- Home
- Entertainment
- Bollywood
- কলকাতায় ট্রাভেল এজেন্সি থেকে থাইল্যান্ডে রেস্তোরাঁ, কখনও বা সোনার দোকান, পেটে দায়ে অক্কির সংগ্রাম
কলকাতায় ট্রাভেল এজেন্সি থেকে থাইল্যান্ডে রেস্তোরাঁ, কখনও বা সোনার দোকান, পেটে দায়ে অক্কির সংগ্রাম
বলিউডের খিলাড়ি অক্ষয় কুমার। তিন খানের পাশাপাশি এনার প্রভাবও কিছু কম নয়। বর্তমানে সলমন খানকে পিছনে ফেলে বি-টাউনের তৃতীয় ধনী অভিনেতা তিনি। কোনদিন অভিনয় না শিখেও দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন এই সুপারস্টার। কখনও রোম্যান্টিক হিরো, কখনও অ্যাকশান আবার কখনও কমেডি সব অবতারেই দর্শকদেরকে মাতিয়ে রেখেছেন তিনি। জীবনের দৌরে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেললেও, এখনও কলেজ বয়ের ভূমিকায় অনায়াসে হিট তিনি। তাঁর ফ্যান ফলোয়ারের লিস্টে আট থেকে আশি বাদ পড়েননি কেউই। ৩০ বছরের বলিউড সফরে একশোরও বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন। তবে বাংলাদেশের রেস্তোরাঁর কর্মচারী থেকে শুরু করে কলকাতার ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজ করা রাজিব হারিওম ভাটিয়ার বলিউডের অক্ষয় কুমার হয়ে ওঠার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। এক নজরে দেখে নিন ক্যারিয়ারের ফ্লপ তকমা কাটিয়ে হিট সুপারস্টার হয়ে উঠা অক্ষয়ের সফরনামা।
- FB
- TW
- Linkdin
অক্ষয়য়ের বাবা আর্মি থেকে রিটায়ার হবার পর মুম্বাইতে একটি অফিসে অ্যাকাউন্টেন্টের এর চাকরি নেন। সেই সময় অক্ষয় পাঞ্জাব থেকে পুরোপুরিভাবে মুম্বইতে শিফট হয়ে যান।
ছোটবেলা থেকেই অক্ষয়য়ের রেসলিং এর প্রতি খুবই আগ্রহ ছিল। এর পাশাপাশি সেই সময় থেকেই তাঁর মডেল বা নায়ক হবার স্বপ্ন। তবে তিনি কখনোই লেখাপড়ায় আগ্রহী ছিলেন না। স্কুলে পড়ার সময় তিনি একজন স্থানিয় মার্শালআর্ট টেনারের কাছে মার্শালআর্ট শিখেছিলেন।
স্কুলের পড়া শেষ করে কলেজে ভর্তি না হয়ে তিনি তাঁর বাবার কাছে মার্শালআর্ট শেখার জন্য থাইল্যান্ড যাবার ইছা প্রকাশ করেন। বাবার ইছা না থাকলেও ছেলের জেদের কাছে হার মেনে তিনি অক্ষয়কে থাইল্যান্ড পাঠিয়ে দেন। থাইল্যান্ডে অক্ষয় তাঁর থাকা খওয়ার খরচ মেটাতে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন।
থাইল্যান্ড থেকে ফিরে এসে তিনি কলকাতার একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কিছুদিন কাজ করেন। এর পর অক্ষয় বাংলাদেশের ঢাকায় একটি রেস্টুরেন্টে সেফের কাজ করেন। এখানেও কিছুদিন কাজ করার পর তিনি মুম্বই ফিরে আসেন। মুম্বাই ফিরে এসে অক্ষয় তাঁর বাবার পরিচিত একটি সোনার দোকানেও কিছুদিন কাজ করেন।
এর পর অক্ষয় তাঁর এলাকায় একটি মার্শালআর্ট সেন্টার খোলেন। সেই সময় ওই সেন্টারের এক স্টুডেন্টের বাবা অক্ষয়কে একটি ফার্নিচারের বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার সুযোগ দেন। সেই বিজ্ঞাপন থেকে অক্ষয় পাঁচ হাজার টাকা পান। যা তাঁর এক মাসের আয়ের সমান। তখন থেকেই অক্ষয় সিদ্ধান্ত নেন তিনি মডেলিং করবেন। অর্থাৎ তাঁর মার্শালআর্ট বন্ধ হয়ে যায়।
তবে সেই সময় হাজারো মডেলদের ভিড়ে অক্ষয়কে আর কোন কাজ দিতে পারেনি সেই স্টুডেন্টের বাবা। এর পর অক্ষয় তাঁর পোর্ট ফোলিও বানানোর জন্য নাম করা ফটোগ্রাফারের কাছে যান। তবে ওই নাম করা ফটোগ্রাফারকে দিয়ে পোর্ট ফলিও বানানোর মতো টাকা ছিল না অক্ষয়ের। তাই তিনি সেই ফটোগ্রাফারের সঙ্গে প্রায় দেড় বছর বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেন এবং তাঁর পর নিজের পোর্ট ফোলিও বানান।
সেই সময় জায়েত সেতের রেফারেন্সে অক্ষয় কয়েকটি পণ্যের বেনারের বিজ্ঞাপনে কাজ করার সুযোগ পান। ওই সময় বলিউডের একজন মেকআপ আর্টিস্টের সঙ্গে অক্ষয়ের খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই মেকআপ আর্টিস্ট অক্ষয়কে ১৯৮৭ সালের মহেস ভাটের আজ সিনেমাতে একটি ছোট রোল পায়িয়ে দেন। কিন্তু ১০ সেকেন্ডের ওই রোলে অক্ষয়ের চেহারা দেখা যায়নি।
এর পর থেকেই অক্ষয় বিভিন্ন সিনেমার জন্য অডিশন দিতে শুরু করেন। কিন্তু সেই সময় কেউ তাকে সিনেমাতে নেননি। এর পরবর্তী সময় ১৯৯১ সালে সেই ফটোগ্রাফার অক্ষয়ের জন্য একটি টিভি বিজ্ঞাপনের সুযোগ করে দেন। সেই বিজ্ঞাপনটির শুট হবার কথা ছিল বেঙ্গালুরুতে। তবে কোন কারণ বশত অক্ষয় সেই দিনের বিমান মিস করেন। যার ফলে তিনি ওই বিজ্ঞাপন থেকে বাদ পড়ে যান। ওই সময় তিনি মানসিক ভাবে খুবই ভেঙ্গে পরেন।
কথায় আছে যা হয় ভালোর জন্য হয়। সেই দিনই বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে ওই মেকআপ আর্টিস্টের কাছ থেকে জানতে পারেন ওই দিনই বিকালে একটি সিনেমার অডিশন রয়েছে। সেই অডিশনে পরিচালক প্রমোধ চক্রবর্তী অক্ষয়কে সিলেক্ট করে নেন। এবং ওই দিনই অক্ষয়কে ৫০০০ টাকা দিয়ে সিনেমার জন্য সাইন করিয়ে নেন।
এখানেই শেষ নয় ওই বছরেই আরও ২ জন পরিচালক অক্ষয়কে দেখে পছন্দ করে ফেলেন। সেই মতো অক্ষয় তাঁর কেরিয়ার শুরুর প্রথমেই একসঙ্গে তিনটি ছবিতে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। এর পর ১৯৯১ সালেই মুক্তি পায় তাঁর প্রথম সিনেমা সগাদ। সেই সময় তাঁর পারিশ্রমিক কম হওয়ায় তাকে নিয়ে অনেকেই কাজ করতে চাইছিলেন।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে অক্ষয় মোট ১০ টি সিনেমা করেন। যার মধ্যে ৯ টি সিনেমাই ফ্লপ হয়। শুধু ১৯৯২ সালের খিলাড়ি সিনেমাটি বক্স-অফিসে বাকি ছবিগুলির তুলনায় ভালো ব্যবসা করে। তবে সেই অর্থে হিট করেনি।
প্রায় সব কটি সিনেমা ফ্লপ হবার পরেও, পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে অক্ষয়ের ১১ টি সিনেমা রিলিজ করে। যা রেকর্ড তৈরি করে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই ছিল বাস্তব। এবারেও ওই ১১ টি সিনেমার মধ্যে ৯ টি সিনেমা ফ্লপ হয়। তবে ইয়ে দিললাগি এবং মোহরা হিট হয়। এর পরেও ফ্লপ তকমা ঘোচাতে পারেনি অক্ষয়। ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন। যার মধ্যে ৩ টি সিনেমা বাদে সব কটি সিনেমা ফ্লপ হয়।
এর পর রেজাল্ট কিছুটা ভালো হয়। ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে অক্ষয় ৩০ টি সিনেমা কয়রে, যার মধ্যে ২১ টি সিনেমা ফ্লপ হয়। এর পরই ২০১১ সালে তিনি ঠিক করেন অভিনয় ছেড়ে দিয়ে তিনি কানাডায় চলে যাবেন। যার জন্য অক্ষয় কানাডার নাগরিকত্বও নিয়েছিলেন।
তবে কথায় আছে আর্টিস্টদের ভালো কাজ করার খিদে কমে না। সেই কারনেই হয়তো অক্ষয় কানাডা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও সিনেমা করা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর ফল স্বরূপ ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তাঁর ১৬ টি সিনেমা আসে যার মধ্যে ১০ টি সিনেমা ফ্লপ করে।
তাও তিনি হাল ছাড়েননি। এর পর ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অক্ষয় ১৩ টি সিনেমা করেন। কি ভাবছেন কটা ফ্লপ হয়েছে? জানলে অবাক হবেন, ওই ১৩ টি সিনেমাই হিট হয়। এই ভাবেই অক্ষয় প্রমাণ করে দেন কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং নিষ্ঠা থাকলে, সফলতা একদিন না একদিন আসবেই।