সংক্ষিপ্ত
পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের বংশধরেরা কেউ আর গ্রামে থাকেন না। তবে বাড়ি ও মন্দির রয়েছে।
কালের নিয়মে মিলিয়ে গেছে জমিদার বংশ, তবু ঐতিহ্য বজায় রেখেই বাংলাদেশ (BanglaDesh) ঘেঁষা রাধাকান্তপুরের (Radhakantapur) জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোতে(Durga Puja) মাতেন এলাকার মানুষ। ১৩২৭ সালের এই পুজো হাজারো কাহিনীতে মোড়া। পুজোর ভার বয়ে চলা স্থানীয় মানুষের গলায় নবমীর বিষাদের সুর। সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম। ওপারে বাংলাদেশ। চারিদিক জুড়ে যেন নিঃস্তব্দ মোহময় পরিবেশ।
একসময়ের জমিদার বাড়ি বলে কথা। যদিও আজ কালের নিয়মে নেই জমিদারি প্রথা, সেইসঙ্গে বাড়ির সদস্যরাও। তবে গ্রামের মানুষেরাই উদ্যোগ নিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন মুর্শিদাবাদের রাধাকান্তপুরের ১৩২৭ সাল নাগাদ থেকে শুরু হওয়া শতাব্দী প্রাচীন সাবেকি দুর্গাপুজো।
পুজোর নবমীতে যেন সেই উৎসবে আরো কয়েকগুণ উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেল। কিন্তু নিয়মের কোনও পরিবর্তন হয়নি। প্রাচীন নিয়ম মেনেই এদিন দুর্গাপুজোর আয়োজন হয় রাধাকান্তপুরের দুর্গা কালীমন্দিরে। প্রথমে পুজো শুরু হয়েছিল খড়ের চালার মন্দিরে। পরবর্তীতে জমিদার পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের উদ্যোগে পাকা মন্দির নির্মাণ করা হয়। এখনও সেখানেই হয় পুজো। রয়েছে বহু অজানা নিয়ম-নীতির মেলবন্ধন।
ভাদ্র মাসে পুজোর কোনও কাজ যাবে না। সেই কারণে শ্রাবন মাসেই দুর্গাপ্রতিমার কাঠামোয় মাটির প্রলেপের কাজ করা হয়। বাকি কাজ হয় আশ্বিন মাসে। বর্তমান পুজোর অন্যতম
এক উদ্যোক্তা এদিন স্মৃতিমেদুর হয়ে তুলে ধরেন বেশ কিছু কাহিনী, আমরা ঐতিহ্য আর রীতিনীতির সঙ্গে কোনো রকম সমঝোতা করিনি। পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের বংশ ধরেরা কেউ এখানে থাকেন না। গ্রামবাসীরা এ দায়িত্ব নিয়ে আজও পূজা চালিয়ে আসছেন। নবমী এলেই আমাদের মনে একটা যেন বিষাদের সুর বাঁচতে শুরু করে। আর খুব একটা কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না"।
"
পাশাপাশি এই বৈচিত্র্যময় পূজা সম্পর্কে জানা যায়, বছর ৩৫-৪০ আগে একবার ঢাকি তার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে মায়ের পুজোয় ঢাক বাজাননি। পরের পুজো আসার আগেই তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়েন। অনেক চিকিৎসা সত্ত্বেও বিশেষ লাভ হচ্ছিল না। তখন দেবীদুর্গা তাকে স্বপ্নাদেশে জানিয়েছিলেন, পুজোয় ঢাক বাজাতে। তারপরই সে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। তবে সেই ঢাকি এখন আর নেই। কিন্তু তারপর থেকে তাঁর বংশধরেরাই ঢাক বাজাচ্ছেন রীতি মেনে এই জমিদার বাড়িতে।
এমনকি পুরোহিত ও প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। জানা গিয়েছে, পারিবারিক পুজো হিসেবে শুরু হলেও ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষেরা জড়িয়ে পড়েছিলেন পুজোর সঙ্গে। সেই সময় গ্রামের আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তি হরেন্দ্র নাথ সরকার, জমিদার পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের কাছে প্রস্তাব রেখেছিলেন পুজোর সঙ্গে গ্রামের মানুষকেও জড়িয়ে নিতে। জমিদার সে কথা মেনে নিয়েছিলেন।
তারপর থেকেই গ্রামের মানুষ নানা বিষয়ে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাসের বংশধরেরা কেউ আর গ্রামে থাকেন না। তবে বাড়ি ও মন্দির রয়েছে। পুজোর বর্তমান আরেক উদ্যোক্তা স্বপন বিশ্বাস বলেন, থিম বনাম এই ধরনের সাবেকি পুজো কোন তুলনাই হয়না।মুর্শিদাবাদের বুকে এই ধরনের শতাধিক প্রাচীন পুজো গুলি এক একটি মাইলফলক, ইতিহাসের প্রামাণ্য সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে আজও সমাজের বুকে"।