সংক্ষিপ্ত

গণেশ এবং কার্তিক দুজনেই শিব এবং পার্বতীর অত্যন্ত স্নেহের দুই সন্তান। কিন্তু, এই দুই সন্তানের মধ্যেই একদিন বেধে গেল বিষম ঝগড়া।

সিদ্ধিদাতা গণেশ জ্ঞান, বুদ্ধি এবং সাফল্যের দেবতা। তিনি হলেন শিব এবং পার্বতীর পুত্র। তাঁর বড় ভাই হলেন কার্তিক। গণেশ এবং কার্তিক দুজনেই শিব এবং পার্বতীর অত্যন্ত স্নেহের দুই সন্তান। কিন্তু, এই দুই সন্তানের মধ্যেই একদিন বেধে গেল বিষম ঝগড়া। ভগবান শিবের বাড়িতে একদিন এসেছিলেন নারদ মুনি। তাঁর কাছে ছিল সৃষ্টির দেবতা ব্রহ্মার দেওয়া একটি আম। সেই আম যে খাবে, সে-ই হয়ে উঠবে মহাবিশ্বের সেরা জ্ঞানের অধিকারী। এই আমের কথা জানতে পেরেই দ্বন্দ্ব লেগে গেছিল দুই ভাইয়ের মধ্যে। 

কার্তিক এবং গণেশ, উভয়েই নারদ মুনির নিয়ে আসা ওই আম খাওয়ার জন্য প্রচণ্ড ঝগড়া করতে থাকেন। শিশু-পুত্রদের থামাতে ঘটনাস্থলে তড়িঘড়ি ছুটে আসেন মা পার্বতী। তিনি অনেক চেষ্টা করেও দুজনকে শান্ত করতে না পেরে নিজের স্বামী মহাদেবের কাছে প্রতিকার চান। ভগবান শিব তখন দুই ভাইয়ের মধ্যে একটি শর্ত রাখেন। তিনি এবং পার্বতী নিজেদের দুই পুত্র কার্তিক এবং গণেশকে বলেন যে, দুজনের মধ্যে যে গোটা পৃথিবীকে মোট ৩ বার প্রদক্ষিণ করে সবচেয়ে আগে ফিরে আসতে পারবে, সে-ই এই জ্ঞান-ফল খেতে পারবে। 

ভগবান গণেশের বাহন হল ছোট্ট ইঁদুর আর কার্তিকের বাহন ময়ূর। স্বাভাবিকভাবেই, কার্তিক প্রথম থেকেই জানতেন যে, ইঁদুরের গতি ময়ুরের থেকে বেশি হতে পারবে না, অতএব গোটা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে গণেশের আগে তিনিই এসে বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছতে পারবেন। তাই তিনি এক মুহূর্ত চিন্তা না করে সঙ্গে সঙ্গে নিজের বাহনের পিঠে চড়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে বেরিয়ে পড়লেন। কিন্তু, গণেশ কিন্তু নির্বিকার রইলেন। তিনি মোটেই ইঁদুরের পিঠে চেপে বেরিয়ে পড়লেন না। 

শিব এবং পার্বতী পুত্র গণেশকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তিনি কেন নিজের বড় ভাইয়ের মতো সারা পৃথিবীটা প্রদক্ষিণ করতে বেরিয়ে পড়লেন না। এই প্রশ্ন শুনে গণেশ ধীরে ধীরে উঠে শিব এবং পার্বতীর চারিদিকে ঘুরে আবার যথাস্থানে এসে উপস্থিত হলেন। একবার নয়, পর পর তিন বার। তারপর তিনি বললেন, ‘আমার বাবা-মা, শিব এবং পার্বতী, সারা বিশ্ব জুড়ে আছেন। সমগ্র পৃথিবী রয়েছে আমার বাবা-মায়ের মধ্যেই। আমি আমার বাবা-মাকে প্রদক্ষিণ করার মাধ্যমেই সারা বিশ্বকে প্রদক্ষিণ করে নিয়েছি। আমার আর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।’ 

বলা বাহুল্য, কার্তিক যখন ময়ূরের পিঠে চড়ে সারা দুনিয়াকে তিন বার পাক খেয়ে ঘুরে এসে নিজের বাবা-মায়ের সামনে এলেন, তখন তিনি দেখলেন, তাঁর ভাই গণেশ এখনও পর্যন্ত বাড়ি থেকেই বের হননি। তিনি ভারী খুশি হয়ে ভেবে নিলেন যে, এই প্রতিযোগিতায় তিনিই জয়ী হয়েছেন। কিন্তু, শিব আর পার্বতী তাঁদের শিশু-পুত্র গণেশের বুদ্ধি আর শ্রদ্ধা দেখে তাঁকেই জ্ঞানসমৃদ্ধ ফল দিয়ে পুরস্কৃত করলেন। 

আরও পড়ুন- 
Weather News: ঘূর্ণাবর্তের দাপটে ফের বৃষ্টির ভ্রূকুটি! বিশ্বকর্মা থেকে গণেশ, কোনও পুজোই ছাড় পাচ্ছে না দুর্যোগ থেকে 
সংসারে সমৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য গণেশের মূর্তি রাখেন অনেকেই, কিন্তু সিদ্ধিদাতাকে ঠিক কীভাবে রাখলে তবেই ফিরবে সৌভাগ্য?
Ganesh Chaturthi: শিশুপুত্র গণেশের মাথায় কীভাবে এল হাতির মস্তক? জেনে নিন পুরাণের ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী