‘গরু কি জানে যে সে আমাদের মা? গরু হয়তো মানুষদের দেখে মনে করে এ একটা অন্য প্রজাতির অত্যন্ত শয়তান প্রাণী!’ ভ্যালেন্টাইনস ডে-র আগে বিজেপির গরু জড়ানোর উদ্যোগকে কটাক্ষ।
নতুন বছরের ভালোবাসা দিবসে মোদী সরকারের আবেদন ছিল, ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ তথা ১৪ ফেব্রুয়ারির দিন গরুকে আলিঙ্গন করুন! ই নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রের প্রাণীকল্যাণ পর্ষদ। এর পরেই সারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গরুকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে প্রবল বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয় বিজেপি নেতাদের। কেউ কেউ আবার শিং-এর গুঁতো এবং গরুর পেছনের পায়ের আঘাতে ভীষণভাবে আহতও হন। এসব দেখে সমবেদনার বদলে সোশ্যাল মিডিয়াতে হাসির রোলই উঠেছে বেশি। কেন্দ্রের শাসকদলের অপমান এড়াতে শুক্রবারই গরুকে জড়ানোর নির্দেশ বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় পশু কল্যাণ পর্ষদ। এমন আজব পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে সঠিক যুক্তিসহ প্রায় তুলোধনা করলেন বিশিষ্ট লেখক ও বক্তা চন্দ্রিল ভট্টাচার্য।
শুক্রবার অনুষ্ঠানে কেন্দ্রের ‘গরু আলিঙ্গন দিবস’ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে চন্দ্রিল বলেন, ‘গরু আলিঙ্গনে বেশ ঝামেলা রয়েছে। প্রথম কথা হল, আজকালকার দিনে কারও সম্মতি ছাড়া কাউকে আলিঙ্গন করা যায় না। আমরা না হয় গরুকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছি, গরুর কি এই জড়াজড়িতে সম্মতি রয়েছে? আমরা তো জানি গরু আমাদের মা। কিন্তু গরু কি জানে যে, সে আমাদের মা? হয়তো জানে না। গরু হয়তো মনে করে, এ একটা অন্য প্রজাতির অত্যন্ত শয়তান প্রাণী! যে রোজ গোরুর বাচ্চাকে বঞ্চিত করে গরুর দুধটা চুরি করে নিয়ে নিজের বাচ্চাকে খাওয়ায়। গরুকে গলায় দড়ি বেঁধে টানতে চানতে নিয়ে যায়। খোঁটায়ে বেঁধে রাখে। কখনও গাড়িতে জুতে দেয়। ফলে হয়তো গরুর কাছে আমরা সন্তান নই। গরুর কাছে আমরা হয়তো ‘প্রভু’ বা ‘অত্যাচারী’।
কেন্দ্রের আজব নিদান নিয়ে চন্দ্রিল আরও বলেন, এখন গরু যদি দেখে যে, তার অত্যাচারী প্রভু জোরে ছুটে আসছে ‘মাতাজি’ ‘মাতাজি’ বলে জড়িয়ে ধরতে, তখন সে হয়তো ঘাবড়ে যেতে পারে। আত্মরক্ষার্থেই সে হয়তো গুঁতিয়ে দিতে পারে। এবার পেটে যে ফুটোটা হবে, বা কপালে যে রক্তপাত হবে, তার দায় কে নেবে? সেই খরচ কে নেবে? এ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রশ্ন। তারপর এরকম হতে পারে যে গরুর অত্যন্ত নার্ভাস লাগল। কারণ আসমুদ্র হিমাচল থেকে প্রচুর লোক আসছেন আলিঙ্গন করতে, এসব দেখে গরু হয়তো নার্ভাস হয়ে গেল, এতটাই নার্ভাস হল যে, হয়তো তার দুধটা কেটে দই হয়ে গেল। ফলে, তার পরের দিন যে বিশাল আর্থিক ক্ষতিটা হবে, তার দায় কে নেবে?
সব শেষে চন্দ্রিলের সংযোজন, এইসব আর্থ সামাজিক বিষয়গুলির সঙ্গে আরও কিছু ব্যবহারিক প্রশ্ন রয়েছে। তা হল, একটা দু’পেয়ে জানোয়ার গিয়ে একটা চারপেয়ে জানোয়ারকে জড়াচ্ছে। তাহলে কী করে জড়াবে? তাহলে কী দু’পা এগিয়ে গিয়ে হাঁড়ির মতো মুখটাকে জড়িয়ে ধরবে? তাহলে তো তার শিংটা পেটে ফুটে যাবে। নাকি গরুকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, দু’পায়ে হাঁটতে বা জড়াতে? গরু তো খুব… মানে… ‘মা’ বটে, কিন্তু বুদ্ধিমতী মা হিসেবে তো অতটা পরিচিত নয়। তাহলে গরু কতদিনে সেই প্রশিক্ষণ পাবে? এই ১৪ তারিখের মধ্যে কি? নাকি সামনের বছর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে সেই জন্যই একটু বাড়তি সময় দেওয়া হল। নাকি, মানুষকেই চার পায়ে গিয়ে চারপেয়ে জানোয়ারটাকে জড়িয়ে ধরতে হবে? যদি তা করেন, অনেক নেতাহোতাও বলছেন যে, তাঁরা তা করবেন, তাহলে চার পায়ে খুড়খুড় করে ছুটে গিয়ে একটা চারপেয়ে জানোয়ারকে তাঁরা জড়িয়ে ধরছেন, এটা যখন মোবাইলে, হোয়াটসঅ্যাপে বা ফেসবুকে, সর্বত্র দেখানো হবে, সেটা কি তাঁদের পক্ষে খুব শোভন হবে? এই সমস্ত নন্দনতত্ত্ব, দর্শন, অর্থনীতি এবং সামাজিক যে ব্যাপারস্যাপার, এতগুলো গূঢ় প্রশ্ন, আমাদের আগে মীমাংসা করতে হবে তার উত্তরগুলোকে, তারপর ভাবতে হবে যে, ওই দিনটা ‘গরু জড়াও দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা আদৌ উচিত হয়েছিল, না, হয়নি।
আরও পড়ুন-
তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে ‘মৃতের সংখ্যা পেরিয়ে যেতে পারে ৫০ হাজার’, হাতের ট্যাটু দেখে খুঁজে পাওয়া গেল ভারতের বিজয় কুমারের দেহ
জমি বিতর্কে এবার কড়া হলেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ
সত্যিই কি বিয়ে করছেন না কৃতী স্যানন আর প্রভাস? সমালোচকের ‘উড়ো’ খবরে রে রে করে তেড়ে এলেন নেটিজেনরা