা
হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই তৃণমূল কর্মীর এই বিবাদকে ঘিরে প্রকাশ্যে এসেছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।যা নিয়ে মুখে না বললেও অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। আর এই এলাকাতে এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়। জমি বিবাদে এর আগেও জড়িয়েছে শাসক দলের নাম।