সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, রামচন্দ্র ডোমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজ হরিণসিংহা গ্রামে যান। গ্রামে ঢোকার মুখে কিছু মানুষ তাঁদের পথ আটকায়।
"আমরা কয়লাখনি (Coal Mine) গড়তে জমি ছাড়ব না। যে সরকার বেকারদের চাকরি (Job) দিতে পরে না। তাদের কাছে এই প্যাকেজ আশা করা যায় না। আমরা যেমন আছি তেমনিই থাকতে চাই।" শুক্রবার দেউচা-পাঁচামি প্রস্তাবিত কয়লাখনি নিয়ে বাম প্রতিনিধি দলের কাছে এমনটাই জানালেন গ্রামের মানুষ। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty), রামচন্দ্র ডোমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজ হরিণসিংহা গ্রামে যান। গ্রামে ঢোকার মুখে কিছু মানুষ তাঁদের পথ আটকায়। কালো পতাকা দেখিয়ে গ্রামে ঢুকতে বাধা দেয়। তবে সেই বাধা অতিক্রম করে গ্রামে ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।
হরিণসিংহা গ্রামের বাসিন্দা স্মিতা মুর্মু বলেন, "আমি ডি.এড করেছি সাত বছর আগে। দুই বোন তারাও শিক্ষিতা। কিন্তু কেউ চাকরি পাইনি। তাই এই সরকারের প্রতিশ্রুতিকে আমরা ভরসা করি না। এদের কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই। তাই আমরা জমি দেব না। আমরা যেমন আছি তেমনিই থাকতে চাই।" এ প্রসঙ্গে সুজন বলেন, "আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য গ্রামে গিয়েছিলাম। আমরা যে যাচ্ছি তাতে তৃণমূলের খুব অপছন্দ হয়েছে। ওদের ওটা যেন জমিদারি। ওদের জমিদারিতে যাব কেন এরকম একটা ভাব ওদের। এমন ভাব লোকেও কিছু বলতে পারবে না। আমরাও কিছু শুনতে পারব না। তাই তারা বাইরে থেকে কিছু লোক নিয়ে এসে আমাদের পথ আটকানোর চেষ্টা করে। কালো পতাকা দেখায়। তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। আমরা তাদের বাধা অতিক্রম করেই মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি।"
সুজন আরও বলেন, "আমরা হরিণসিংহা, দেওয়ানগঞ্জ, চাঁদা সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাতে বোঝা গেল সরকারের কোনও প্রতিনিধি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেনি। জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, বিডিও, প্রধানের মাধ্যমে কে কি কথা বলে দিয়েছেন কেউ জানে না। সাধারণ মানুষের বক্তব্য আমাদের জীবন, জীবিকা, পরিবেশ ধ্বংস করলে আমরা যাব কোথায়। মানুষ অসহায় বোধ করছে। আতঙ্কে রয়েছে। তারা যাবে কোথায়। মানুষ ওখানে কয়লাখনি চাইছেন না। সরকারের উচিত মানুষের জীবন, জীবিকা ও পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খতিয়ে দেখা। মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড়ে কর্পোরেট কোম্পানি যখন খনি দখল নিতে চায় তখন বিজেপি তাদের পাশে দাঁড়ায়। এরাজ্যে সরকারও কি বিজেপির পথে হাঁটবে? সরকারকে চিন্তাভাবনা করে এগোতে হবে।"
যদিও দেউচা-পাঁচামিতে কয়লাখনি হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal)। শুক্রবার কয়লাখনি সংলগ্ন শেওড়াফুলির মাঠে দলে যোগদানের সভায় একথা বলেন তিনি। দিন কয়েক আগেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল (TMC) যোগদান করেছেন সুনীল সোরেন। আদিবাসীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ওই নেতাকে তৃণমূলে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল। তারই নেতৃত্বে আজ ওই সভায় বহু আদিবাসী তৃণমূলে যোগদান করেন। তখন মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনুব্রত বলেন, "সুনীল ভুল করে অন্য দলে গিয়েছিল। খুব ভালো ছেলে। সুনীল আদিবাসীদের উন্নয়ন চায়। আমি ওর সঙ্গে কথা বলেই আদিবাসী উন্নয়নে কাজ করব। এই এলাকায় কয়লাখনি হবেই। এক লক্ষ বেকারের চাকরি হবে। এক পরিবারে যতগুলো ছেলে থাকবে প্রত্যেকে বাড়ি পাবে। এখানে কেউ বাধা দিতে পারবে না।"
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর সফর প্রসঙ্গে অনুব্রত বলেন, "এখানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আটকে দিয়েছিল আদিবাসীরা। ফলে কে এল গেল দেখে লাভ নেই। মুখ্যমন্ত্রী এলাকার উন্নয়ন নিয়ে যা ভাবনা চিন্তা করছেন, ৩৪ বছরে তা বামফ্রন্ট করেনি। আমরা আদিবাসীদের নিয়েই কয়লাখনি গড়ব।"