সংক্ষিপ্ত

করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি

অক্সিজেনের মাত্রা যখন কমছে , তখনই মাথায় এসেছিল ভাবনাটা

এরপর করোনাকে হারিয়ে লেগে পড়েছিলেন অস্ত্র তৈরিতে

কলকাতার বিজ্ঞানী উপহার দিলেন পকেট ভেন্টিলেটর যন্ত্র

কথায় বলে ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার হলেও, আবিষ্কার তাঁর নেশা। ইতিমধ্যেই ৩০টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে। সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। অক্সিজেনের মাত্রা কমতে কমতে ৮৮-তে নেমে গিয়েছিল, শ্বাস নিতে কষ্ট। প্রায় স্বর্গের মুখে দাঁড়িয়েও তাঁর আবিষ্কারের নেশা যায়নি। সেই সময়ই একটি পোর্টেবল ভেন্টিলেটর তৈরি করার কথা মাথায় এসেছিল, কলকাতার বিজ্ঞানী রমেন্দ্রলাল মুখোপাধ্যায়ের। চেয়েছিলেন এমন এক যন্ত্র তৈরি করতে, যা হঠাত্‍ শ্বাসকষ্ট হলে রোগী সহজে ও দ্রুত ব্যবহার করতে পারে। আর সেই ভাবনাই থেকেই মূর্ত হয়েছে পকেট ভেন্টিলেটর।

কী এই পকেট ভেন্টিলেটর? রমেন্দ্রলাল জানিয়েছেন, যন্ত্রটির দুটি অংশ রয়েছে - পাওয়ার ইউনিট এবং ভেন্টিলেটর ইউনিট। ভেন্টিলের ইউনিটের সঙ্গে থাকে মাউথপিস, যা শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীকে মুখে লাগিয়ে নিতে হয়। যন্ত্রটি চালু করলেই বাইরের বাতাস পকেট ভেন্টিলেটরের আল্ট্রা ভায়োলেট চেম্বারের মধ্য দিয়ে রোগীর নাকে যেতে শুরু করবে। শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগী অবিলম্বে আরাম পাবেন। আল্ট্রা ভায়োলেট চেম্বারের মধ্য আসার ফলে সেই বাতাস থাকবে একেবারে জীবানু-মুক্ত। একই ভাবে ওই রোগীর থেকে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়, তার জন্য নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময়ও বাতাস আরেকটি ইউভি চেম্বারের মধ্য দিয়ে বাইরে আসবে।

আবিষ্কার ও আবিষ্কারক -  পকেট ভেন্টিলেটর যন্ত্র হাতে বিজ্ঞানী রমেন্দ্রলাল মুখোপাধ্যায়

কেন একে পকেট ভেন্টিলেটর বলা হচ্ছে? যন্ত্রটি বাজারে চলতি ভেন্টিলেটর যন্ত্রগুলির থেকে আকারে অনেক ছোট, ওজন মাত্র ২৫০ গ্রাম। দুটি ইউনিট-সহ যন্ত্রটি পকেটেই ঢুকে যায়। পাওয়ার ইউনিটের ব্যাটারিগুলি রিচার্জেবল। একবার চার্জ দিলে একটানা প্রায় ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে বলে দাবি করেছেন রমেন্দ্রনাথ। আরও সুবিধা হল, এই ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য দরকার যে কোনও স্মার্ট ফোনের ইউএসবি টাইপ ২ (USB type 2) চার্জার, যা বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই থাকে। শুধু তাই নয়, খরচের দিকেও নজর রেখেছেন রমেন্দ্রলাল। অত্যন্ত সাধারণ জিনিসপত্র দিয়ে  তৈরি এই যন্ত্র প্রচলিত ভেন্টিলেটর যন্ত্রগুলির তুলনায় দামে অনেক সস্তা হবে।

কোভিড আক্রান্ত হয়ে প্রায় মরণাপন্ন অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন আবিষ্কারক রমেন্দ্রলাল মুখোপাধ্যায়। কিন্তু, লড়াই তিনি ছাড়েননি। বাড়ির লোক হাসপাতালে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত বাড়িতে থেকেই কোভিডকে পরাস্ত করেছিলেন তিনি। পুরো সুস্থ হতে আরও কয়েকটা দিন লেগেছিল। আর তারপরই লেগে পড়েছিলেন মাথার আসা আইডিয়াটাকে কাজে লাগাতে। কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রয়োজনীয় অস্ত্র তৈরি করতে। সব উপকরণ জোগার করে পরিকল্পনা কাজ শুরু করেছিলেন রমেন্দ্রলাল। মাত্র ২০ দিনের মধ্যে তৈরি হয়েছিল পকেট ভেন্টিলেটরের প্রথম প্রোটোটাইপটি। আর এখন এই যন্ত্রের পেটেন্ট নিতে প্রস্তুত কলকাতার বিজ্ঞানী।