সংক্ষিপ্ত

স্বল্প মূলধনে (Low Capital) ব্যবসার মধ্যে অন্যতম হল দেশি মোরগ-মুরগির ব্যবসা  (Domestic Chicken Farming Business)। যা কম সময়ে আপনাকে অধিক লাভ (Profitable) দিতে পারে। জেনে নিন এই ব্যবসা করতে হলে কী কী মেনে চলতে হবে। 
 

বর্তমান বাজারে ব্যবসায় নামতে অনেকেই ভয় পান। কারণ ব্যবসা মানেই অনেকের ধারণা রয়েছে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন। কিন্তু অনেকের হয়তো অজানাএমন কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলিতে কম মূল ধন (Low Capital) বিনিয়োগ করেও অধিক লাভ (Profitable) করা যায়। অল্প মূলধনে যারা ব্যবসা করার চিন্তা-ভাবনা করছেন তাদের জন্য দেশি মোরগ-মুরগি হতে পারে একটি সময়পযোগি ব্যবসা (Domestic Chicken Farming Business)। সল্প জায়গায় অল্প টাকা বিনিয়োগ করে সল্প সময়ে অধিক আয় করা যায়। বসত বাড়িতে মুরগি চাষ হচ্ছে একটি সহজ এবং লাভজনক কাজ। বাড়ির গৃহিণীরা খামার স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারে। দেশে মোরগ বা মুরগির বাজারে চাহিদাও খুব।

মোরগ-মুরগির নির্বাচন-
ব্যবসার শুরুতে ৪০০-৬০০ গ্রামের মোরগ-মুরগি দিয়ে শুরু করলে ভাল ফলাফল আশা করা যায়। কারণ এই ওজনের মুরগি গুলি খুব দ্করুত বৃদ্ধি পায়। একটু ঠিকঠাক পরিচর্যা করতে পারলেই ২ মাসের মধ্যে সেগুলি ২ কেজির বেশি ওজন হয়ে যায়। ফলে বাজারে লাভের অঙ্কও ভালোই থাকে। তবে মোরগ-মুরগি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজেকেই একটি সতর্ক থাকতে হব। কোনও হ্যাচারি না থাকায় সুস্থ সবল ও নিরোগ মোরগ-মুরগি নিজেকেই নির্বাচন করতে হবে।  এছাড়া ব্রয়লার খামারের হাইব্রিড মুরগি উঠোনে ছেড়ে পালন করা যায় না। তাই খাঁটি জাতগুলোকে বাছতে হবে। যেমন, রোড আইল্যান্ড রেড (আরআইআর) বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প। রঘুনাথপুর, বালুরঘাটের রাজ্য মুরগি খামারে লাল বা আরআইআর এবং কালো বা  ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প মুরগির বাচ্চা পাওয়া যায়। ইদানীং কালে বনরাজা, গিরিরাজা, গ্রামরপ্রিয়া ইত্যাদি জাত কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছে।

কীভাবে মোরগ-মরগির ঘর তৈরি করবেন-
মোরগ-মুরগির জন্য খোলামেলা ঘর হতে হবে। ১.৫ মিটার (৫ ফুট) লম্বা X১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং ১ মিটার (৩.৫ ফুট) উঁচু ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের বেড়া বাঁশের  বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে। এছাড়া মাটির দেয়ালও তৈরি করা যাবে। বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। ঘরের চাল খড়, টিন বা বাঁশের তরজার সাথে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। এরকম এক একটি ঘরে ১০-১৫টি মোরগ বা মুরগি পালন করা যায়।

কী খাবার দেবেন-
বাড়ির প্রতিদিনের বাড়তি বা বাসী খাদ্য যেমন ফেলে দেওয়া ভাত, তরকারি,ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, ঘাস, লাতা পাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি মুরগি কুড়িয়ে খায়। দেশি মুরগি চরে বেড়িয়ে তার খাবার সংগ্রহ করে নিলেও এ ধরনের উন্নত জাতের মুরগির পুরো উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগাতে অল্প পরিমাণে সুষম খাবার দেওয়া প্রয়োজন। চালের গুঁড়ো (৩০০ গ্রাম), খুদ বা গম ভাঙা (২৮০ গ্রাম), সর্ষে/ তিল খোল ( ২০০ গ্রাম), মাছ বা সোয়াবিন গুঁড়ো (২০০ গ্রাম), ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশ্রণ যেমন সাপ্লিভিট এম (২০ গ্রাম)  মিশিয়ে মুরগির সংখ্যা অনুযায়ী মাথা পিছু ৫০-৭০ গ্রাম হিসাবে অর্ধেক সকালে ও অর্ধেক বিকালে খেতে দিতে হবে। রাতে মুরগি রাখার যে ঘর আছে, সেখানে নির্দিষ্ট পাত্রে জল ও খাবার দিতে হবে।

কীভাবে পরিচর্যা করবেন-
ছেড়ে পালন পদ্ধতিতে মুরগি পরিচর্যার জন্য সময় বা লোকজনের তেমন দরকার পড়ে না। তারপরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে। সন্ধ্যায় মুরগি ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে। ঘরে উঠলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া ২.৫ সে.মি. (১ ইঞ্চি) পুরু করে বিছাতে হবে। পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। এ পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন করা গেলে প্রায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই ভাল একটা মুনাফা পাওয়া যাবে।

কীভাবে প্রজনন ঘটাবেন-
স্বাভাবিক পদ্ধতিতে মুরগির প্রজনন ঘটিয়ে সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। কিন্তু তা অধিক মাত্রায় সম্ভব নয়। সংকরায়ণ পদ্ধতিতে দেশি মুরগির সঙ্গে উন্নত মোরগ রেখে প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটিয়ে দেশি মুরগির জিনগত উৎকর্ষতা বাড়ানো যায়। প্রতি ১০টি দেশি মুরগি পিছু ১টি উন্নত জাতের মোরগ রাখতে হবে। যে সংকর মুরগি জন্মাবে, তা দেশি মুরগির চেয়ে দ্রুত (৪-৫ মাস বয়সে) এবং প্রায় দ্বিগুণ (বছরে ১২০-১৪০টি) ডিম দেবে।

রোগ-ব্যধি এড়াতে কী কী ওষুধ ও টিকা ব্যবহার করবেন-
রোগব্যাধি মুরগি পালনের অন্যতম সমস্যা। তাই নিয়মিত মুরগির ঘর চুন বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে কৃমিনাশক ওষুধ (পাইপেরাজিন তরল বয়স অনুযায়ী ০.৫-১ মিলি) জলে গুলে খাওয়াতে হবে। রানিক্ষেত বা বসন্তের মতো কয়েকটি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত টিকাকরণ জরুরি। টিকা দেওয়ার দশ দিন আগে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। টিকাকরণ বিশেষত রানিক্ষেত টিকা ৭-১০ দিন বয়সে নাকে বা চোখে এক ফোঁটা, ৩০ দিন বয়সে আর এক বার, ২ মাস বয়সে প্রথম কৃমির ওষুধ এবং আড়াই মাস বয়সে ডানার তলায় ০.৫ মিলি ইঞ্জেকশন অবশ্যই নিতে হবে। ঝিমুনি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, পাতলা বা রক্ত পায়খানা নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকট্রিম ডিএস বা সেপম্যাক্স (১টি বড়ি ১০টি বড় বা ২০টি বাচ্চা মুরগির জন্য) খাবারে বা জলে গুলে ড্রপারে করে খাইয়ে দিতে হবে (৩/৫/৭ দিন)।

আয়ের পরিমাণ-
এই জাতীয় মোরগ-মুরগির মাংস ও ডিমের মূল্য বিদেশী মুরগীর তুলনায় দ্বিগুণ, এর চাহিদাও খুবই বেশি। বাজার দর বুঝে নিতে পারলে  লাভের অঙ্কটা আরও বেড়ে যাবে। ফলে উপরের আলোচ্য এই সকল পদ্ধতি একটু মেন চললেই এই ব্যবসা করা যেতে পারে। যা থেকে মাসে ৫০ হাজার বা তার বেশি রোজগার হতে পারে। গ্রামাঞ্চলে একটি ফাঁকা জমি থাকলে সবথেকে সুবিধা। বাড়ির ছাদেও ছোট আকারে এই ব্যবসা করা যেতে পারে।