সংক্ষিপ্ত


করোনা টিকা (COVID-19 Vaccine) গুরুতর অসুস্থতা ঠেকালেও, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে ব্যর্থ। আর, তার জন্যই পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন একটি চুইংগাম (Chewing Gum)।

করোনাভাইরাস মহামারি (Coronavirus Pandemic) আটকাতে চুইংগাম (Chewing Gum)! হ্যাঁ এমনই বিস্ময়কর কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Pennsylvania) বিজ্ঞানীরা। টিকার (COVID-19 Vaccine) সম্পূর্ণ ডোজ যারা পেয়েছেন, তারাও সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2) অর্থাৎ নভেল করোনাভইরাসে সংক্রামিত হতে পারেন। টিকার নেওয়ার ফলে তাদের অসুস্থতার মাত্রা অবশ্যই বেশ কম হবে। তবে, যারা টিকা পাননি, তাদের সমানই ভাইরাস লোড থাকতে পারে টিকাপ্রাপ্তদের দেহেও, এবং সেখান থেকে অন্যান্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে ভাইরাস। এটাই আটকে দেবে, তাদের উদ্ভিদ-জাত প্রোটিন দিয়ে তৈরি চুইংগাম, এমনটাই দাবি পেনসিলভেনিয়ার বিজ্ঞানীদের। 

গবেষক দলের প্রধান হেনরি ড্যানিয়েল জানিয়েছেন, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি মানুষের লালাগ্রন্থিতে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে। সংক্রামিত কেউ হাঁচলে, কাশলে বা কথা বললে, লালাগ্রন্থিতে থাকা ভাইরাস মুখ দিয়ে বেরিয়ে অন্যের শরীরে পৌঁছে যায়। কিন্তু, তাঁদের তৈরি চুইংগামটি মুখের ভিতরেই নভেল করোনাভাইরাসের 'ফাঁদ' হিসাবে কাজ করবে। এটি চিবোলে, আক্রান্ত ব্যক্তির লালারসে ভাইরাল লোডের পরিমাণ অনেক কমে যাবে, ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেকাংশে কমবে।  'মলিকুলার থেরাপি' (Molecular Therapy) জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে তারা বলেছেন, চুইংগামটির আঠা লালার মধ্যে ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এটাকে কোভিড-১৯ (COVID-19) সংক্রমণের উত্স কমানোর অন্যতম সহজ উপায় বলে, দাবি করা হয়েছে।

মহামারি আসার আগে, ড্যানিয়েলরা উচ্চ রক্তচাপের চিকিত্সার প্রসঙ্গে অ্যাঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২ (Angiotensin-converting Enzyme 2) বা এসিই২ (ACE2) প্রোটিন নিয়ে গবেষণা করছিলেন। কাকতালীয়ভাবে, মানব কোষে এই এসিই২ রিসেপ্টরেই সার্স-কোভ-২'এর স্পাইক প্রোটিন আটকে যায়। তারপরই ভাইরাস সেই কোষকে সংক্রামিত করে। এর আগে গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, করোনার গুরুতর সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, বাইরে থেকে এসিই২ প্রোটিনকে শরীরে প্রবেশ করালে ভাইরাল সংক্রমণের মাত্রা কমে। এসিই২ প্রোটিন নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি ড্যানিয়েল এবং তাঁর সহকর্মী হিউন কু দাঁতের গোড়ায় ব্যাকটেরিয়া জমা আটকাতে, উদ্ভিদ-জাত প্রোটিন মিশ্রিত একটি চুইংগাম তৈরির গবেষণার কাজও করছিলেন। ফলে, তাঁদের মাথায় আসে উদ্ভিদদেহে এসিই২ প্রোটিন তৈরি করে, তা তাদের চুইংগামের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার কথা। আর সেটা করেই সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা। 

দারুচিনি-স্বাদযুক্ত গাম ট্যাবলেটে উদ্ভিদ-জাত এসিই২ প্রোটিন যুক্ত করেছেন। কোভিড-১৯ রোগীদের লালার নমুনা নিয়ে, তার মধ্যে সেই চুইংগাম ফেলে দিয়ে তাঁরা দেখেছেন, দুইভাবে সেই গাম ভাইরাসকে কোষে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে। প্রথমত, কোষের এসিই২ রিসেপ্টরকে ব্লক করে। দ্বিতীয়ত, সরাসরি ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে (Spike Protein) এসিই২ প্রোটিন দিয়ে আবদ্ধ করে। এটাও দেখা যায়, লালারসে ভাইরাল আরএনএ-এর মাত্রা এতটাই কমে যাচ্ছে, যে তাকে আর প্রায় সনাক্ত করাই যাচ্ছে না। প্রাথমিক সাফল্য পাওয়ার পর, এখন এই গবেষণা দলটি সার্স-কোভ-২ সংক্রামিত রোগীদের সেই চুইংগাম দিয়ে, তা কতটা নিরাপদ এবং কার্যকর, সেই মূল্যায়ন করতে চাইছে। এর জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে, ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনা করার অনুমতি চেয়েছে তারা। যদি ক্লিনিকাল ট্রায়ালেও সাফল্য আসে, তাহলে এই চুইংগাম কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে মানব সভ্যতার লড়াইয়ের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে পারে।