'মদনবাবুর একটু আধটু পানের অভ্যাস রয়েছে, সুতরাং ওনার কথায় আমল দিচ্ছি না', দ্য কেরালা স্টোরি ব্যান বিতর্কে বললেন শুভাপ্রসন্ন

দ্য কেরালা স্টোরি ব্যান নিয়ে শুভাপ্রসন্ন-র বক্তব্যে প্রবল বিরক্ত মদন মিত্র। আর এর জন্য মদন পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছিলেন শুভাপ্রসন্নকে। এদিকে, শুভাপ্রসন্ন ফের মদনকে নিশানা করেন। এরপর ফের একপ্রস্থ মদনকে বাক্যবাণে বিঁধলেন শিল্পী।

Web Desk - ANB | Published : May 11, 2023 4:30 PM IST / Updated: May 12 2023, 12:32 AM IST

দ্য কেরালা স্টোরি ব্যান বিতর্কে শুভাপ্রসন্নর উক্তি এখন ঘৃতাহূতি দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস শিবিরে। কারণ, শুভাপ্রসন্ন দ্ব্যথহীন ভাষায় দ্য কেরালা স্টোরি ব্যান নিয়ে রাজ্য সরকার ও বকলমে তৃণমূল কংগ্রেসের সমালোচনা করেছিলেন। এমনকী, দ্য কেরালা স্টোরি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ানও যে তাঁকে অখুশি করেছে তাও তিনি জানিয়েছিলেন একটি টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলকে। শুভাপ্রসন্নর এই উক্তি বিতর্কের ঝড়ে ময়দানে নেমেছেন মদন মিত্রও। বৃহস্পতিবারও তিনি ফের একবার শুভাপ্রসন্নকে ভালমতো গালিগালাজ করেন। কুকুর বলেও শুভাপ্রসন্নকে সম্বোধন করেন মদন। তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মদন মিত্র-র এই ভয়ানক আক্রমণ নিয়ে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা কথা বলেছিল শিল্পী শুভাপ্রসন্নর সঙ্গে। প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে শুভাপ্রসন্ন বলেন, 'আসলে সন্ধ্যা হলেই মদনবাবুর এক পাত্র-দুপাত্র পানের অভ্যাস রয়েছে তো, তাই উনি এমন কথা বলে ফেলেন, নিজে বুঝতে পারেন না যে কি বলছেন। তাই ওনার এই বালকসুলভ মন্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া সেই অর্থে দেওয়ার নেই।'

শুভাপ্রসন্ন আরও বলেন যে, মদন মিত্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও খারাপ নয়, কিন্তু যা খারাপ তাকে খারাপ বলতেই হবে। শুভাপ্রসন্ন-র মতে, একজন শিল্পীর স্বাধীনতা থাকা উচিত। আর তাই তিনি একজন শিল্পী হিসাবে আর এক শিল্পী-র পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে, দ্য কেরালা স্টোরি নিয়ে রাজ্য সরকারের এই ব্যান ধোপে টিকবে না বলেই মনে করছেন শিল্পী। তাঁর মতে, আর কিছুদিন বাদেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চলে আসবে দ্য কেরালা স্টোরি। তখন তো সব মানুষই তা দেখতে পাবে। আর ইতিমধ্যেই দ্য কেরালা স্টোরি ভালোই ব্যবসা করে নিয়েছে। সুতরাং, এই ব্যানের মধ্যে দিয়ে যেটা হল তাতে মুক্ত চিন্তা ও স্বাধীন মত প্রকাশে পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তিতে কালো দাগ পড়ল।

শুভাপ্রসন্ন আরও মনে করেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দ্য কেরালা স্টোরি নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে যদি ছবিটা দেখতেন তাহলে হয়তো এমন বিতর্ক তৈরি হত না। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বুঝতে পারতেন যে ছবিটিকে ব্যান করার দরকার আছে না নেই। শুভাপ্রসন্ন-র দৃঢ় বিশ্বাস কেউ বা কারা ছবিটি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইচ্ছে করে ভুল বুঝিয়েছেন। শিল্পী-র মতে, তিনি বরাবরই মুক্তি চিন্তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। যার জন্য বজরং দল যখনই মুসলিমদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে তাতেও তিনি সমানভাবে সরব হয়েছেন।

একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুভাপ্রসন্ন বলেছিলেন যে, রাজনৈতিক মঞ্চের বৃহৎতর প্রেক্ষাপটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরিচিতি পেতেও তিনি সাহায্য করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে এদিন আর নতুন করে কিছু বলতে চাননি শুভাপ্রসন্ন। এশিয়ানেট নিউজ বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, যা বলার ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছি। আর সেগুলো নিয়েই এখন চর্চা চলছে। তাই নতুন করে আর এতে বলার কিছু নেই।

বাম জামানায় বাংলার বুদ্ধিজীবী মহলে শুভাপ্রসন্ন পরিচিত ছিলেন একজন বামপন্থী মনোভাবাপন্ন হিসাবে। কিন্তু, সিঙ্গুর আন্দোলন থেকে আস্তে আস্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে বাড়তে একটা চরম জায়গায় পৌঁছেছিলো। কিন্তু, সারদা চিটফান্ডের তদন্তে একটা সময় শুভাপ্রসন্ন-র সঙ্গে দূরত্বও বেড়ে গিয়েছিল শুভাপ্রসন্ন-র। পরবর্তী সময়ে সময়ের প্রলেপে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ফের একটা যোগ তৈরি হয় শুভাপ্রসন্নর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও ফাঁটল ধরা সম্পর্ক জোড়া লেগে যায় এই সময়।

যদিও, সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভিত্তি করে যেভাবে নবজোয়ারের ঢেউ উঠেছে তাতে ফের একটু হলেও অবেহেলিত শুভাপ্রসন্ন। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহল সূত্রে তেমনই খবর। মাঝখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি-র শীর্ষনেতা অমিত শাহ-র সঙ্গে শুভাপ্রসন্ন-র সাক্ষাৎ নিয়েও চর্চা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলে। দ্য কেরালা স্টোরি-র ব্যানের বিরোধিতার পিছনে শুভাপ্রসন্ন অন্য কোনও রাজনৈতিক সমীকরণের অঙ্ক কষছেন কি না তা নিয়েও এখন জোর আলোচনা। যদিও, শুভাপ্রসন্ন-র মতে, তিনি এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই কাছের মানুষ। রোজই মমতার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘক্ষণ ফোনে কথা হয়। এমনকী, দ্য কেরালা স্টোরি ব্যান বিতর্কে শুভা-র মন্তব্যের তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। পরে তিনি শুভাপ্রসন্ন-র বাড়িতেও যান।

এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুভাপ্রসন্ন জানান, কুণাল তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। আর বিষয়টি মিটমাটও হয়ে গিয়েছে। তাই দ্য কেরালা স্টোরি-র ব্যানে তাঁর মন্তব্যে যারা বিতর্কের আঁচ খুজছিলেন তা আর তা পাবেন না। তবে, দ্য কেরালা স্টোরি-র ব্যান যে একটা ভুল সিদ্ধান্ত, সেই বয়ান থেকে তিনি কোনওমতে সরছেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন শুভাপ্রসন্ন।

Share this article
click me!