- Home
- Astrology
- Horoscope
- বাংলার ঘরে ঘরে আজ পূজিত হচ্ছেন মা মনসা, এই উৎসবের নেপথ্যে রয়েছে প্রচলিত এক কাহিনি
বাংলার ঘরে ঘরে আজ পূজিত হচ্ছেন মা মনসা, এই উৎসবের নেপথ্যে রয়েছে প্রচলিত এক কাহিনি
আজ বাঙালার ঘরে ঘরে শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজিত হচ্ছেন দেবী মনসা। অনেকেরই ধারনা, সাপের কামড় থেকে রক্ষা পেতেই আপামর বাঙালীর ঘরে ঘরে মাটির সরায় দুধ-কলা দিয়ে দেবী মনসাকে পুজো করা হয়। সারাদিন উপবাস থেকে পুজো শেষে শাগু-দুধ-কলা ইত্যাদি উপকরন দিয়ে মা মনসার পুজো সম্পন্ন করে তবে উপবাস ভাঙ্গেন মহিলারা। সমাজে এই পুজোর প্রচলিত হওয়ার জন্য রয়েছে প্রচলিত এক পুরান কাহিনি।
| Published : Aug 17 2020, 10:40 AM IST
- FB
- TW
- Linkdin
মনসামঙ্গল কাব্যধারার একটি কিংবদন্তি চরিত্র। তিনি ছিলেন প্রাচীন ভারতের চম্পক নগরের একজন ধনী ও ক্ষমতাশালী বণিক। বিপ্রদাস পিপলাই তাঁর মনসামঙ্গল কাব্যে উল্লেখ করেছেন যে, চাঁদ সদাগরের বাণিজ্যতরী সপ্তগ্রাম ও গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত ত্রিবেণী হয়ে সমুদ্রের পথে যাত্রা করত। চাঁদ সদাগরের উপাখ্যানের সঙ্গে সাপের দেবী মনসার পুজো প্রচারের কাহিনিটি জড়িত।
চাঁদ সদাগর ছিলেন শিবের ভক্ত। মনসা চাঁদের পুজো কামনা করলে শিবভক্ত চাঁদ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন। মনসা ছলনার আশ্রয় নিয়ে চাঁদের পুজো আদায় করার চেষ্টা করলে, চাঁদ শিবপ্রদত্ত 'মহাজ্ঞান' মন্ত্রবলে মনসার সব ছলনা ব্যর্থ করে দেন। চাঁদ মনসার পুজো করতে অস্বীকার করলে, দেবী মনসা ক্রোধবশত সর্পাঘাতে চাঁদের ছয় পুত্রের প্রাণনাশ করেন। পুত্রশোকে চাঁদ বাণিজ্যে যাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু শত দুঃখ কষ্টের মধ্যেও তিনি আবার বাণিজ্যে বের হন।
চম্পক নগরে ফিরে এসে চাঁদ কোনওক্রমে নিজের জীবন পুনরায় সাজিয়ে তুলতে সক্ষম হন। তাঁর লখিন্দর নামে একটি পুত্র হয়। এদিকে সয়াবেনের স্ত্রী একটি কন্যার জন্ম দেয়, তার নাম রাখা হয় বেহুলা। দুজনে একসঙ্গে বেড়ে ওঠেন। তাঁদের অভিভাবকেরা দুজনের বিবাহের কথা চিন্তা করেন।
কিন্তু কোষ্ঠী মিলিয়ে দেখা যায়, বিবাহ রাত্রেই বাসরঘরে সর্পাঘাতে লখিন্দরের মৃত্যুর কথা লেখা আছে। কিন্তু মনসার ভক্ত বেহুলা ও লখিন্দর ছিলেন রাজযোটক। তাই শেষ পর্যন্ত উভয়ের বিবাহ স্থির হয়। লখিন্দরের প্রাণরক্ষা করতে চাঁদ একটি লৌহ বাসর নির্মাণ করে দেন।
এত সুরক্ষা সত্ত্বেও মনসা ঠিক পথ বের করে একটি সাপ পাঠিয়ে লখিন্দরের প্রাণ নাশ করেন। সে যুগে প্রথা ছিল, সর্পদংশনে মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তিকে দাহ না করে কলার ভেলায় করে ভাসিয়ে দেওয়া হত। বেহুলা তাঁর মৃত স্বামীর সঙ্গ নেন। ছয় মাস ধরে বেহুলা ভেলায় ভাসতে থাকেন।
তিনি গ্রামের পর গ্রাম পেরিয়ে চলেন। লখিন্দরের মৃতদেহে পচন ধরে। গ্রামবাসীরা তাকে উন্মাদ মনে করেন। বেহুলা মনসার কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন। কিন্তু মনসা শুধু ভেলাটিকে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা ছাড়া কিছুই করেন না।
কলার ভেলা ভাসতে ভাসতে মনসার সহচরী নেতার ঘাটে এসে পড়ে। সেই ঘাটে কাপড় কাচত নেতা। বেহুলার প্রার্থনা শুনে নেতা ঠিক করেন যে তাঁকে নিয়ে যাবেন মনসার কাছে। নিজের অলৌকিক ক্ষমতাবলে তিনি বেহুলা ও মৃত লখিন্দরকে স্বর্গে উপস্থিত করেন। মনসা বেহুলাকে বলেন, "যদি তোমার শ্বশুরকে দিয়ে আমার পুজো করাতে পারো, তবে তুমি তোমার স্বামীর প্রাণ ফিরে পাবে।"
বেহুলা শুধু বলেন, "আমি করবই।" আর তাতেই তাঁর মৃত স্বামীর দেহে প্রাণ সঞ্চারিত হয়। তাঁর পচাগলা দেহের অস্থিমাংস পূর্বাবস্থায় ফিরে আসেন। বেহুলা তাঁর শাশুড়িকে সব ঘটনা বিবৃত করেন। তিনি চাঁদ সদাগরকে গিয়ে সব কথা জানান। চাঁদের পক্ষে আর না বলা সম্ভব হয় না।
প্রতি মাসের কৃষ্ণা একাদশী তিথিতে চাঁদ সদাগর মনসার পুজো করতে সম্মত হন। কিন্তু মনসা তাঁকে যে কষ্ট দিয়েছিলেন, তা তিনি সম্পূর্ণ ক্ষমা করতে পারেন না। তিনি বাম হাতে প্রতিমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে মনসাকে পুজো করতে থাকেন। মনসা অবশ্য তাতেই সন্তুষ্ট হন।
এর পর চাঁদ সদাগর ও তাঁর পরিবার সুখে শান্তিতে বাস করতে থাকে। চাঁদ-এর ছয় পুত্রকেও মনসা জীবন দান করেন। চাঁদ সদাগরের মতো ধনী ও প্রভাবশালী বণিক মনসার পুজো করায় মনসার পুজো বৃহত্তর জনসমাজে প্রচার লাভ করে। তাই আজকে বাঙালির ঘরে শ্রদ্ধায় পূজিত হচ্ছেন দেবী মনসা। পুজোকে ঘিরে মেতে উঠেছে বাড়ির মহিলারা সহ সকলে।