
আরামবাগ মেডিকেল কলেজে সদ্যোজাত শিশুবদল সংক্রান্ত বিতর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হল। বৃহস্পতিবার সালেপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বসন্তবাটি খন্দকার পাড়া থেকে কবর খুঁড়ে মৃত এক শিশুপুত্রের দেহ বার করা হয়েছে। আরামবাগ থানার পুলিশ ও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এই দেহ উত্তোলনের কাজ সম্পন্ন হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে দেখা যায় উত্তেজনা ও চাঞ্চল্য।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার আরামবাগ প্রফুল্ল চন্দ্র সেন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে শিশুবদল-এর অভিযোগে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। তারকেশ্বরের বালিগোড়ি এলাকার বাসিন্দা জেসমিনা বেগম সদ্য একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পরিবার অভিযোগ করেন, তাঁদের জীবিত সন্তানকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুলবশত বা অবহেলায় অন্য এক শিশুর সঙ্গে অদলবদল করেছে।
অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, শিশুটি জন্মের পরপরই মারা যায় এবং ভুলবশত মৃতদেহটি আরামবাগের বড়ডোঙ্গল এলাকার বাসিন্দা সাহানারা বেগম খন্দকারের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই দাবি ঘিরেই শুরু হয় সন্দেহ ও বিভ্রান্তি।
অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে আরামবাগ থানার পুলিশ। তদন্তের অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার মৃত শিশুটির দেহ কবর থেকে তুলে আরমবাগ মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয় চিহ্নিতকরণের উদ্দেশ্যে। সঙ্গেসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্মী এবং উভয় পরিবারের সদস্যরা।
চিহ্নিতকরণের পরও জেসমিনার পরিবারের দাবি, শুধু মুখ দেখে সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রকৃত সত্য সামনে আসবে—এই দাবি জানিয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএনএ টেস্টের আবেদন করেন।
পুরো ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্যদপ্তর উচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। শিশুবদল সংক্রান্ত অভিযোগ, হাসপাতালের গাফিলতি, প্রশাসনিক ব্যাখ্যা—প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জেসমিনার পরিবারের বক্তব্য— “আমাদের সন্তানের প্রকৃত খবর না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ন্যায়ের দাবি থেকে পিছিয়ে আসব না। সঠিক তদন্ত হোক এবং দোষীদের শাস্তি হোক।”
এই ঘটনার জেরে আরামবাগ মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তা, শিশুসেবা বিভাগে পর্যাপ্ত নজরদারি এবং নবজাতকদের পরিচয় রেকর্ডিং প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ডিএনএ রিপোর্ট হাতে এলে ঘটনায় প্রকৃত সত্যতা স্পষ্ট হবে বলে মনে করছে প্রশাসন।