বললেন কম, শুনলেন বেশি, কৃতিত্ব প্রশান্ত কিশোরের নাকি মমতারই

  • সোমবারের বৈঠকে ধৈর্য দেখালেন মমতা
  • সমালোচনা শুনেও রাগলেন না
  • মুখ্যমন্ত্রীর বদলে যাওয়া ভাবমূর্তি নজরে পড়েছে সবারই
  • কেউ বলছেন প্রশান্ত কিশোর, কেউ কৃতিত্ব দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রীকেই

debamoy ghosh | Published : Jun 18, 2019 6:20 AM IST / Updated: Jun 18 2019, 01:05 PM IST

তিনি শোনেন কম, বলেন বেশি। এটাই তাঁর সম্পর্কে আমজনতার এতদিনের উপলব্ধি ছিল। কথায় কথায় তিনি চট করে রেগেও যান। কিন্তু সোমবার নবান্নের একটি বৈঠকই যেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে এতদিনের বদ্ধমূল ধারণাই বদলে দিল। জুনিয়র চিকিৎসকদের কথা শুধু ধৈর্য ধরে শোনাই নয়, সরকারের সমালোচনা শুনেও রাগলেন না মমতা। 

মুখ্যমন্ত্রী এই বদলে যাওয়া ভাবমূর্তির পিছনে কি তবে প্রশান্ত কিশোরেরই অবদান রয়েছে? কেউ কেউ এমন দাবি করলেও তার পাল্টা যুক্তিও রয়েছে। বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী রেগে গেলে যদি তাঁর সমালোচনা হয়, তা হলে শান্ত হয়ে চিকিৎসকদের দাবি দাওয়া শোনার কৃতিত্ব কেন তাঁকে দেওয়া হবে না?

কয়েকদিন আগেও জয় শ্রীরাম শুনে গাড়ি থেকে নেমে তেড়ে গিয়েছেন মমতা। এসএসকেএমে গিয়ে এই ডাক্তারি পড়ুয়াদের সামনেই তাঁর রুদ্রমূর্তি দেখা গিয়েছে। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে সেই মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যেই যেন আমূল বদল। রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর মতে, সচেতন ভাবেই সর্বভারতীয় স্তরে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার সুযোগ পূর্ণ মাত্রায় কাজে লাগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং এর পিছনে মমতার রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা থাকতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্বনাথবাবু। তিনি বলেন, 'সোমবারের এই বৈঠক সারা দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে, পরে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছিল, এই বৈঠকে তা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠলেন তিনি। সমালোচনা সহ্য করেও নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে নিলেন। এর পিছনে প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা থাকলেও আমি অবাক হব না।'

বিশিষ্ট মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিশ্বনাথবাবুর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নন। মুখ্যমন্ত্রীর বদলে যাওয়া ভাবমূর্তির পিছনে প্রশান্ত কিশোরের অবদান থেকে থাকলেও কৃতিত্বটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিতে চান অনুত্তমাদেবী। তাঁর মতে, বাইরে থেকে দেখেই অনেকের সম্পর্কে মানুষের মনে একটি ধারণা তৈরি হয়ে যায়। যা হয়তো ঠিক নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট সম্পর্কেও এতদিন সেরকমই একটি ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিল আমজনতার মনে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে যে যথেষ্ট ধৈর্যও রয়েছে, সোমবারের বৈঠক তা প্রমাণ করেছে বলেই মত অনুত্তমাদেবীর। তাঁর মতে, 'সমালোচনা শুনতে আমরা কেউই পছন্দ করি না। সোমবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীরও নিশ্চয়ই সব সমালোচনা শুনতে ভাল লাগেনি। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতে উপলব্ধি করেই উনি রেগে যাননি। জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন।' 

বিশিষ্ট ওই মনোবিদের মতে, সোমবার যে মানসিকতা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বসেছিলেন, সেটাই আসল। অতীতে তাঁর সমানলোচনা শুনে রেগে যাওয়া, বা সোমবারের বৈঠকে শান্ত থাকাটাও প্রেক্ষিত নির্ভরও হতে পারে বলে মত অনুত্তমাদেবীর।

সোমবারের বৈঠকেও এমন অনেক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যেখানে মনে হচ্ছিল এই বুঝি মুখ্যমন্ত্রী রেগে গেলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। অন্য কারও পরামর্শেই  কি শুধু এই বদল সম্ভব? তা কিন্তু মানছেন না মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্যাখ্যা, 'ওনাকে দেখে বরাবরই খুব আত্মনির্ভর মনে হয়েছে। ফলে শুধু অন্যের কথায় তিনি এতটা ধৈর্য দেখিয়েছেন, তা মনে হয় না। আসলে ভিতর থেকেই তিনি সমস্যাটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আর উনি রেগে গেলে যদি তাঁর দায় ওনার একার হয়, সোমবারের বৈঠকে শান্ত থাকার কৃতিত্বটাও ওনাকেই দেওয়া উচিত।'

সোমবারের বৈঠকের মাঝে মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশে অভিমানী সুরেই বলেন, 'আমি ভেবেছিলাম তোমরা আমাকে চাও না।' ফলে রাগারাগি না করে যেভাবে মান- অভিমানের পালা সমাপ্ত হয়, অনেকটা সেই আবহই সোমবারের বৈঠকে চোখে পড়েছে। শান্ত ভাবে গোটা পরিস্থিতি যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী সামলেছেন, তাতে আশার আলো দেখছেন অনেকেই। 
 

Share this article
click me!