'পরিস্থিতি আর আগের মত নেই। শাসকদলের প্রকৃত চেহারা সবার সামনে ফাস হয়ে গিয়েছে।'
'ফুরফুরা শরিফে নেতা পাঠিয়ে লাভ হবে না', শুক্রবার বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দিতে এসে বললেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। উল্লেখ্য এর ঠিক আগেই ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ফিরহাদ হাকিমের হাত থেকে হুগলি জেলা তৃণমূলের নেতা তথা আদি সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্তর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার পরে বুধবার রাতে ফুরফুরা শরিফে গিয়ে ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁরা। এই প্রসঙ্গেই এবার বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দিতে এসে মুখ খুললেন ভাঙরের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তাঁর কথায়,'ফুরফুরা শরিফে যে কেউ আসতে পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক জমি ফেরাতে আসতে চাইলে আমি বলব অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি আর আগের মত নেই। শাসকদলের প্রকৃত চেহারা সবার সামনে ফাস হয়ে গিয়েছে।'
নওশাদ এদিন আরও বলেন,'রাজ্যের পরিস্থিতি ঠিক কী তা সাধারণ মানুষ জানেন। তাই ভোট হলে মানুষ নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে বার বার সাগরদিঘির মতো ঘটনা ঘটাবে।' প্রসঙ্গত, গত শনিবারই ৪২ দিন পর জেল থেকে মুক্তি পান আইএসেফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি। শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ ছাড়া পান তিনি। এদিন নওসাদকে অভিনন্দন জানাতে জেলের বাইরে উপচে পড়ছে ভিড়। ভাইজান ভাইজান রব উঠতে থাকে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের বাইরে। জেল থেকে মুক্তি পেইয়েই ফের হুঙ্কার দিলেন আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি। এদিন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের বাইরে ফের একবার দৃপ্ত কন্ঠে নওসাদ বললেন 'আমি এক ফোটাও ভয় পাইনি।' এদিন নওসাদের পাশাপাশি ছাড়া পেলেন আরও ২১ জন আইএসএফ কর্মী। সংশোধনাগারের বাইরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন আইএসএফ সমর্থকরা।
শনিবার ৪২ দিন পর জেল থেকে মুক্তি পেলেন নওসাদ সিদ্দিকি। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন,'কী ভেবেছে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছি? এক ফোটাও ভয় পাইনি। আমার রাজনৈতিক জীবনে আমি কোনও অগণতান্ত্রিক কাজ করিনি। তাই ভয় পাওয়ার প্রশ্নও নেই।' তিনি আরও বলেন,'৩০৭ ধারা দিয়ে আমায় আটকে রেখেছিল। কোনও মানেই হয় না। বেআইনিভাবে গ্রেফতার করে রেখেছিল।' শাসকদলের উদ্দেশ্যে নওসাদের বার্তা,'শাসকদলকে বলব জেলের মান উন্নত করুন। সেন্ট্রাল লক আপ অনুন্নত।' নওসাদের সংযোজন,'আমি লড়াই জারি রাখব। মানুষের পাশে সর্বদা থাকব।'
জামিন পাওয়ার পরেও শুক্রবারও প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগাড়েই থাকতে হল নওসাদ সিদ্দিকিকে। এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগাড় কর্তৃপক্ষ। এই প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করা হলে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী জানান,'আইনি জটিলতার কারণে কোনও কারণবশত আদালত থেকে মুক্তির কাগজ এসে পৌঁছয়নি। জেলের সমস্ত লকআপও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর পর যদি কাগজ আসেও। তা হলে নিয়ম মেনে লকআপ খোলার পর অর্থাৎ আগামী কাল সকালে তাঁকে ছাড়া হবে।' প্রসঙ্গত, বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি-সহ একাধিক দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারির প্রতিবাদে শহরের বুকে বিশাল মিছিলের পরিকল্পনা আইএসএফ-এর। বুধবার দুপুর ১ টা নাগাদ শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলার উদ্দেশ্যে রওনা হবে এই মিছিল। সপ্তাহের কর্মব্যস্ত দিনে এই মিছিলের কারণে তীব্র যানজটের আশঙ্কা থাকছে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার একাধিক জায়গায়। এমনকী শহরের একটা বড় অংশের ট্রাফিক পরিষেবা অচল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। মিছিল এসএন ব্যানার্জি রোড ধরে এগোনোর কারণে রবীন্দ্র সদন-পাইকপাড়া, সন্তোষপুর-বৈশালী, ঘটকপুকুর-বাবুঘাট, সল্টলেক-বাবুঘাট, তপসিয়া-বাবুঘাট, বাগবাজার-খিদিরপুর, হাই কোর্ট-পিকনিক গার্ডেন ইত্যাদি রুটের বাসে প্রভাব পড়বে।
আরও পড়ুন -
অনুব্রত-হারা বীরভূমে তৃণমূলের হাল ধরবে কে? কোর কমিটি নিয়ে জোরদার কর্মসূচিতে নামছে শাসক শিবির