পারমিতা ও সুরভির মতে তাদের সম্পর্কটা আজীবনের। তাকেই তাঁরা পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের সামনে স্বীকৃতি দিতে চাইছেন।
কথা ছিল হেঁটে যাব ছায়াপথ...কথা রেখেছেন দুজনেই। রূপকথার গল্পকে সত্যি করে এক কাঁটাতারহীন জীবনের স্বপ্ন বুনতে পেরেছেন ওঁরা। ওঁরা দুই বাঙালি কন্যা। দুজনেই পেশায় চিকিৎসক। তবে তাঁদের পরিচয় এই ছোট্ট দুই লাইনে শেষ হওয়ার নয়। যাঁরা অর্ধেক নয়, গোটা একটা আকাশ হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের জন্য কোনও বিশেষণই হয়ত যথেষ্ট নয়। এই দুই বাঙালি কন্যা পেরেছেন তাঁদের সমপ্রেমী সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিতে। প্রথম দেখাতেই যে ভালো লাগা জড়িয়ে থাকে, তাকে বিয়ের শিলমোহর কতজন দিতে পারেন. তাও ভারতের মত দেশে, যেখানে সমকামী বিবাহ এখনও আইনী লড়াইয়ের সবটুকু পথ পেরোতে পারেনি।
দুই চিকিৎসক(Doctors) বাঙালি কন্যা (Bengali girl) পারমিতা মুখোপাধ্যায় (Paromita Mukherjee) ও সুরভী মিত্র (Surabhi Mitra) একে অপরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে (tie the knot) আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোনও লুকোছাপা করে নয়, বরং সোচ্চারে, স্বগর্বে ঘোষণা করে উড়িয়েছেন আনন্দের বিজয় নিশান। সবাইকে জানিয়েছেন আংটি বদলের পর এবার গোয়ায় হবে তাঁদের ডেস্টিনেশন ওয়েডিং। সুরভীর বড় হয়ে ওঠা নাগপুরে। সেখানেই শালীনিতাই মেঘে হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের কর্মরত তিনি। অন্যদিকে, আদপে বর্ধমান জেলার মেমারীর মেয়ে পারমিতার বেড়ে ওঠা কলকাতায়। নাগপুরে এক অনুষ্ঠানে আলাপ হয় সুরভীর সঙ্গে। সেখান থেকেই ঘনিষ্ঠতা।
এই প্রেমিকাদ্বয় জানিয়েছেন পরিবারের পূর্ণ সম্মতিতেই তাঁরা মালা বদল করবেন। তাঁদের কাছে আইনী স্বীকৃতির থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাঁদের মনের টান। পারমিতা ও সুরভির মতে তাদের সম্পর্কটা আজীবনের। তাকেই তাঁরা পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের সামনে স্বীকৃতি দিতে চাইছেন। পেশায় সাইকিয়াট্রিস্ট সুরভী জোর গলায় সমাজের চলতি নিয়মকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কাছে নিজের পছন্দ আর অপছন্দের মূল্য অনেক বেশি। তিনি বলেন পেশাগত কারণ এমন অনেক মানুষ তাঁর কাছে আসেন, যারা শুধু সমাজের চাপে পড়ে দ্বৈত জীবন বেছে নিয়েছেন। সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন নিয়ে কথা বলার জায়গা আজও নেই।
তবে এটাই প্রথম নয়। ২০শে ডিসেম্বর আরও এক সমকামী বিবাহ দেখেছিল ভারত। গাঁট ছড়া বাঁধেন কলকাতার সুপ্রিয় চক্রবর্তী ও হায়দরাবাদের অভয় দং। সুপ্রিয় একটি হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটের শিক্ষক। আর অভয় হলে মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির (MNC) কর্মী। দুজনের মধ্যে প্রেমটা চলছিল প্রায় ৮ বছর ধরে। স্কুল জীবনেই তাঁরা বুঝেছিলেন, তারা আর পাঁচটা ছেলের মতো নন। মেয়ে নয় বরং পুরুষসঙ্গীর প্রতি আকৃষ্ট হন তারা। কিন্তু, এক সময় এমন সমকামী প্রেমের স্বীকৃতি ছিল না। ফলে, সম্পর্ক রাখতে হয়েছে গোপন করে। শেষে সকল বাধা অতিক্রম করে জয় হল তাঁদের সম্পর্ক। বিয়ে করেন তাঁরা।