সংক্ষিপ্ত

কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো দুই বঙ্গের বড় উৎসব। এই বঙ্গে যেমন ভোগের মধ্যে অন্নভোগের রেওয়াজ রয়েছে ঠিক তেমনি পূর্ববঙ্গে রয়েছে ইলিশ মাছভোগের বৃত্যান্ত। লক্ষ্মীপুজোর ভোগ নিয়ে লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার।

শারদপূর্ণিমার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো দুই বঙ্গের বড় উৎসব বলে পরিচিত। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে লক্ষ্মীপুজোয় বিভিন্ন ভোগের রেওয়াজ রয়েছে। এই বঙ্গের বেশিরভাগ বাড়ির পুজো এবং বারোয়ারি পুজোতে  অন্নভোগেরই রেওয়াজ রয়েছে। কেউ কেউ অন্নভোগের জায়গায় লুচিভোগ দিয়ে থাকেন। লক্ষ্মীপুজোয় পূর্ববঙ্গের জনপ্রিয় পদ ইলিশ মাছকে ভোগ হিসেবে দেওয়ার প্রচলন আছে। প্রাচীন শাস্ত্র এবং পুরাণ ঘেঁটে জানা যায়, আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগর লক্ষীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। লক্ষ্মীপুজো সনাতন ভারতবর্ষের একটি বহু প্রাচীন উৎসব।  আশ্বিনমাসের শারদপূর্ণিমার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো দুই বঙ্গের বড় উৎসব বলে পরিচিত।

লক্ষ্মীপুজোয় দেবীকে গুড়ের মুড়কি, নাড়ু ও বাতাসা দেওয়া হয়।  চিনি দিয়ে তৈরি কিছু চলে না বলেই নাকি প্রতিবিধান রয়েছে। ফলের মধ্যে রয়েছে আখ আর আতা দেওয়ার রীতি। দেবীর পুজোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে পদ্ম আর লাল শালুক ফুলে পুজো হয়। দেবীকে দেওয়া হয় ধানের ছড়া। কোথাও কোথাও ধানের ছড়া-সহ পুরো ধানগাছ দেওয়া হয় দেবীকে।

লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষ্যে নানারকমের নাড়ু তৈরি হয় যার মধ্যে– তিলের নাড়ু, চিঁড়ের নাড়ু, নারকেল নাড়ু, গুড়ের নাড়ু, ক্ষীরের নাড়ু বেশ জনপ্রিয়। এই নাড়ুর সাথে থাকে খই, খইয়ের মুড়কি, চিঁড়ে মাখা। এই চিঁড়ে নারকেলের জল দিয়ে ধুয়ে নারকেল কোড়া, এলাচ গুঁড়ো, কর্পূর, মধু, ঘি আর চিনি দিয়ে মাখতে হয়।
বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে লক্ষ্মীপুজোয় বিভিন্ন ভোগের রেওয়াজ রয়েছে। যেমন নদীয়াতে দেবীকে দেওয়া হয় মুড়ি, মুড়কি, ছোলা, মটর, তিল। তার সঙ্গে থাকে বিভিন্ন ধরনের ফল ও মিষ্টান্ন। চলে আসি হাওড়া-হুগলী এবং বর্ধমানের কথায়। এই তিন জেলায় পুজোর প্রসাদ হিসেবে চিঁড়ে, মুড়কি, নারকেল, বাতাসা, তালের ফোঁপড় ইত‍্যাদি দেওয়া হয়।অন্যদিকে মুর্শিদাবাদের বহু জায়গায় পুজোর উপাচার হিসাবে ‘পঞ্চ অঙ্কুরীয়’ উৎসর্গ করা হয় দেবীকে। পঞ্চ অঙ্কুরীয় বলতে বোঝায় পাঁচ রকমের অঙ্কুরিত খাদ্যশস্য। পঞ্চ অঙ্কুরীয় হল- ছোলা, মুগ, মটর, মসুর ও কলাই । এর পাশাপাশি থাকে নারকেল, তিল, ঝুরি, ছোলা ও ক্ষীরের নাড়ু।

আরও পড়ুন- কোজাগরী পূজা কখন হয়, জেনে নিন দেবী লক্ষ্মীর আরাধনার শুভ মুহুর্ত ও গুরুত্ব

আরও পড়ুন- ২০২২ সালের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর নির্ঘন্ট, জেনে নিন কবে কখন ও ঠিক কটায় হবে দেবীর আরাধনা

আরও পড়ুন- ঘরের এই দিকে প্রতিষ্ঠা করুন দেবী লক্ষ্মীর মূর্তি, সম্পদ ঐশ্বর্যে ভরে উঠবে সংসার


এই বঙ্গের বেশিরভাগ বাড়ির পুজো এবং বারোয়ারি পুজোতে  অন্নভোগেরই রেওয়াজ রয়েছে। খিচুড়ি, ছাঁচড়া, ভাজা, শাক, চাটনি এসবই দেওয়া হয় মূলত। কেউ কেউ অন্নভোগের জায়গায় লুচিভোগ দিয়ে থাকেন। সেখানে লুচির সঙ্গে তরকারি, ভাজা, সুজি ইত‍্যাদি থাকে।
পূর্ববঙ্গে অনেক পরিবারে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় মাছ ভোগ দেবার প্রচলন আছে, বিশেষত ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশাল অঞ্চলে দেবীকে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। সেকারণে পূর্ববঙ্গের জনপ্রিয় পদ ইলিশ মাছকে ভোগ হিসেবে দেওয়ার ব‍্যাপক প্রচলন আছে। এছাড়া অন্নভোগে খিচুড়ি, ভাজা, শাক, চাটনি, ডাবের জল ইত‍্যাদি দেওয়া হয়। কেউ কেউ অন্নভোগের জায়গায় দেন লুচিভোগ সঙ্গে তরকারি, ভাজা, সুজি ইত‍্যাদি।