সংক্ষিপ্ত

রোজ সকালে সরস্বতী (Goddess Saraswati) পূজো করে, তাঁর সামনে গান গাইতেন লতা মঙ্গেশকর। সুর-সম্রাজ্ঞীর প্রয়াণে তাঁর স্মৃতিচারণে বিভোর লতার জীবনীকার পল্লব মিত্র (Pallab Mitra)। 
 

সরস্বতীর পূজোর (Saraswati Puja) লগ্ন এখনও রয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে এখনও বিরাজমান দেবী। আর সেই সময়ই চলে গেলেন সারা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সারস্বত সাধনা করে যাওয়া লতা মঙ্গেশকর। আক্ষেপ ঝরে পড়ল সুর-সম্রাজ্ঞীর জীবনীকার পল্লব মিত্রের (Pallab Mitra) কন্ঠে। গত ৩৫ বছর ধরে, বাংলা এবং ইংরাজি মিলিয়ে অন্তত ৩৩টি পত্র-পত্রিকায় লতা মঙ্গেশকরকে নিয়ে বহু বিষয় নিয়ে  কভার স্টোরি লিখেছিলেন তিনি। যার সামগ্রিকভাবে রূপ পেয়েছে  লতা মঙ্গেশকর - কিছু স্মৃতি কিছু গান' গ্রন্থে। 

পল্লব মিত্র জানিয়েছেন, কিংবদন্তী গায়িকার মুম্বইয়ের দোতলার বিরাট ফ্ল্যাটে, একটি ৭ ফুট বাই ৬ ফুটের ঘরে ছিল। আর সেখানে ছিল দেবী সরস্বতীর একটি মৃণ্ময় মূর্তি। রোজ সকালে লতা মঙ্গেশকর দেবী সরস্বতীকে পুজো করে, সেই মূর্তির সামনে মেঝেতে একটি হারমোনিয়াম নিয়ে সঙ্গীত সাধনা করতে বসতেন। অসুস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত রোজ চলত দেবী সরস্বতীর সামনে এই সারস্বত সাধনা। আর আশ্চর্য সমাপতনে সেই সরস্বতী পূজোর মধ্য়েই বিদায় নিলেন তিনি। 

আরও পড়ুন -ৃ নিজের দেশে মহিলাদের গান নিষিদ্ধ, অথচ লতার ফ্যান ছিলেন এই নৃশংস স্বৈরচারী পাক জেনারেল

আরও পড়ুন - শুধু গানে গানে নয়, বাংলার সঙ্গে লতার যোগ ছিল মাছ, মিস্টি তাঁতের শাড়ি থেকে সাহিত্যেরও

আরও পড়ুন - 'অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ' - এবার জন্ম-মৃত্যুর সমাপতনে জড়িয়ে গেলেন লতা ও কবি প্রদীপ

লতা মঙ্গেশকরের, প্রথম পল্লব মিত্রকেই তাঁর জীবনের কাহিনী শুনিয়েছিলেন। কিন্তু, কীভাবে এই কিংবদন্তী গায়িকার সান্নিধ্যে এসেছিলেন তিনি? পল্লব মিত্র জানিয়েছেন, গানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বলতে, আর পাঁচজনের মতো তিনি গান শুনতে ভালবাসেন, তার বেশি কিছু নয়। তিনি গান লেখেনও না, সুরও করা বা গান গাওয়ার ক্ষমতাও তাঁর নেই। তা সত্ত্বেও ১৯৭১ সালে, লতার সঙ্গে তাঁর বড়ই অদ্ভূতভাবে পরিচয় হয়েছিল। 

এক বিজ্ঞাপন সংস্থার চাকরির সূত্রে সেই সময় বম্বে ছিলেন পল্লব মিত্র। সলিল চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। শনি-রবিবার করে তিনি সলিল চৌধুরীর ফ্ল্যাটে যেতেন। এরকমই একদিন সলিল চৌধুরী সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন, দেখেন সুরকার দারুণ ব্যস্তভাবে কোথাও যাচ্ছেন। পল্লব মিত্রকে তিনি বলেছিলেন তাঁর গাড়িতে উঠতে। পথে জানান, খারের একটি স্টুডিওতে যাচ্ছেন তিনি। লতা মঙ্গেসকরের একটি গানের রেকর্ডিং আছে। স্টুডিওতে ঢোকার সময়, সলিল চৌধুরী তাঁকে বলেছিলেন, রেকর্ডিং-এর সময় তিনি যেন কোনও কথা না বলেন। এর পরের কয়েক ঘন্টা পল্লব মিত্র বিস্মিত হয়ে দেখেছিলেন, অসাধারণ মগ্নতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দুই কিংবদত্নী শিল্পীর সঙ্গীত চর্চা। আর, সেটাই ছিল তাঁর সঙ্গে লতার ঘনিষ্ঠতার সূত্রপাত।

যোগাযোগটা রেখেছিলেন পল্লব। লতার মুখোমুখি বসে তাঁর জীবন কাহিনী শোনার সূযোগ হয়েছিল প্রায় বছর ১৫ পরে। ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসে, কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে  সলিল চৌধুরীর দুটি নাইট আয়োজিত হয়েছিল। সেই উপলক্ষ্যে তিনদিনের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। উঠেছিলেন গ্র্যান্ড হোটেলের এক্সিকিউটিভ স্যুটে, রুম নম্বর ছিল ৪০১। একেবারের তিন বোন ও এক ভাইকে নিয়ে সপরিবারে এসেছিলেন লতা। সলিল চৌধুরীই সুযোগ করে দিয়েছিলেন লতার মুখোমুখি বসার। তবে, লতার দিক থেকে শর্ত ছিল, কোনও ক্যামেরা বা টেপ রেকর্ডার আনা চলবে না। শুধু মুখোমুখি কথা,  আড্ডা হবে। সাইডব্যাগে শুধু একটি খাতা আর পেন নিয়ে গিয়েছিলেন পল্লব। দীর্ঘ ২ ঘন্টা লতাকে নানা প্রশ্নের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। পাতার পর পাতা তিনি নোট নিয়েছিলেন, সব মিলিয়ে ভরে গিয়েছিল ৭৭টি পাতা! শুনেছিলেন বহু অজানা কাহিনী। 
 
তাঁর সামনেই যে প্রথম স্মৃতি চারণ করছেন, তা আবার লতা মঙ্গেসকর তাঁকে নিজের লেটারহেডে লিখে দিয়েছিলেন। তলায় ছিল তাঁর সইও। স্বাক্ষরে বরাবর ইংরাজি এস অক্ষরটা বড় করে লিখতেন সুর-সম্রাজ্ঞী। জীবনীকার পল্লব মিত্র বলেছেন, তাঁর জীবন মানেই সঙ্গীত, তাই হয়তো এস অক্ষরটার উপর জোর দিতেন তিনি। সেই ৭৭ পাতার নোট, লেটার হেডে লতা মঙ্গেশকরের সাক্ষরিত চিঠি - এই সবই রয়ে গেল পল্লব মিত্রের কাছে। লতা মঙ্গেশকরের চলে যাওয়া, তাঁর অনুপস্থিতি কীভাবে মেনে নেবেন, তা এখনও বুঝে পাচ্ছেন না তিনি।