বাংলা জুড়ে চলছে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। অন্তত রাজ্য সরকারের দাবি সেরকমই। কিন্তু সেই উন্নয়নের ছোঁয়া এখনও লাগেনি স্বাধীনতা সংগ্রামী মাতঙ্গিনী হাজরার গ্রামে। স্বাধীনতা দিবসের আগে তাই ক্ষোভে ফুঁসছেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের হোগলা গ্রামের মানুষ।
১৮৭০ সালের ১৯ অক্টোবর তমলুকের হোগলা গ্রামের মাইতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাতঙ্গিনী হাজরা। ঠাকুরদাস মাইতি ও ভগবতী মাইতির এক মাত্র মেয়ে ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয় পড়েছিলেন মাতঙ্গিনীদেবী।
খুব কম বয়সে পাশের আলিনান গ্রামের ত্রিলোচন হাজারার সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। কিন্তু মাত্র আঠারো বছর বয়সেই স্বামীকে হারান তিনি। এর পর থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন মাতঙ্গিনীদেবী। ১৯৪২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তমলুক থানা দখলের সময় পুলিশের গুলিতে তাঁর প্রাণ যায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেও দেশের পতাকাকে তিনি মাটিতে ফেলেননি।
দেশের জন্য আত্মবলিদান দেওয়া এ হেন মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মস্থানই আজ চরম অবহেলিত বলে অভিযোগ হোগলা গ্রামের বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, হোগলা গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া মূল রাস্তাটিই এখনও মাটির। বর্ষায় তা কার্যত চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে। অথচ ওই রাস্তা দিয়েই মাতঙ্গিনী হাজরার জন্ম ভিটেতে পৌঁছতে হয়। কয়েক হাজার গ্রামবাসীর পাশাপাশি যাঁরা মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মভিটে দেখতে আসেন, তাঁদেরকেও ওই রাস্তাই ব্যবহার করতে হয়। রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখে বিরক্ত তাঁরাও। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এবারও ভোটের আগে গ্রামে এসে রাস্তা সারাইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই। কিন্তু ভোট মিটে যেতেই অবস্থা যে কে সেই।
শুধু গ্রামের রাস্তাই নয়, মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মভিটেও অবহেলিত বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। মাতঙ্গিনী হাজরার স্মৃতি বিজরিত বাড়ি এবং তার ভিতরে থাকা জিনিসপত্র সংরক্ষণেও প্রশাসন উদ্যোগী হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামের রাস্তার উন্নত হলে এবং মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মভিটের ঠিকমতো সংস্কার হলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ হোগলা গ্রামে এসে তাঁর আত্মবলিদান সম্পর্কে বিশদে জানতে পারতেন।