সংক্ষিপ্ত

রাজ্যে প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা

এখনও পর্যন্ত মৃতদের অধিকাংশেরই বা সহ-অসুস্থতা ছিল

তাহলে কি কোমর্বিডিটি থাকলে করোনা হলেই মৃত্যু হবে

দেখুন কী বলছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য

 

দেশের মতো রাজ্যেও প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমণ এবং তা থেকে মৃত্যুর সংখ্যা। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার, রাজ্যে ১১,৯৪৮ জন নতুন রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। এই ৫৬ জনের মধ্যে অধিকাংশেরই কোমর্বিডিটি বা সহ-অসুস্থতা ছিল। কিন্তু, কোমর্বিডিটি থাকা মানেই কি করোনা হলে মৃত্যু হবে? দেখা যাক কী বলছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া তথ্য।

২২ এপ্রিল স্বাস্থ্য দফতর যে বুলেটিন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে করোনা জনিত কারণে মোট মৃত্যু হয়েছে ১০,৭৬৬ জনের। এরমধ্যে ৮৯৫৫ জনের বা ৮৩.২ শতাংশের কোমর্বিডিটি অর্থাৎ অন্য অসুস্থতা ছিল, যার সঙ্গে কোভিড সংক্রমণ যুক্ত হয়ে তাঁদের প্রাণহানি ঘটেছে। বাকি ১৬.৮ শতাংশ মানুষ বা ১৮১১ জনের কিন্তু, মৃত্যু হয়েছে শুধুমাত্র  কোভিডের কারণেই। তাদের অন্য কোনও রোগ ছিল না। এখনও অবশ্য মৃত্যুর হার বেশি বয়স্কদেরই। ৭৫ ঊর্ধ্বদের মধ্যে মৃত্যুর হার ১০ শতাংশের উপরে। আর ৬১ থেকে ৭৫ বছরের বয়স গোষ্ঠীতে ৪.৪ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ৪৬ থেকে ৬০-এ মৃত্যুর হার ১.৪৬ শতাংশ। তার নিচে যাদের বয়স, তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার কিনতু ১ শতাংশেরও কম। এছাড়া মহিলাদের থেকে পুরুষদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।

কোন কোন কোমর্বিডিটি বা সহ-অসুস্থতা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে করোনা রোগীদের? এই তালিকায় রয়েছে হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, সিকেডি (CKD), সিওপিডি (COPD), ম্যালিগন্যান্সি। ডায়ালেসিস-এর প্রয়োজন হয় যাদের, তাঁদেরও করোনা হলে প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন বলছে, পুরুষ-নারী নির্বিশেষে যে সহ অসুস্থতা সবচেয়ে বেশি কোভিড রোগীর প্রাণ কেড়েছে, তা হল হাইপারটেনশন। এরপরেই রয়েছে ডায়াবেটিস। এরপর রয়েছে উপরে উল্লিখিত রোগগুলির বাইরে থাকা অন্যান্য রোগ। সিকেডি-ও বহু নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বহু করোনা রোগীর প্রাণ কেড়েছে।

আরও গভীরে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, হাইপারটেনশনের কারণে যে করোনা রোগীদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ৬১ থেকে ৭৫-এর মধ্যে। এই বয়স গোষ্ঠীর ২০০০-এরও হাইপারটেননের রোগীর মৃত্যু হয়েছে করোনায়। তারপরই রয়েছেন ৭৫ ঊর্ধ্বরা। তারপর যথাক্রমে ৪৬-৬০ বয়স গোষ্ঠী, ৩১-৪৫ বয়স গোষ্ঠী তারও পরে রয়েছে ১৬ থেকে ৩১ বছর বয়সীরা। একইভাবে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, সিকেডি, সিওপিডি, ম্য়ালিগন্যান্সি - প্রায় প্রতিটি সহ অসুস্থতা থাকা মৃত করোনা রোগীর তালিকায় বেশি রয়েছে ৬১ থেকে ৭৫ বছর বয়সীদের নামই। এছাড়া, কোভিডে মৃতদের তালিকায় ডায়াবেটিস, সিকেডি এবং তালিকাভুক্ত রোগগুলির বাইরে থাকা কোমর্বিডিটির ক্ষেত্রে ৭৫ ঊর্ধ্বদের থেকেও বেশি নাম রয়েছে ৪৫ থেকে ৪৬-৬০ বছর বয়সীদের।

কাজেই, এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, কোমর্বিডিটি থাকলেই যে কোভিডে মৃত্যু হবে, এমনটা নয়। এর পিছনে বয়স, লিঙ্গ-সহ আরও বেশ কিছু বিষয় কাজ করে। কিন্তু, তাই বলে সাবধানতার মার নেই। প্রতিদিন যেখানে রাজ্যের দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে, সেখানে কোভিড-উপযুক্ত আচরণই কিন্তু মহামারির বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র।