অমরনাথে হড়পা বানের ধাক্কা যে এই রাজ্যেও লেগেছে তা আগেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু বাংলা থেকে যাওয়ার পূণার্থীর মৃত্যু তা সামনে এসেছে শনিবার। অমরনাথের ভয়াবহ দুর্যোগ কেড়ে নিয়েছে বাংলার এক তরুণীর প্রাণ।
পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে তীব্র জলের স্রোত। সঙ্গে বড় বড় পাথর, ছোট-বড় নুড়ি, সঙ্গে কাদা। অমরনাথের গুহার পাশ দিয়ে নেমে আসা হড়পা বানের এই ছবি এখন দেশজুড়ে পরিচিত। আর এই হড়পা বানের হাত থেকে মাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিলেন বাংলার এক তরুণী গবেষক। নাম বর্ষা মুহুরী। বাড়ি বারুইপুরের সেগুন বাগানের চক্রবর্তী পাড়ায়।
রবিবার রাতেই কলকাতায় ফিরেছে বর্ষার কফিনবন্দি দেহ। সোমবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। জানা গিয়েছে, ৫ জুলাই পহেলগামে পৌঁছে ঝড় ও ঝঞ্ঝার মধ্যে পড়েন বর্ষারা। এরমধ্যে তাঁরা গিয়ে পৌঁছেছিলেন অমরনাথের মুখে। প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সকলেই তখন আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করছিলেন। কী করলে প্রাণে বাঁচবেন তা চেষ্টা করছিলেন। এই পরিস্থিতিতে মা নিবেদিতা মুহুরীকে হড়পা বানের মুখের সামনে থেকে নিরাপদ স্থানে আনতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বর্ষা। মা-কে ঠেলে তিনি নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন। কিন্তু নিজে নিখোঁজ হয়ে যান। পরে দুর্যোগ মিটলে সেনাবাহিনী তল্লাশি অভিযানে হড়পা বানের ফেলে যাওয়া পাথচর-নুড়ি ও কাদার জলের মধ্যে থেকে বর্ষার নিথর দেহ উদ্ধার করে।
পরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যে নতুন করে মৃতদেহ উদ্ধারের যে তালিকা প্রকাশ করা হয় তাতে বর্ষার নাম দেওয়া হয়। বারুইপুর পুরসভার ছ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বর্ষা এবং তাঁর পরিবার। ১ জুলাই বর্ষা ও তাঁর মা নিবেদিতা, মামা সুব্রত চৌধুরী, প্রতিবেশী উজ্জ্বল মিত্র এবং তাঁর স্ত্রী ও কন্যা এবং উদয় ঘোষ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা অমরনাথ দর্শনের জন্য রওনা হয়েছিলেন বারুইপুর থেকে। বছর ২৫-এর বর্ষা ভূগোলে স্নাতকোত্তর পাশ করে গবেষণায় নাম লিখিয়েছিলেন। বর্ষার বাবা চন্দন মুহুরী অসুস্থ থাকায় তিনি অমরনাথে যেতে পারেননি।
শনিবার রাতেই বর্ষার মৃত্যুর খবর বারুইপুরে তাঁর এলাকায় পৌঁছয়। খবর পায় বারুইপুর পুরসভাও। এরপর স্থানীয় বিধায়ক বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রবিবার রাতেই বর্ষার কফিনবন্দি দেহ কলকাতায় পৌঁছয়। মরদেহের সঙ্গেই ছিলেন অমরনাথে যাওয়া বর্ষার মা এবং আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরাও।