সংক্ষিপ্ত

রাতে আমার ঘুম কেড়েছিল ‘দোস্তজী’। সে দিন আমি ভোর রাত পর্যন্ত জেগেছিলাম, একাই। আমার ভাবনায় সে দিন শুধুই ‘দোস্তজী’।

তিনি ছবির নিবেদক। তিনি তো প্রশংসা করবেনই। ‘দোস্তজী’ ঘিরে আর কোনও বিশেষ অনুভূতি? রাধা স্টুডিয়োয় বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের পরে পরিচালক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়কে ‘ইন্ডাস্ট্রি’র বিশেষ কোনও বার্তা? ছবি দেখতে দেখতে তাঁরও চোখের কোন সিরসির করেছিল? প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রথম এশিয়ানেট নিউজ বাংলায় অকপট তাঁর অনুভূতি নিয়ে। মুখোমুখি প্রতিনিধি উপালি মুখোপাধ্যায়ের।

প্রশ্ন: এক বার নিজের মতো করে বাড়িতে বসে দেখা। সম্প্রতি আরও এক বার স্পেশ্যাল স্ক্রিনিংয়ে রাধা স্টুডিও-তে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মনে কতটা গভীর ছাপ ফেলল ‘দোস্তজী’?

প্রসেনজিৎ: আমি ছবিটা বড় পর্দায় পরে দেখেছি। প্রসূন চট্টোপাধ্যায় নানা জায়গা থেকে পুরস্কৃত হওয়ার পরে ছবিটি ব্যক্তিগত ভাবে পাঠিয়েছিল। দেখার জন্য বেশ কয়েক বার অনুরোধও জানিয়েছিলেন। এক দিন নিজের বাড়িতেই বসে দেখলাম। ছবিটা দেখে উঠে প্রথম মনে হল, এ রকম একটা ছবি বানাতে পারল? তার উপরে এক জন স্বাধীন পরিচালক প্রসূন! সে দিন রাতে আমার ঘুম কেড়েছিল ‘দোস্তজী’। সে দিন আমি ভোর রাত পর্যন্ত জেগেছিলাম, একাই। আমার ভাবনায় সে দিন শুধুই ‘দোস্তজী’। নানা দিক থেকে। যে কারণে যখন আবার রাধা স্টুডিয়োয় ছবিটা দেখা হল তার আগে মনে হয়েছিল, ও তো আমার দেখা ছবি। আর দেখব না। প্রচুর তারকা অতিথিরা সে দিন আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ছবিটা দেখতে এসেছিলেন। তাঁদের আপ্যায়ন জানিয়ে সামনে গিয়ে একটু বসলাম। হাতে প্রচুর কাজ। অনেক ফোন বাকি। দ্বিতীয় বারেও আমি উঠতে পারলাম না! টাইটেল কার্ড আসা পর্যন্ত আমি চেয়ারেই। এটাই ‘দোস্তজী’।

প্রশ্ন: অভিনয়, পরিচালকের ভাবনা অবশ্যই ভিন্ন স্বাদের। গ্রামের দৃশ্যপট দেখাতে দেখাতে ক্যামেরা কি ক্যানভাস?

প্রসেনজিৎ: সবার আগে অবশ্যই মন খুলে প্রসূনের প্রশংসা করব। অভিনয়ও অনবদ্য। দুটো বাচ্চা ছেলে মালয়েশিয়ার গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। চাট্টিখানি কথা? শুধু ওদের কথাই বা বলি কেন! প্রত্যেকে এই ছবিতে আন্তর্জাতিক মানের অভিনেতা। কাউকে দেখে মনে হয়নি ওঁরা অভিনয় করেছেন। তবে ক্যামেরা নিয়ে সত্যিই আলাদা করে বলতে বাধ্য করে এই ছবি। ‘দোস্তজী’তে ক্যামেরা যেন ক্যানভাস। বহু দিন পরে বিশ্বমানের ক্যামেরার কাজ। এটাই সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে তুহিন বিশ্বাসের প্রথম কাজ! মনেই হয় না। গ্রামের দৃশ্য অনেক ছবিতেই ভাল দেখা যায়। এই ছবিতে এটাও যেন অন্য রকম। কিন্তু সেই ঘুরেফিরে প্রসূনের পারদর্শিতা। ও যে ভাবে দেখেছে সে ভাবেই দর্শককেও দেখাতে চেয়েছে। ওর কথায় মান্যতা দিয়েছে তুহিন। 

 

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ‘হাওয়া’ যদি কলকাতায় ‘ঝড়’ বইয়ে দিতে পারে ‘দোস্তজী’ ওপার বাংলাকে বন্ধুত্বে বাঁধতে পারবে?

প্রসেনজিৎ: অবশ্যই হাওয়া ভাল ছবি। কলকাতা সব সময়েই গুণের কদর করে। ভাল জিনিসের মূল্য দেয়। তার পরেও আমার ধারণা, ‘দোস্তজী’ যে দিন বাংলাদেশে মুক্তি পাবে ঠিক ‘হাওয়া’র মতোই ঝড় তুলবে।  খুব-খুব-খুব ভাল লাগবে বাংলাদেশের মানুষদের। আসলে এই ছবিটা যে দেখবে তারই ভাল লাগবে।

প্রশ্ন: আপনার জীবনের এরকম কোনও ‘দোস্তজী’?

প্রসেনজিৎ: আছে তো! অবশ্যই আছে। আমার ছোটবেলার সব বন্ধুদের কথা এই ছবি নতুন করে মনে পড়িয়ে দিয়েছে। যাদের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজতাম। ফুটবল, ক্রিকেট খেলতাম, গলিতে যেতাম। শনি, রবিবার এলে ওদের জন্য খুব মনখারাপ করত। দিন দুটো যেন কাটতেই চাইত না। কবে সোমবার আসবে। ওদের সঙ্গে দেখা হবে, এই অপেক্ষায় কাটাতাম। ওরাই আমার ‘দোস্তজী’।

প্রশ্ন: নিবেদক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় পরিচালক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়কে কী বলবেন?

প্রসেনজিৎ: একটাই কথা বলব, তুমি যে ধরনের ছবি বানাতে চাও, যে ভাষায়, যে ভাবে গল্প আঁকতে চাও সে ভাবেই কোরো। বেশি সমঝোতা কোরো না। সবাইকেই কমবেশি সমঝোতা করতে হয়। আমায় নানা কারণে প্রচুর সমঝোতা করতে হয়েছে। সেই জায়গা থেকে বলব, ছবি বানাতে গিয়ে তুমি যেন আমার মতো এত সমঝোতা কোরো না! যে ভাবে শুরু করলে সেই ধারাটাই ধরে রাখার চেষ্টা কোরো।

আরও পড়ুন:

‘৩৫০-র উপর ছবি করেও গোল্ডেন শিখা পেলাম না!’, ‘দোস্তজি’ নিবেদন করে প্রসূনের পাশে প্রসেনজিৎ

প্রসেনজিতের পর অমিতাভ, ‘দোস্তজী’র ট্রেলার দেখে উচ্ছ্বসিত বলিউড 'শাহেনশা'

বিজয়া সম্মিলনীতে প্রসেনজিতের বাড়িতে ভিয়েন! উপহার ডালপুরী, ফিশফ্রাই, ‘দোস্তোজি’