তৃণমূলের দাপুটে নেতাকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি, বাঁচাতে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু গাড়ির চালকের

শাসকদল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগে খোদ ব্লক সভাপতির গাড়ি লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী বোমাবাজি হামলার জেরে মৃত্যু হল গাড়ির চালকের। ঘটনায় গুরুতর জখম আরোও এক নিরাপত্তারক্ষী।

Parna Sengupta | Published : Aug 16, 2021 11:54 AM IST

শাসকদল তৃণমূলের (TMC) গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগে খোদ ব্লক সভাপতির (Trinamool block president) গাড়ি লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী বোমাবাজি হামলার জেরে মৃত্যু হল গাড়ির চালকের (driver killed)। ঘটনায় গুরুতর জখম আরোও এক নিরাপত্তারক্ষী। সোমবার এই ঘটনার চাউর হতেই মুর্শিদাবাদের কার্তিকের পাড়া এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। তৃণমূলের ব্লক সভাপতির মৃত গাড়ির চালকের নাম আব্দুস সাত্তার (২৮)। অল্পের জন্য কোনোরকমে প্রাণে রক্ষা পান খোদ ব্লক সভাপতি শাহ আলম। 

এদিকে ঘটনার পর থেকেই এলাকায় বিরোধী বনাম শাসকের চাপানউতোর সৃষ্টি হয়েছে। জখম নিরাপত্তারক্ষীর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন ধরেই এলাকায় চাপা উত্তেজনা চলছিল। কার্তিকের পাড়ায় রানিনগর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শাহ আলম সরকারের একটি পুকুর আছে। মাঝেসাজেই সেখানে বসে গল্প গুজব করেন দলীয় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ওই ব্লক সভাপতি। সেইমতো তিনি  সেখানে গিয়েছিলেন। 

পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জানান ফেরার জন্য রওনা দেব সেই সময় সামনে থেকে গাড়ি লক্ষ্য করে সকেট বোমা ছুঁড়ে পালিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। তারপরে চারিদিক ধোঁয়ায় ভরে যায়। তাতে চালক-সহ দলীয় কর্মী গুরুতর জখম হন। জখম হন নিরাপত্তারক্ষীও।

রানিনগর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শাহ আলম সরকার অভিযোগ করে জানান, “এলাকায় উত্তেজনা তৈরি করতে কংগ্রেস, সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমাকে প্রাণে মারার জন্য সকেট বোমা ছুঁড়েছিল। সৌভাগ্য ক্রমে বেঁচে গিয়েছি।” 

ঘটনার পরেই স্থানীয় মানুষ জখমদের উদ্ধার করে রানিনগরের গোধনপাড়া ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তৃণমূল ব্লক সভাপতির গাড়ি চালকের। এই ঘটনায় তৃণমূলের রানিনগরের বিধায়ক সৌমিক হোসেন সরাসরি বিরোধীদের দায়ী করে বলেন ,কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের জন্যই এই কাণ্ড ঘটেছে। বিধানসভা ভোটের পর থেকে পায়ের তলার মাটি হারিয়ে ওরা সকলে মিলে সন্ত্রাস করতে চাইছে। সেই কারণেই এইভাবে প্রাণঘাতী আক্রমণ চালিয়ে খুন করা হলো আমাদের দলের ব্লক সভাপতির গাড়ির চালককে"।

এদিকে ওই ঘটনায় রানিনগরের প্রাক্তন বিধায়ক কংগ্রেস নেত্রী ফিরোজা বেগম থেকে শুরু করে জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস সকলেই এই ঘটনার জন্য তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করেন। অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক সচিব জয়ন্ত দাস বলেন, এখানে তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। বিধায়কের গোষ্ঠী, বিধায়কের বিরোধী গোষ্ঠী-এরকম বহু গোষ্ঠী রয়েছে। সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে খুন। মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রতিদিনই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে। কে বেশি শক্তিশালী হবে এলাকায় সেই জন্যেই তৃণমূলের এই খুনোখুনি পর্ব চলছে"। 

অন্যদিকে দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা বিজেপির সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন," তৃণমূলের মধ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছাড়া আর কিছু নেই মুর্শিদাবাদ জেলায়। এটা এখন দিনের আলোর মত পরিষ্কার। প্রতিদিন খুন আতঙ্ক বোমাবাজি করে তৃণমূলের কালচারে পরিণত হয়েছে। আর কার্তিকের পাড়া এলাকায় তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে তারই ফল এই হত্যা"।

এদিকে ঘটনার পরই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নাকা পয়েন্টগুলোতে টানা তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। সোমবার শেষ পাওয়া খবরে জানা যায় ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। এই ব্যাপারে জেলার এক উচ্চ পুলিশ আধিকারিক বলেন, ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে। 

Share this article
click me!