রীতি মেনে কর কাঠামো অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। অর্থাৎ এবারের বাজেটে আয়করের হারে কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি।
বুধবার থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলা লোকসভা নির্বাচনের আগে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ১ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করেন। এই বাজেট মোদী সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট। এবার সংসদে ষষ্ঠ বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী। মোরারজি দেশাইয়ের পর সীতারামন হলেন দ্বিতীয় অর্থমন্ত্রী, যিনি ছয়বার বাজেট পেশ করার সুযোগ পেয়েছেন। আয়কর কাঠামো অপরিবর্তিত রাখার কথা ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর।
রীতি মেনে কর কাঠামো অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। অর্থাৎ এবারের বাজেটে আয়করের হারে কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জিডিপির বিপরীতে দেশের রাজস্ব ঘাটতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কর প্রাপ্তির বাজেটও সংশোধন করা হয়েছে। আমরা আর্থিক একত্রীকরণের লক্ষ্য সংশোধন করছি। ২৪-২৫ সালের জন্য দেশের রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির মোট আকারের ৫.১ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে।
৮৩ লাখ স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে দেশে। মহিলাদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে। এর ফলে এক কোটি মহিলা স্বনির্ভর হয়েছেন। ‘লাখপতি দিদি’র সংখ্যা দু’কোটিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
৪০ হাজার রেল বগি বন্দে ভারতের মত করে তৈরি করা হবে। জোর দেওয়া হবে রেল যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যে। তিনটি বিশেষ রেল করিডর তৈরির প্রস্তাব বাজেটে- অর্থমন্ত্রী
'সব আশাকর্মীকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার রুখতে টিকাকরণে জোর দেওয়া হচ্ছে। ৯ থেকে ১৪ বছরের মেয়েদের টিকাকরণে জোর দেওয়া হচ্ছে'
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন যে জন ধন অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করে ২.৭ লক্ষ কোটি টাকা সঞ্চয় করা হয়েছে এবং সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এত উচ্চ স্তরের যে এটি দেশকে নতুন দিকনির্দেশনা এবং নতুন আশা দিয়েছে। মোদী সরকার ব্যবস্থা করেছে যাতে দেশের সমস্ত রাজ্য এবং বিভাগগুলি সম্মিলিতভাবে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি থেকে উপকৃত হতে পারে। আর্থিক খাতকে আরও শক্তিশালী ও সহজে পরিচালনার জন্য সক্ষম করা হচ্ছে। দেশে মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠছে এবং মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান কমে এসেছে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন যে মোদী সরকার ২৫ কোটি মানুষকে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সফল হয়েছে। সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে মনোনিবেশ করছে এবং দরিদ্র, নারী, যুব ও কৃষকদের ক্ষমতায়নের উপর জোর দিচ্ছে। ৪ কোটি কৃষককে শস্য বীমা প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং ৭৮ লাখ বিক্রেতাকে প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি প্রকল্পের আওতায় সাহায্য করা হয়েছে। ৩৪ লক্ষ কোটি টাকা সরাসরি জনধনের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পুঁজি আসছে ভারতে। মূদ্রাস্ফীতি আমরা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছি। বিশ্বায়নকে নতুন ভাবে দেখছি। তার নতুন সংজ্ঞা দিচ্ছি। কোভিড পরবর্তী যে অর্থনীতি তাতে নতুন বিশ্ব তৈরি হচ্ছে। তাতে সামিল ভারত। অর্থমন্ত্রী বলেন মিডল ইস্ট ইকোনমিক করিডর তৈরি করা হবে। মধ্যপ্রাচ্য - ইউরোপ করিডোর গেম চেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হবে ভারতের জন্য।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে ১১.৮ কোটি কৃষককে সরকারী সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের মাধ্যমে নগদ অর্থ সরাসরি কোটি কোটি কৃষকের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। দেশের অন্নদাতা এই স্কিম থেকে উপকৃত হচ্ছে এবং ৪ কোটি কৃষককে পিএম ফসল যোজনার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ৩০০টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি এবং এক-তৃতীয়াংশ নারীদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।
নির্মলা সীতারমণ বলেন ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে আমাদের সরকার। ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশের সব শ্রেণির মানুষ যাতে সব সুবিধা পায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
আমাদের উন্নয়নের মন্ত্র সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস। উন্নয়নের ফল সব শ্রেণীর মানুষ পেতে শুরু করেছেন। ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত। এদিন বক্তব্য জানালেন অর্থমন্ত্রী
অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করতে শুরু করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। অন্তর্বর্তী বাজেট ভালো হবে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে আশ্বাস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর
অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট ২০২৪-এর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে এবং বাজেট উপস্থাপনের প্রায় দেড় ঘন্টা আগে, বাজেটের অনুলিপি নতুন সংসদ ভবনে পৌঁছেছে। কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও এসব বাজেটের কপি নিয়ে এখানে এসেছেন। নিরাপত্তা পরীক্ষার পরই বাজেটের অনুলিপি সংসদে প্রবেশ করানো হয়।
নিজের টিমকে সঙ্গে নিয়ে সংসদে পৌঁছলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
এই অন্তর্বর্তী বাজেটে রেলওয়ে গত বাজেটের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি বরাদ্দ পেতে পারে। রেলের বাজেট যা গতবার ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ছিল, এবার তা প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়াও, রেলওয়ের জন্য নতুন ট্রেনের ঘোষণাও সম্ভব, যদিও গত কয়েক বছর ধরে রেলওয়ে বাজেট আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে না এবং এটি সাধারণ বাজেটের সাথে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আজ কেন্দ্রীয় অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশের আগে, IMF-এর নির্বাহী পরিচালক এবং ভারত সরকারের প্রাক্তন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভি সুব্রামানিয়াম বলেছেন যে আপনি যদি বৃদ্ধির হার দেখেন তবে আপনার মনে রাখা উচিত যে কোভিড মহামারী চলাকালীন সময়ের কথা। আমরা বলেছিলাম প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হবে এবং এই পরিসংখ্যান এসেছে। কোভিড মহামারী চলাকালীন আমরা যে নীতিগুলি গ্রহণ করেছি এবং সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেছি তা অভাবীদের উপকৃত করেছে। মূলধন ব্যয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। তাই ভারতের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী এবং ভালো অবস্থায় রয়েছে। আইএমএফ এবং অন্যরা এটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
বাজেটে এই ১০টি বড় ঘোষণা হতে পারে-
বাড়ির জন্য সুদ সাবভেনশন স্কিম ঘোষণা করা হতে পারে।
আশা করা হচ্ছে যে NPS কে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ফোকাস থাকবে।
বাজেটে কিষাণ সম্মান নিধি বৃদ্ধি করা সম্ভব, সম্মান নিধি ৮০০০ টাকা থেকে ৯০০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
কৃষকদের ফসলের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা দেওয়া সম্ভব।
মহিলাদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে। গত ১০ বছরে বরাদ্দ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মহিলাদের জন্য সরাসরি নগদ স্থানান্তরের মতো স্কিমগুলি সম্ভব হতে পারে৷
মহিলাদের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প থাকতে পারে।
মহিলা কৃষকদের জন্য সম্মান নিধি ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
মহিলারা MNREGA-এর জন্য বিশেষ সংরক্ষণ এবং উচ্চতর সম্মানী আশা করতে পারেন।
এর জন্য মহিলাদের সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া যেতে পারে।
ছয় বারের মতো এটি উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এটি একটি অন্তর্বর্তী বাজেট যা নির্বাচনী বছরে পেশ হতে চলেছে। মনে করা হচ্ছে এই বাজেটের মাধ্যমে সরকার আগামী অর্থবছরে করণীয় উন্নয়নের ব্লুপ্রিন্ট পেশ করতে পারে। আগামী বাজেট থেকে দেশের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা রয়েছে। সরকারের এবারের বাজেটে গরিব, যুবক, কৃষক ও মহিলাদের জন্য বিশেষ বাজেট করতে পারে। বাজেটে এগুলোর জন্য অনেক বড় ঘোষণাও হতে পারে। এই কারণে, অনেকে বাজেটকে জ্ঞান এবং উপহারের বাজেটও বলছেন।
বুধবার থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাংবাদিকদের সামনে ভাষণ দেন। কারও নাম না নিয়ে সংসদে তোলপাড় সৃষ্টিকারী সাংসদদের কড়া পরামর্শ দেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার রেলকে ৩.২০ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট দিতে পারে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩০ শতাংশের বেশি হবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন গত বছর রেলকে ২.৪০ লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। এটি ২০১৩-১৪ সালের তুলনায় প্রায় ৯ গুণ বেশি। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সম্প্রতি বলেছিলেন যে দেশে প্রায় ৪০০টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন রুটে ৪১টি ট্রেন চলাচল করছে। এসব ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটারে বাড়ানোর কাজও চলছে। এছাড়া ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে ট্র্যাকসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন আনা হবে।